ভরা বর্ষাকালে বাজারে হাহাকার। কোথায় ইলিশ? কোথায় বাঙালির প্রাণের আরাম, আত্মার শান্তি? ইলিশ-বিহীন এই মরশুমের খলনায়ক আবহাওয়া। প্রত্যেক বছর অন্যান্য মাছের সঙ্গেই ইলিশের ঝাঁক উঠে আসে। এবছরের ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলাদেশের জলসীমার কাছাকাছি চলে গিয়েও ইলিশ না পেয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে মৎস্যজীবীদের। লোকসানের ভয়ে ইতিমধ্যেই দিশেহারা তাঁরা। তাই এবছর ভোজনরসিক বাঙালির পাতে আদৌ ইলিশ মাছ পড়বে কিনা, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এদিকে বিগত বছর দুয়েক ধরে পদ্মার ইলিশের স্বাদ থেকেও বঞ্চিত রাজ্যের মানুষ। এবারও বাজারে আসেনি বাংলাদেশের রূপোলী শস্য।
মৌসুমী বায়ুর প্রকোপে উত্তর ভাসলেও দক্ষিণবঙ্গের কপালে জুটছে না ছিটেফোঁটা বৃষ্টিও। যার জেরেই মূলত ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করছেন মৎস্যজীবীরা। বাজারে যে চড়া দামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তা গতবছরের সংরক্ষিত ইলিশ বলেই দাবি করছেন কাকদ্বীপের জেলেরা। এদিকে বরফে জমিয়ে রাখা ইলিশ কলকাতার বাজারে বারোশো, চোদ্দশো টাকা কেজিতে বিকোচ্ছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
সামুদ্রিক ডায়মন্ড হারবারের সহ-মৎস্য অধিকর্তা জয়ন্তকুমার প্রধান বলেন, "বেশ কিছুদিন ইলিশ তুলতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। তারপর আবহাওয়া দফতর থেকে লাল সতর্কতা জারি করায় সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া যায়নি। রবিবার মাছ ধরতে বেশ কিছু ট্রলার মাঝসমুদ্রে রওনা দিয়েছে। এক সপ্তাহ পর তারা ফিরে এলে বোঝা যাবে ইলিশের বাজার কেমন। মাছ তোলার পর সাধারণত নিলাম হয়, সেখান থেকেই আন্দাজ করা যায় ইলিশের দাম।"
আরও পড়ুন: মাঝসমুদ্রের ঝড়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে তলিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন, জানালেন প্রত্যক্ষদর্শী
মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা বিজন মাইতি জানান, "১৫ জুন থেকে শুরু হয়েছে মাছ ধরা। মাত্র ১৫ দিন অর্থাৎ জুন মাসটাই মাছ ধরতে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় ইলিশ পাওয়া যায়নি। লোকসান মাথায় নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। ১ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত আবহাওয়া খারাপ থাকার জন্য সমুদ্রে যাওয়া নিষেধ ছিল। কারণ এই সময় উত্তাল ছিল সমুদ্র। এখন যদিও নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়েছে, বর্তমানে সমুদ্রের যা পরিস্থিতি, তাতে কতটা মাছ পাওয়া যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "প্রত্যেক বছর এই সময় ভরা মরশুম থাকে। লাখ লাখ টাকার মাছ তোলা হয়। কিন্তু ২০১৯ সালে প্রথম এমনটা ঘটল। এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কোনোদিন হইনি। এরপর মাছ যদি ওঠে তাহলে প্রথম দফায় দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে, কিন্তু অনেক মাছ উঠলে হয়ত দাম কমতে পারে।"
উল্লেখ্য, পদ্মার ইলিশের জন্য আক্ষেপ করে সময় নষ্ট নয়। গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় আশ্বাস দেন, ইলিশ উৎপাদনে রাজ্য শুধু স্বাবলম্বীই হবে না, বিশ্বের অন্যত্র ইলিশ সরবারহও করবে অচিরেই। মমতা বলেন, "ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ইলিশ আমদানি করার প্রয়োজন পড়বে না। এবার ইলিশ উৎপাদনে রাজ্য স্বাবলম্বী হবে। শুধু তাই নয়, বিদেশেও এখানে উৎপাদিত ইলিশ সরবরাহ করা হবে।"