নানা অলৌকিক কাহিনী কথিত রয়েছে সাধক কমলাকান্তের জীবনী ঘিরে। শাক্তপদাবলী সাহিত্যের অন্যতম শেষ্ঠ কবি কমলাকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন রাজা তেজ চাঁদ ও প্রতাপ চাঁদের সভাকবি। ২০০ বছর আগে বর্ধমান শহরের বোরহাটে বর্ধমানরাজ প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরের পরিচিতি কমলাকান্তের কালী নামেই।
১৭৭০-এ অম্বিকা কালনায় জন্মগ্রহণ করলেও অল্প বয়সেই পিতৃহারা হন কমলাকান্ত। তাঁর শৈশব কেটেছে গলসির চান্না গ্রামে মাতুলালয়ে। সেখানে পঞ্চমুন্ডির আসনে সাধনা করেছেন কমলাকান্ত। তাঁর সাধনা-ভজনা ও পান্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে ১৮০৫ সালে বর্ধমানের রাজাধিরাজপতি তেজ চাঁদ কমলাকন্তকে সভাকবি নিযুক্ত করেন। উপযুক্ত শিক্ষালাভের জন্য প্রতাপ চাঁদের দায়িত্বভার বর্তায় কমলাকান্তের ওপর।
বিশিষ্ট গবেষক ও ইতিহাসবিদ সর্বজিত যশ বলেন, 'সাধক কমলাকান্তের নামে নানান অলৌকিক কাহিনী জনপ্রবাদে পরিণত হয়েছে।' বেশ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন তিনি। সর্বজিত যশ বলেন, 'রাজা তেজ চাঁদ মনে করেছিলেন ছেলে প্রতাপ চাঁদ কমলাকান্তের কাছে থেকে মদ্যপান করতেন। একদিন যখন কমলাকান্ত ও প্রতাপচাঁদ একসঙ্গে ছিলেন তখন সেখানে রাজা চলে যান। হাতে-নাতে ধরবেন, এটাই ভেবেছিলেন রাজা। রাজা গিয়ে বলেন, আমার ছেলেকে মদ খাওয়া শেখাচ্ছ। তখন কমলাকান্ত রাজাকে বলেন, কোথায় মদ খাওয়াচ্ছি। কমন্ডল খুলে রাজার হাতে তুলে দেন সাধক। তখন রাজা দেখতে পান কমন্ডলে মদ নেই দুধ রয়েছে। ভক্তরা বলতেন, মদটাকে দুধ করে দিয়েছিলেন সাধক। এমনই শক্তি তাঁর ছিল।'
এমন নানা কাহিনী প্রাচীন শহর বর্ধমানের আনাচে-কানাচে কান পাতলেই শোনা যায়। সর্বজিতবাবু বলেন, 'রাজা তেজ চাঁদ প্রথম দিকে কমলাকান্তকে বড় সাধক হিসাবে মানতে চাননি। তখন তেজ চাঁদ বলেছিলেন, এমন কিছু করে দেখাতে হবে যেন কমলাকান্তের ওপর বিশ্বাস আসে। তখন কমলাকান্ত রাজাকে বলেছিলেন, আমাকে কী করতে হবে। রাজা তখন তাঁকে বলেছিলেন অমাবস্যার রাতে চাঁদ দেখাতে হবে। তখন অমাবস্যার রাতে রাজা তেজ চাঁদকে চাঁদ দেখিয়েছিলেন কমলাকান্ত। এই ঘটনার পর ছেলে প্রতাপ চাঁদের সঙ্গে তেজ চাঁদও কমলাকান্তের ভক্ত হয়ে যান।' বিশিষ্ট এই গবেষকের কথায়, 'একবার ওরগ্রামের ডাঙ্গায় বিশে ডাকাত কমলাকান্তকে ধরেছিলেন। কিন্তু কালীসাধকের অলৌকিক শক্তি অনুভব করেছিলেন বিশে ডাকাত। উল্টে বিশে ডাকাত তাঁর ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- দুর্গাপুজোর ভিড় দেখে বিরক্ত হাইকোর্ট! কালী-জগদ্ধাত্রী পুজোতেও মণ্ডপ নো-এন্ট্রি
বর্ধমানের বোরহাটে তেজ চাঁদের তৈরি মন্দিরে পঞ্চমুন্ডির আসনে বসেও সাধনা করতেন কমলাকান্ত। তার পাশেই রয়েছে মায়ের মূর্তি। মাত্র ৫০ বছর বয়সে কমলাকান্ত প্রয়াত হন। তবে ২০১৫ সাল থেকে মাটির প্রতিমার পরিবর্তে কষ্টিপাথরের কালীর মূর্তির পুজো হয়ে আসছে। এখন ঘট বিষর্জন দেওয়া হয়। ভক্ত সঞ্জয় ঘোষ বলেন, 'এবারে পুজো ২১৩ বর্ষে পদার্পণ করেছে। করোনা আবহে এবছর বার্ষিক কালীপুজোতে অন্নকুটের মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে না। বলিদানও হবে না। তবে প্রথা মেনে ভোগে মাগুর মাছ থাকবে।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন