হেলমেট না পরে ভুল করেছিলেন অমিত মুখার্জি। এই একটা ভুল তাঁর প্রাণ নিয়ে নিল ঠিকই, কিন্তু উন্নতি আনল ছ'জনের জীবনে। একইসঙ্গে মরণোত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপনে নজির গড়ল রাজ্য। ২৫ তারিখ রাতেই জানা গিয়েছিল, অমিতের চারটি অঙ্গ প্রতিস্থাপন হবে চারজনের শরীরে। রাজ্যে একই হাসপাতালে প্রথমবার এক রাতেই করা হলো তিনটি অঙ্গ প্রতিস্থাপন - লিভার, হৃদযন্ত্র, এবং একটি কিডনি। ওই রাতেই গ্রিন করিডোর তৈরি করে আরেকটি কিডনি পৌছে যায় এসএসকেএম হাসপাতালে।তবে শুধু যে চারটি অঙ্গ তা নয়, দিন গড়াতেই জানা যায় যে অমিতের চোখের দুটি কর্নিয়া নিয়ে যাওয়া হয় দিশা আই ফাউন্ডেশনে। সেখানে একজনের চোখে সে দুটি প্রতিস্থাপন করা হয়।
বছর পঞ্চাশের ডোমজুড়ের বাসিন্দা অনিমা নস্করের শরীরে হৃদযন্ত্র বসানো হয়েছে। তাঁর হার্টের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছিল। এসএসকেএম-এ ভর্তি ৫৮ বছর বয়সী হলদিয়ার সন্তলাল যাদবের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। একইসঙ্গে বছর ৪৮ এর মনোজ কুমার হেলার পচন ধরা লিভার বাদ দিয়ে অ্যাপোলোতে তাঁর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় অমিতের লিভারের।
আরও পড়ুন: পিজি হাসপাতালে বিরল অঙ্গ প্রতিস্থাপন
এর আগে এমন নজির দেখা যায় নি। এবছরের মে মাসে ভিন রাজ্য থেকে এসেছিল হৃদযন্ত্র, তারপর তা নিয়ে যাওয়া হয় ফর্টিস হাসপাতালে। পিজি হাসপাতালেও বিরল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটে অগাস্ট মাসে। সূত্রের খবর, ওই দুবারই সফল হয়েছিল অস্ত্রোপচার। তবে এবারে আর ভিন রাজ্য থেকে নয়, অ্যাপোলোতেই ভর্তি ছিলেন অঙ্গদাতা। এই বিরল ঘটনার নজির গড়ল অ্যাপোলোর সঙ্গে রাজ্যও। এই প্রকান্ড কর্মকান্ডে হাল ধরেছিলেন ড: মহেশ কুমার গোয়েঙ্কা (গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি এবং লিভার ডিজিজ), ড: সুশান মুখোপাধ্যায় (হৃদ বিশেষজ্ঞ) এবং ড: মোহন চাঁদ শীল (রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট সার্জেন)।
পঞ্চমীর রাতে মোটর বাইকে চেপে বিনা হেলমেটে বন্ধুর সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন অমিত। উল্টোডাঙ্গার কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাইক। মাথায় গুরুতর চোট নিয়ে অমিতকে ভর্তি করা হয় অ্যাপোলো হাসপাতালে। যত দিন যায়, শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ২৫ অক্টোবর সকাল ছটায় ডাক্তাররা জানান, ব্রেন ডেথ হয়েছে অমিতের। তারপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অমিতের বাবাকে অনুরোধ করেন অঙ্গদানের ব্যাপারে, এবং তাতে সম্মতি দেন তিনি।