কিছুদিন আগেই মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু তার মধ্যেই এমন অশান্তি শুরু হয়ে যাবে জানত না পরিবার। অশান্তি-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, ভয়ঙ্কর পরিবেশের মধ্যে বিয়ে হবে কীভাবে তা ভেবে পাচ্ছিলেন না ইদেন্নেসা মল্লিক। তখনই ত্রাতা হয়ে এগিয়ে এলেন হিন্দু পড়শিরা। নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে ঘটা করে মুসলিম মেয়ের বিয়ে দিলেন তাপস কোদালি, উত্তম দোলুইরা। অশান্ত উলুবেড়িয়ায় সম্প্রীতির অনন্য ছবি দেখল সব সম্প্রদায়ের মানুষ।
উলুবেড়িয়ার খলিসানির ইদেন্নেসা মল্লিকের মেয়ের বিয়ের জন্য পাশে এসে দাঁড়ান হিন্দু পড়শিরা। তাপস কোদালি, লক্ষ্মীকান্ত কয়াল এবং উত্তম দলুইরা এগিয়ে আসেন। প্রত্যেকেই স্থানীয় ক্লাবের সদস্য। রবিবার তাঁরা দাঁড়িয়ে থেকে ইদেন্নেসার মেজো মেয়ে পাকিজার বিয়ে দেন। নিমন্ত্রিতদের অভ্যর্থনা থেকে আপ্যায়ন, বরকে নিয়ে আসা, সুষ্ঠুভাবে বিয়ে সম্পন্ন করা এবং শেষে পাকিজাকে নির্বিঘ্নে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তাঁরা।
তিন যুবক নিজের কাঁধে সব দায়িত্ব তুলে নেন। তিন জন যেন ইদেন্নেসার জীবনে মসিহার মতো। আট বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছে তাঁর। তিন মেয়ে এবং ছেলে। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বাড়ির সামনে একটি সাইকেল গ্যারেজ চালান মহিলা। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মেজো মেয়ে পাকিজার বিয়ে ঠিক হয় বারুইপুরের শেখ মোকাব্বিরের সঙ্গে। বাড়িতেই বিয়ের আয়োজন রাখেন ইদেন্নেসা। কিন্তু কয়েকদিনে বদলে যায় এলাকার পরিস্থিতি।
আরও পড়ুন নূপুরের মন্তব্য বিতর্কের মাঝেই ‘বেফাঁস’ ত্বহা সিদ্দিকী, দায়ের FIR
বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার পয়গম্বরকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে বৃহস্পতিবার থেকে অবরোধ-অশান্তি শুরু হয় হাওড়ার দিকে দিকে। উলুবেড়িয়া, পাঁচলা, খলিসানি, ডোমজুড়, ধূলাগড়ের বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক হিংসা ছড়ায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এই অবস্থায় মেয়ের বিয়ে কী ভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান ইদেন্নেসা।
আরও পড়ুন ‘একটা-দুটো সমস্যা হয়েছে, কোনও মৃত্যু হয়নি’, দোষীদের কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি জাভেদ শামিমের
স্থানীয় তিন হিন্দু যুবক জানিয়েছেন, ছোট থেকে এই পাড়ায় বসবাস করেন তাঁরা। এখানে সবাই সবার জন্য। জাতি-ধর্ম-বর্ণের কোনও বিভেদ নেই। ক্লাবের সদস্য তাপস, লক্ষ্মীকান্ত, উত্তমরা পুলিশের কাছে অনুমতি নিয়ে বিয়ের আয়োজন করেন। পুলিশ তাঁদের জানায়, আপনারা ব্যবস্থা করুন। আমরা পাহারার বন্দোবস্ত করব। অবশেষে নির্বিঘ্নে মেয়ের বিয়ে হওয়ায় তিন যুবককে আশীর্বাদ করেছেন ইদেন্নেসা। বলেছেন, আল্লা যেন সবসময় তাঁদের রক্ষা করেন।