ন্যাশনাল মেডিক্যালে হয়রানি চরমে, কর্তৃপক্ষকেই দুষছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা

বারে বারে উঠে আসছে নানান অভিযোগ।

বারে বারে উঠে আসছে নানান অভিযোগ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, হেলথ নিউজ

কখনও হাসপাতাল ভবনে আগুন তো কখনও রোগীদের ওষুধ দেওয়ার সময়সীমায় লাগামটানা বিতর্কে সংবাদ শিরোনামে এসেছে কলকাতার অন্যতম ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। পরিকাঠামোর বেশ কিছু বদল আনা সত্ত্বেও অবস্থা যে একই তিমিরে তারই প্রমাণ মিল ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কোভিড পর্ব মিটতেই ওপিডির রোগীর চাপ সামাল দিতে নাজেহাল অবস্থা। একটু বেলা গড়াতেই ওপিডি’র সামনে লম্বা লাইন। রোগীদের অভিযোগ বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভিড়ের এই বিষয়টিকে কার্যত এড়িয়ে চলেছেন।

Advertisment

হাসপাতালের মূল গেটের বাঁদিকে ওপিডি টিকিট কাউন্টারে তখন উপচে পড়ছে রোগীর চাপ। রায়দিঘি থেকে সন্তোষ মুর্মু এসেছেন বৃদ্ধ বাবার চিকিৎসা করাতে। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে এর এগেও বেশ কয়েক বার বাবাকে নিয়ে আসতে হয়েছে হাসপাতালে। প্রায় ৩-৪ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ডাক্তার দেখানোর সুযোগ মেলে’। তার আরও অভিযোগ, “প্রেসক্রিপশনে যে সকল ওষুধ ডাক্তার বাবু লিখে দেন তার মধ্যে ২-১ টা ছাড়া বাকী সব ক’টাই হাসপাতালের ভিতর ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকেই নিতে হয়’। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে কেন মিলবে না প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ প্রশ্ন রোগীদের একটা বড় অংশের। পাশাপাশি কাউন্টার থেকে যে ওষুধ দেওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রে তা এক মাসের দেওয়া হয় না। কখনও সাতদিন কখনও ১০ অথবা ১৫ দিনের ওষুধ দেওয়া হয় এমনটাই জানালেন ওপিডিতে আগত রোগী-পরিজনরা।

হন্তদন্ত হয়ে মাকে নিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে টিকিট করাতে এসেছে শম্পা দাস। গতকাল রাত থেকে মায়ের নাক থেকে রক্ত পড়ছে টানা। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দিয়ে দাঁড়াতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন মা। অনেক ডাকাডাকির পর মিলল ট্রলি। রীতিমত কাকুতি-মিনতি করতে হয়। শম্পা দেবীকে অবশেষে 'দয়া' করেন হাসপাতালের এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী। মা’কে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় ইমার্জেন্সিতে। হাসপাতালে রোগী পরিজনরা অভিযোগ করেন, অনেক সময় জরুরি প্রয়োজনেও মেলে না ট্রলি। পাশাপাশি মরানাপন্ন রোগীদের চিকিৎসাভার সামলান হাসপাতালের জুনিয়ার ডাক্তাররা এমন অভিযোগ করেন রোগীরা।

একটু এগোতেই ডানদিকে বাথরুম। থিক থিক করছে রোগী ও পরিজনরা। তাদের অভিযোগ, বাথরুমের পরিবেশ এতটাই নোংরা যে তা ব্যবহারের অযোগ্য। গড়িয়া থেকে মাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন সীমাদেবী। মেরুদণ্ডের সমস্যায় বেশ কিছুদিন ধরেই কষ্ট পাচ্ছেন তিনি। সীমা দেবীর কথায়, ‘হাসপাতালে এমআরআইয়ের জন্য কখনও কখনও রোগীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এমন কী রিপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকদিন অপেক্ষার কথা জানান রোগী-পরিজনেরা। পাশাপাশি রাজা রামমোহন ব্লকে শিশু বিভাগে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভিযোগও করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসা রোগী ও তাদের পরিজনরা।

Advertisment

অন্যদিকে সপ্তাহে মাত্র তিন দিন হাসপাতালে অভিজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আউটডোরে বসায় ভিড় উপচে পড়েছে সেখানে। এঁকেবেঁকে চলেছে সর্পিল লাইন। রোগীদের প্রশ্ন এতবড় হাসপাতাল এত রোগীর চাপ সেখানে মাত্র তিন দিন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বসায় অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বজবজ থেকে হার্টের চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে আসা প্রবীণ এক রোগী অনিল রায় বলেন, ‘যেভাবে অল্প বয়সী থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষের মধ্যে হার্টের সমস্যা বাড়ছে তাতে মাত্র তিন দিন এই পরিষেবা যথেষ্ট নয় বলেই আমার মত। পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের কোনও অস্ত্রোপচারও এখন সেভাবে এই হাসপাতালে হয়না বলেই অভিযোগ তাঁর’।

আরও পড়ুন: < নজরে উত্তর-পূর্ব, অভিষেকের মেঘালয় সফরে ঘটতে পারে বড় চমক? >

রাতের বেলায় জিনিসপত্র উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন রোগীর পরিজনরা। তাঁরা জানান, “রাত্রে মোবাইল, মানি ব্যাগ একটু অসাবধান হলেই গায়েব”। কিন্তু পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে তো! উত্তরে তাঁরা জানান, “একবার চুরি হলে আর কিছুই করার নেই। ওই মাল আর ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়”। যদিও হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা বারে বারে জানাচ্ছেন রোগীর সঙ্গে থাকা মানিব্যাগ, দরকারি নথি সাবধানে রাখার ব্যাপারে হাসপাতালের তরফে বারে বারেই ঘোষণা করা হয়। নিজের জিনিসপত্র নিজেদেরও খেয়াল রাখতে হবে”।

রোগীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে, “স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে কোন গাফিলতি বরদাস্ত করা হয় না। হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় পরিষেবার বিনিময়ে টাকা চাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নম্বরে অভিযোগের কথাও বলা হয়েছে। সব ক্ষেত্রে প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। রোগীদের যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয় তার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বদা সচেতন”।

kolkata news govt hospital, outdoor facilities