পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বৈঠকে অধিকাংশ বক্তা পয়লা বৈশাখের দিন পালন করার মতামত দিয়েছেন। একমাত্র পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি রাখি পূর্ণিমার দিনের কথা বলেছেন। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করার আদৌ কি কোনও প্রয়োজন আছে? পশ্চিমবঙ্গ দিবস কেন পয়লা বৈশাখ বা রাখি পূর্ণিমার দিন হবে? এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঐতিহাসিক স্মৃতিকুমার সরকার। এই নিয়ে নতুন ভাবে সমস্যা তৈরি করার কোনও মানে হয় না বলে, তিনি মনে করছেন।
২০ জুন রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালিত হয়েছে। ওই অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। তা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাক্তন উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস মানে কী? পশ্চিমবঙ্গ দিবস বলে যদি আলাদা একটা দিনকে চিহ্নিত করতে হয়, তাহলে তার তো একটা ইতিহাসের সম্বন্ধ প্রয়োজন। সেই ইতিহাসের সম্বন্ধের দিক দেখতে গেলে অবশ্যই দেশভাগের বিতর্ক উঠে আসে। কেন না পশ্চিমবঙ্গ, এই ভাবনা তো ছিল না। এক্ষেত্রে রাখি পূর্ণিমা বা পয়লা বৈশাখের আলোচনা তো অবান্তর। মূলত, এই দিবসের সঙ্গে এই দিনগুলো আসেই না, কোনও সম্পর্কই নেই।'
কেন পয়লা বৈশাখ বা রাখি পূর্ণিমার কথা এক্ষেত্রে আসা উচিত নয়, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অধ্যাপক স্মৃতিকুমার সরকার। তিনি বলেন, 'এই দিবসের কথা আসতে হলে দেশভাগের কথা আসবেই। যখন বাংলাদেশের বা বঙ্গের পূর্ব দিকটা ভাগ হল, তখনই তো পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব এল। তখনই তো পশ্চিমবঙ্গ শব্দ বন্ধনটা এল। এই শব্দবন্ধনের সঙ্গে ইতিহাসের ঘটনার নিরিখে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নাম অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত। তাঁকে বাদ দিয়ে তো পশ্চিমবঙ্গের ভাবনা আসে না। যেমন পঞ্জাব ও পূর্ব পাঞ্জাব যেমন এখানেও ঠিক তেমনই। যেহেতু আমরা পশ্চিম পাঞ্জাব বা পূর্ব পাঞ্জাব বলি না। ভারতবর্ষের পঞ্জাব। সেটাও একটা ইতিহাসের বিস্মৃতি ঘটানো। পঞ্জাব তো সম্পূর্ণ হচ্ছে না। ঠিক তেমনই পশ্চিমবঙ্গ শব্দবন্ধন রাখারও ঐতিহাসিক যুক্তি রয়েছে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দেশ ভাগের স্মৃতিকে বহন করার জন্য।'
পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে নবান্নের বৈঠকে হাজির ছিলেন পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, কবি সুবোধ সরকার, অধ্যাপক সুগত বসু, লেখক আবুল বাসার-সহ অনেকেই। কিন্তু এই দিবস পালনের প্রয়োজন আছে বলেই মনে করেন না বিশিষ্ট ঐতিহাসিক। অধ্যাপক স্মৃতিকুমার সরকার বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ দিবসের কোনও প্রয়োজন আমি অন্তত দেখি না। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের সামনে এত সমস্ত বিভিন্ন বিষয় রয়েছে যা প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত, তা ছেড়ে নিতান্তই যদি পশ্চিমবঙ্গ দিবস করতে চান, তাহলে দেশ ভাগের স্মৃতিকে উসকে দেওয়া হয়। ইতিহাসের সম্মতি অনুসারে ২০ জুন তারিখটাকেই ভাবতে হয়। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ করতে হয়। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ দিবসের অন্য কোনও ঐতিহাসিক তাৎপর্য হয় না।' আর সেই কারণেই, পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের উদ্যোগকে নতুন সমস্যা হিসেবেই দেখছেন স্মৃতিকুমার সরকার।