পথ দুর্ঘটনায় ট্রাক চালকদের নয়া আইন নিয়ে এরাজ্যেও বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ আছড়ে পড়ছে। কেন্দ্রীয় আইন প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার কলকাতার বন্দর এলাকার তেল সংস্থার ট্যাঙ্কার ও অন্য লরি চালকরা স্টিয়ার ছাড়ো আন্দোলনে নেমে পড়ে। এর আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়, ডানকুনি, বীরভূমে বিক্ষোভ করেছে ট্রাক চালকরা। দেশের অন্যন্য অংশের সঙ্গে এরাজ্যেও ট্রাক ছেড়ে চালকরা কেন্দ্রীয় নয়া ন্যায় সংহিতার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। এই আন্দোলন এরাজ্যে গতি পেলে পন্য পরিবহণ ব্যাপক সমস্যায় পড়তে পারে। এদিকে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিষ চক্রবর্তী নতুন আইনের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তবে গাড়ি চলাচল বনধেরও বিরোধিতা করছেন মন্ত্রী।
এরাজ্যেও ট্রাক বা লরির স্টিয়ারিং ছেড়ে রাস্তায় বিক্ষোভ বাড়তে থাকলে নানা সমস্যা দেখা দেবে। কেন্দ্রীয় আইনের বিরোধিতা করছে ট্রাক মালিকরা। আর চালকরা যেহেতু গাড়ি বন্ধ রাখছে সেক্ষেত্রে এই আন্দোলনে কার্যত সামিল হয়ে পড়ছে ট্রাক মালিকরাও। ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকারের কালা আইনের বিরুদ্ধে সমস্ত চালকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। ডালকুনি, নারায়ণগড়, বীরভূম, খিদিরপুরে বিক্ষোভ হয়েছে। আমাদের গাড়ির চালকরা গাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসে। আগামী ২৭ জানুয়ারি রানি রাসমনি রোডে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। পরিবহণ পরিষেবা নিয়ে আগামী দিনে আমাদেরও ভাবতে হবে। রাজ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭ লক্ষ ২৬ হাজার গাড়ি রয়েছে। এরকম চললে পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।'
আরও পড়ুন- ‘হিট অ্যান্ড রান’ আইনের প্রতিবাদে দেশজুড়ে ট্রাক চালকদের ধর্মঘট, কী এমন আছে এই আইনে?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিষ চক্রবর্তী বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকার আইন সংশোধন করে সংসদে বিরোধী সাংসদদের বহিষ্কার করে ফাঁকা সংসদে ন্যায় সংহিতা বিল পাশ করেছে। এই আইনের তীব্র প্রতিবাদ জানানোর মূল কারণ, এর ফলে পুলিশি রাজ কায়েম হবে। এফআইআর হলে সর্বোচ্চ ১৪ দিন হেফাজতে থাকতো, এখন সেটা ৯০ দিন হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের হাতে ক্ষমতা নেওয়া হচ্ছে বিনাবিচারে। পথ দুর্ঘটনা কমানোর জন্য নানা পদ্ধতি আছে। কিন্তু ট্রাক ড্রাইভারদের যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সংস্থান রাখা হয়েছে তার সঙ্গে আমরা একমত নই। এই আইনকে মানি না।'
রাস্তা আটকে এর প্রতিবাদ করা উচিত নয়, বলেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন পরিবহণমন্ত্রী। স্নেহাশিষ চক্রবর্তী বলেন, ’এতে সাধারণ মানুষ হয়রান হয়। আমার আবেদন, '২৪-এ ইভিএম মেশিনে মোদী সরকারের পতন ঘটাতে হবে।' মন্ত্রীর মতে, 'নয়া আইনে আছে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল, ৭ লক্ষ টাকা জরিমানা। দুর্ঘটনার পর চালক সেই এলাকা ছেড়়ে দেয় জনরোষের হাত থেকে বাঁচার জন্য। এমন আইন থাকলে কেউ আর ট্রাক চালক হতে চাইবে না।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৪ নম্বর ধারা মোতাবেক, কোনও চালকের গাফিলতির জন্য মৃত্যু ঘটলে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ‘হিট অ্যান্ড রান’ আইনে বলা হয়েছে। এই আইনের ধারা অনুযায়ী, কারও গাফিলতিতে যদি কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হয়, এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। সেইসঙ্গে জরিমানাও করা যেতে পারে। আর যদি ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর, চালক সেখান থেকে পালায় বা পুলিশ কিংবা প্রশাসনের আধিকারিককে ঘটনার পরই খবর না দেয়, তাহলে শাস্তির পরিমাণ আরও বাড়বে। সেই ক্ষেত্রে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা হতে পারে। পুরোনো আইনে বা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪-এর ‘ক’ ধারায় বর্তমানে ‘হিট অ্যান্ড রান’ সংক্রান্ত বিষয় ও শাস্তির কথা বলা ছিল। সেই অনুযায়ী, একই অপরাধে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানার বিধান ছিল।