সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় গোপন করে নাবালিকার সঙ্গে ভাব জমানোর 'সাজা'। সমকামী তরুণীকে খুঁটিতে বেঁধে বেধড়ক মার। শেষমেশ পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে আহত তরুণীকে। পুরাতন মালদহের বিমল দাস কলোনির এই ঘটনার চর্চা তুঙ্গে।
এ যেন এক হিন্দি সিনেমার গল্প। প্রথমে ফেসবুকে নাবালিকার সঙ্গে ছেলে সেজে ভাব জমান এক তরুণী। তাঁর প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দেন পুরাতন মালদহের সাহাপুর পঞ্চায়েতের বিমল দাস কলোনির এক মাধ্যমিক পড়ুয়া। বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁদের মধ্যে কথোপকথন চলছিল। অবশেষে দু'জনেই একদিন দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে ফেলেন।
তবে দু'জনের দেখা হওয়াতেই যাবতীয় বিপত্তির সূত্রপাত। নাবালিকা বুঝে যায়, যে পরিচয় গোপন করে আসলে তার সঙ্গে ভাব জমিয়েছেন এক তরুণী। এতদিন ছেলে ভেবেই তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল সে। সম্ভবত সমকামী মানসিকতার জন্যই ওই তরুণী এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। নাবালিকার সঙ্গে দেখা করতে পুরাতন মালদহের বিমল দাস কলোনিতে এসেছিলেন ওই তরুণী।
ঘটনা জানাজানি হতেই আশেপাশের লোকজন এসে ওই তরুণীকে ধরে একটি খুঁটিতে বেঁধে ফেলেন। তারপরেই চলে অকথ্য অত্যাচার। তরুণীকে নারী পাচারকারী সন্দেহে মারধর করতে শুরু করেন স্থানীয়দের কয়েকজন। এলাকারই একটি দোকানের সামনের খুঁটিতে বেঁধে অনেকেই চড়, থাপ্পড় কষাতে থাকেন তরুণীকে। পরে এই ঘটনার কথা জানতে পেরে এলাকায় পৌঁছোয় পুরাতন মালদহ থানার পুলিশ। নাবালিকার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই তরুণীকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
আরও পড়ুন- শিয়ালদহ-সেক্টর ফাইভ মেট্রোর উদ্বোধনে তুঙ্গে তরজা, মমতার নামই নেই আমন্ত্রণপত্রে
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর বাড়ি ইংরেজবাজারের অমৃতি পঞ্চায়েতের বটতলী এলাকায়। সমকামী মানসিকতা থেকেই ফেসবুকের মাধ্যমে সাহাপুরের ওই নাবালিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর। তবে ফেসবুকে ছেলে পরিচয় দিয়েই সাহাপুরের নাবালিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক শুরু করেন তরুণী।
এদিকে, ওই নাবালিকার পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে তাঁদের প্রকৃত বাড়ি হবিবপুর থানা এলাকায়। কিছুদিন আগেই ওই মেয়েটি সাহাপুর পঞ্চায়েতের বিমল দাস কলোনিতে মামা বাড়িতে ঘুরতে এসেছিল। এরই সুযোগে ওই 'সমকামী' তরুণীও মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে সেখানে পৌঁছোয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকার লোকজন ধরে ফেলে। প্রথমে নারী পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মারধর শুরু হয়। তবে আসল ঘটনা সামনে আসতেই অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন- আবারও শিরোনামে আনিস-মৃত্যু, চার্জশিটে ‘চাঞ্চল্যকর’ তথ্য সিটের
পুরাতন মালদহ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা সাহাপুরেপ বাসিন্দা সুশান্ত কুণ্ডু বলেন, ''প্রথমে মেয়েটিকে চোর সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন স্থানীয়রা। তারপরে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। ওই মেয়েটি সমকামী। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এলাকারই অপর একটি মেয়ের সঙ্গে ছেলে পরিচয় দিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই বিষয়টি নিয়েই অনেকের মনে ক্ষোভ তৈরি হয়। তবে ওঁকে কেউ মারধর করেনি। পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।''
অন্যদিকে পুরাতন মালদহ থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণী নিজের নাম এবং পরিচয় সঠিকভাবে জানাচ্ছেন না। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে সমকামিতার মনোভাব থেকেই ওই তরুণী একটি মেয়ের সঙ্গে ছেলে পরিচয় দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল।