শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের পর তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে মিলেছে ৫০ কোটি নগদ সহ বহুমূল্যের সোনা, রূপো ও একাধিক জমির দলিল। এরপরই পার্থর মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেন মুখ্যমন্ত্রী। মহাসচিবকে দল থেকে অপসারিত করেছে তৃণমূল। তারপর শনিবার দলের প্রতি তাঁর অবস্থান নিয়ে মুখ খুললেন জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। যা জোড়া-ফুল নেত্রীর প্রতি একদা দলের সেকেন্ড-ইম-কমান্ডের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য বলেই মনে করা হচ্ছে।
কী বলেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়?
এ দিন জেলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এসএসকেএমে নিয়েও যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর শারীরিক পরীক্ষা হয়। ঘন্টাখানেক পর হাসপাতাল ছাড়ার সময় গাড়িতে বসেই সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। বলেন, "দলের সঙ্গেই আছি, দলের সঙ্গেই ছিলাম।"
পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার দিন তিনেক বাদ প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরপাড়ায় একটি অনুষ্ঠানে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছিলেন, অন্যায় করলে তাঁর পাশে দল থাকবে না। শাস্তি পেলেও কিছু বলবে না তৃণমূল। তবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। তুলোধনা করেছিলেন বিজেপিকে। তারপরই তড়িঘড়ি পার্থকে দল থেকে সাসপেন্ড করার দাবি তোলেন কুণাল ঘোষ, বিশ্বজিৎ দেবরা।
এরপরই পার্থর গ্রেফতারের পাঁচদিন পর তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। ওইদিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের সব পদ ও দলীয় মুখপাত্রের সম্পাদক পদ থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যয়ের অপসারণের ঘোষণা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তারপর থেকেই পার্থর ভূমিকা 'লজ্জাজনক' বলে সোচ্চার হন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিন পার্থর দাবির প্রেক্ষিতে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, 'উনি যদি আইনের কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেন তবে দল তাঁকে দলে ফেরানো নিয়ে নিশ্চই ভেবে দেখবে।'
পার্থর গ্রেফতারের দিন ২০-র মধ্যে গরু পাচার মামলায় সিবিআই অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু, বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির গ্রেফতারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৪ অগাস্ট বেহালার ম্যানটনে তিনি বলেছেন, 'কী করেছিল কেষ্ট যে ওকে গ্রেফতার করা হল? একজন কেষ্টকে ধরলে লাখ লাখ কেষ্ট তৈরি হবে।'অর্থাৎ তৃণমূল অনুব্রতর পাশে রয়েছে তা স্পষ্ট হয়। গ্রফতারের পর ১০ দিন কেটে গেলেও তাঁকে এখনও দলীয় পদ থেকে সরায়নি তৃণমূল।
দল যে একদা সেকেন্ড ইন কমান্ডের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে মরিয়া তা নেত্রীর মন্তব্য ও তৃণমূলের পদক্ষেপেই স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও জোড়-ফুলের প্রতি তাঁর আনুগত্য বোঝাতে তৎপর। যা আসলে নেত্রীর প্রতি তাঁর বার্তা বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
< আরও পড়ুন- ‘টাকা-ভর্তি’ ব্যাগ নিয়ে ভিনরাজ্যের হোটেলে পার্থ-ঘনিষ্ঠ? নয়া অভিযোগে তোলপাড় >