পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী রাজ্যপাল হলেন ডঃ সি ভি আনন্দ বোস। কেরলের বাসিন্দা প্রক্তন এই আইএএস অফিসার বর্তমানে মেঘালয়ের উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছিলেন। বাংলার রাজ্যপাল করায় শুরুতেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তাঁর সঙ্গে কলকাতার সম্পর্ক যে প্রায় অর্ধশতাব্দী প্রাচীন সেকথাও বলতে ভোলননি।
রাজ্যপাল হয়েই প্রথম প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যপাল ডঃ সি ভি আনন্দ বোস বলেছেন, 'আমি খুবই আনন্দিত ও সম্মানিত। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। ভারতীয় সংবিধান রক্ষায় ও বাংলার কল্যাণের স্বার্থে কাজ করব। রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রাজ্যে আমিও সক্রিয় রাজ্যপাল হিসাবে রাজ্য যাতে মসৃণভাবে চলতে পারে সেইভাবেই কাজ করতে আগ্রহী।' পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক বোঝাতে গিয়ে রাজ্যপাল বলেছেন, 'বাংলার সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক। বিশেষ করে কলকাতার সঙ্গে। কর্মজীবনের শুরুতে আমি এসবিআইয়ের প্রবেশনারী অফিসার হিসাবে কলকাতায় কাটিয়েছি। বাংলা অল্প অল্প জানি। প্রতিদিন বাংলা শব্দ শেখার চেষ্টা করব।' কবিগুরুর লেখা ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির’ পংক্তিটিও বলেন।
'রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রাজ্যে আমিও সক্রিয় রাজ্যপাল হিসাবে কাজ করতে আগ্রহী।' রাজ্যপালের এই মন্তব্য নিয়েই নানা মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। কী কারণে তাঁর এই মন্তব্য সেই ব্যাখ্যা অবশ্য মেলেনি।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন জগদীপ ধনখড়। তারপর থেকে নাা ইস্যুতে নবান্নের সঙ্গে রাজভবনের তীক্ততা লেগেই থাকত। মমতা প্রশাসনের নানা সিদ্ধান্ত ও কাজের নিন্দায় মুখর ছিলেন প্রাক্তন রাজ্যপাল। তৃণমূলও ধনখড়কে বিজেপির প্রতিনিধি বলে দেগে দিয়েছিল। বেশ কয়েকবার রাজ্যপালকে কালো পতাকা দেখানো হয়, পথও আটকানো হয়েছিল। প্রায় রাজ্যপাল-তৃণমূল বা রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী টুইট যুদ্ধে সরগরম হয়ে উঠত বাংলা।
আরও পড়ুন- গেরুয়া শিবিরে ক্ষোভ জমতেই স্থায়ী রাজ্যপাল পেল বাংলা
কিন্তু, গত জুলাইতে এ রাজ্যের রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর রাজ্যপাল-নবান্ন সংঘাত ঘটেনি। উল্টে অস্থায়ী রাজ্যপাল লা গণেশনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালই ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজ্যপালের নিমন্ত্রণে চেন্নাইতে গণেশনের দাদার জন্মদিনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজভবন কয়েক মাস আগেও যেখানে বিরোধী দল বিজেপির ঘর-বাড়ি ছিল, ক্রমেই সেই ছবির বদল ঘটে।
গণেশন-মমতার এই সুস্পর্ক অবশ্য গেরুয়া শিবিরে উষ্মার কারণ হয়ে উঠেছিল। অখিল গিরি ইস্যুতে লা গণেশন শুভেন্দু অধিকারীদের সঙ্গে দেখা করেননি। তিনি সেদিন ইম্ফলে ছিলেন। রাজ্যপালের দেখা না পেয়ে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ জানিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। এর ঠিক চার দিনের মাথায় পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ী রাজ্যাপালের নাম ঘোষণা করল রাষ্ট্রপতিভবন।
তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের কথায়, 'সক্রিয় শব্দের নানা ব্যাখ্যা হতে পারে। তবে, এখনই আমাদের ওনাকে নিয়ে কিছি বলার নেই। কাজ না করলে উনি কেমন তা বোঝা যাবে না। আশা করবধনখড়ের মতো কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে রাজ্যপাল পদে উনি দায়িত্ব সামলাবেন না।'
বিজেরিপ সর্বভারতীয় সহসভাপতি বলেছেন, 'এ রাজ্যে শাসকের ত্রাসে গণতন্ত্র ধ্বংসের মুখে। সংবিধান যাতে রক্ষা পায় এই রাজ্যে সেটাই হয়তো উনি বলতে চেয়েছেন।' সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'বাংলায় গণতন্ত্র বাঁচুক, উনি তাঁর রক্ষক হবেন, সেটাই একমাত্র আশা।'