AC Machine: শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর এখন আর যেন বিলাসিতা নয়, বর্তমান সময়ে এটি অপরিহার্য্য হয়ে উঠেছে। এমনই মনে করে একাংশ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে না থাকলেই যেন হাঁসফাঁস অবস্থা হয় একাংশের মানুষের। তা না হলেই তীব্র গরমে খাওয়া-ঘুম মাথায় ওঠার জোগাড়। প্রবল দাবদাহের কালে দিনে দিনে বিক্রি বেড়েই চলেছে AC-র। ঘর ঠান্ডা করছে AC, অন্যদিকে প্রকৃতিও কিন্তু ভয়ঙ্কর বিরূপ হচ্ছে। ভূ-উষ্ণায়নের অন্য়তম কারণ এই এয়ার কন্ডিশনার মেশিন থেকে নির্গত নানা বিষাক্ত গ্যাস। এরই পাশাপাশি বৃক্ষনিধন প্রক্রিয়া জারি রয়েছে। ফ্ল্যাট ও শপিং মলের বাড়-বাড়ন্ত তো রয়েছেই। এতেই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
পারদ ক্রমশ চড়ছেই। IPL-এ রিঙ্কু সিংয়ের মতো ছক্কা মেরেই চলেছে গরম। এদিকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দেখা নেই, জলীয় বাস্প অনুপস্থিত, আবহাওয়া শুষ্ক, এককথায় গরমে কাহিল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির বাসিন্দারা। আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কলকাতার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। Lockdown-এর দু'বছরেও প্রকৃতি এত বিরূপ ছিল না। এবার একেবারে ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। কেন এই হাল? ভূ-উষ্ণায়নের জন্য মূলত দায়ী কী?
পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, 'আমরা প্রত্যেকেই বুঝতে পারছি কি পরিমাণ তাপমাত্রার পরিবর্তন এসেছে। এবারের গরমটা একেবারে আলাদা। কলকাতায় গরমে ভীষণভাবে জলীয় বাস্প থাকে, সেটা এবার একেবারে অনুপস্থিত। কিছুটা হলেও দায়ী ভূ-উষ্ণয়ন। পশ্চিমী ঝঞ্ঝাগুলি একেবারে কমে গিয়েছে। বঙ্গোপসাগরে উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয় তা-ও এবার অনুপস্থিত। দক্ষিণবঙ্গে এই নিম্নচাপ বলয় অত্যন্ত দুর্বল। সেই কারণে জলীয় বাস্প একেবারে কমে যাচ্ছে। সেটা সকলেই অনুধাবন করতে পারছি।' কলকাতায় ১০ বছর আগেও কার্বন ডাইঅক্সাইড ছিল ১৬৪ পিপিএম, এখন সেটা ৩৪৫ পিপিএম।'
পরিবেশ বিজ্ঞানীর আরও বক্তব্য, 'এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে চলেছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা গড়ে ০.৬ ডিগ্রি বৃদ্ধিতেই আশঙ্কা করা হচ্ছে হিমবাহ গলে যাওয়া, জলস্ফীতি বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝা বেড়ে যাওয়া। যে রেটে পৃথীবীর তাপমাত্রা বাড়ছে যদি সেভাবে ১.৪-২.৫ ডিগ্রি বেড়ে যেতে পারে আগামী ২০৫০ মধ্যে। তাহলে পৃথিবীর অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।"
আরও পড়ুন- চাঁদিফাটা গরম তুঙ্গে তুলবে অস্বস্তি! আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তায় ঘুম ওড়ার জোগাড়!
বৃষ্টির দেখা নেই। অতিরিক্ত গরমের কারণে সরকারি স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি (Summer Vacation) পড়ে গিয়েছে। আগামী দিনে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আতঙ্কিত পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বায়ুমন্ডলে ভীষন ভাবে বেড়ে গিয়েছে। আগে আমরা একটা এসি কিনতাম। এখন চারটে করে এসি। প্রতি ঘরে এসি। অফিসে অফিসে এসি। গাড়িতে এসি। কার্বনডাই অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, নাইট্রাস অক্সাইড ভীষণভাবে বাতাসের সঙ্গে মিশছে। এই গ্রিন হাউস গ্যাস ভূউষ্ণায়নের অন্যতম বড়় কারণ। ইলেকট্রিক আরও ভয়ঙ্কর।"
তিনি আরও বলেন, "কলকাতার ক্ষেত্রে শিল্পায়ন কোনও কারণ নয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধিও বড়় কারণ। আমাদের গ্রিন হাউস গ্যাস অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বাতাসে মিশছে।' প্রকৃতি বদলে যাওয়ার জন্য মানুষের একাধিক কর্মকান্ডই দায়ী বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাছাড়া বেশ কিছু বিষয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা অত্যন্ত জরুরি বলে তাঁরা মনে করেন।
তবে এর থেকে নিষ্কৃতী মিলবে কীভাবে? স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর কথায়, 'সবুজের সংখ্যা বাড়াতে হবে। টাওয়ার, শপিং মল, প্রযুক্তিগত উন্নতি, মেটালিক ব্যবহার করছি। সবুজের সংখ্যা সেই অনুপাতে না বাড়াতে পারলে কোনও নিস্তার নেই। ফ্ল্যাট হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে। কংক্রিটে মুড়ে ফেলছি। মাটি বলে কোনও ব্যাপার থাকছে না। উষ্ণায়নের নিয়ন্ত্রণ করতে সবুজই বিকল্প। সিএনজি গাড়ি সে পরিমাণে নেই। সোলারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। ইথালন ব্লেন্ডেড গাড়ি চালাতে হবে।'