Triveni Sangam Kumbha Mela 2025: বঙ্গীয় ত্রিবেণী কুম্ভস্নান মহোৎসব। পরিচালনায় বঙ্গীয় ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালন সমিতি। গত ৪ বছর ধরে হুগলির ত্রিবেণীতে এই উৎসব চলছে। যদিও জনশ্রুতি প্রায় সাতশো বছর আগে হুগলির ত্রিবেনীতে গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর সঙ্গমে কুম্ভ হত। গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তি শেষে ফেরার পথে সাধু সন্ন্যাসীরা পায়ে হেঁটে ত্রিবেণী সঙ্গমে মিলিত হতেন মাঘী পূর্ণিমায়। সেখানে একদিনের কুম্ভ হত, যাকে অনুকুম্ভ বলা হয়। বছর চারেক ধরে এক ধর্মীয় সংস্থার হাত ধরে সেই রীতি শুরু হয়েছে আবার।
চলতি বছর ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি এই কুম্ভস্নান মেলা চলবে। আর এই কুম্ভ মেলাকে ঘিরে চলছে ধর্মীয় উচ্ছ্বাস। হাজার হাজার পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে হুগলির ত্রিবেণীতে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর সাধুসন্ত, প্রচুর নাগা সন্ন্যাসীরাও জড়ো হয়েছে। গোটা শরীরে ভষ্ম মাখা, কপালে সেই ছাই এর টিপ দিয়ে ভক্তদের আশীর্বাদ দিচ্ছেন নাগা সাধুরা। কাশ্মীর থেকে আসা বুলেট বাবা, কেদারনাথের টুপি বাবা, অসমের কিন্নর আখড়ার সোনালী নন্দগিরি, ত্রিবেণী কুম্ভের পুণ্যার্থীদের আকর্ষণ এইসব নাগা সাধুরা। এর মধ্যে সবচেয়ে নজর কেড়েছেন বুলেট বাবা।
২০০৯ সালে ভক্তের দেওয়া মোটর সাইকেলটা নিজের মত করে সাজিয়েছিলেন। ত্যাগের প্রতীক গেরুয়া রঙে মুড়ে সনাতনী তীর্থস্থান ভ্রমণই ছিল মূল উদ্দেশ্য। সেই গাড়ি নিয়েই প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ থেকে ত্রিবেণীর 'মিনিকুম্ভে' হাজির বছর পঞ্চান্নোর জমাতিয়া মোহন্ত ছোটুগিরি নাগাবাবা। তাঁকে ঘিরেই ত্রিবেণীর পুণ্যভূমিতে চড়ছে পারদ। কৌতূহলী জনতার নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চলেছেন ওই নাগা সন্ন্যাসী 'বুলেট বাবা'। জটায় সোনার আংটি। গায়ে সামান্য গেরুয়া বসন।
গুজরাটের নম্বরের ওই বাইকে লাগানো অতিরিক্ত আলো ও ডিকি (বক্স)। সামনে ও পাশের বক্সগুলিতে হিন্দিতে লেখা, 'আবাহন আখাড়া, জমাতিয়া মোহন্ত'। পরিত্যক্ত উদ্বাস্তু শিবিরে (সেখানে নাগা সাধুরা থাকছেন) ওই বাইকই এখন অনেকের কাছে মূল আকর্ষণ। তিনি বলেন, "প্রথম বার ত্রিবেণীতে এলাম। যে স্থানেই যাই মানুষ ঘিরে ধরেন। ভালই লাগে।" দীর্ঘ প্রায় ৮০০ কিমি পথ মোটর সাইকেলে চড়ে আসা প্রসঙ্গে ছোটুগিরি জানান, মাতাজীকে পিছনে বসিয়ে ছোটাতেন বাইক। রাতে চালাতেন না। সূর্য ডোবার লগ্নে কোনও মঠ বা আশ্রম দেখে বিশ্রাম নিতেন। সে ভাবেই চারদিনে ত্রিবেণীতে এসে পৌঁছেছেন। আপাতত এই বাবাই ত্রিবেণী কুম্ভের সেলিব্রিটি বলা যেতেই পারে।
লক্ষ্মী ভাণ্ডারে ২৬,৭০০ কোটির বিপুল বরাদ্দ, ২৬-এর আগে বিরাট চমকে নিজের হাতেই বল রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী
পবিত্র মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এদিন ত্রিবেণীর কুম্ভমেলায় স্নান সারেন দলীয় অনুগামীদের সঙ্গে। স্নান সেরে সুকান্ত জানান, ৯ তারিখে প্রয়াগরাজে পবিত্র শাহী স্নান করে সেখানকার জল নিয়ে এসেছিলাম। আজ সেই জল এই গঙ্গায় মিশিয়ে দিলাম। সারা দেশকে এক রাখার প্রয়াস। পাশাপাশি এই রাজ্যের কুম্ভস্নান কে ঘিরে তাঁর তাৎপর্যপূর্ন মন্তব্য, আজ যা দেখলাম তাতে এটা বলা যেতে পারে যে বাংলার সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ ঘটছে।
সুকান্ত মজুমদারের আসার ঘন্টা খানেক আগে ওই কুম্ভমেলাতেই আসেন হুগলি সাংসদ রচনা বন্দোপাধ্যায়। স্থানীয় বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত এবং পুরসভার চেয়ারম্যান আদিত্য নিয়োগী কে সঙ্গে নিয়ে মেলা ও পবিত্র ঘাট ঘুরে ঘুরে দেখে উচ্ছাস প্রকাশ করেন তিনি। গঙ্গায় কিছুটা নেমে মাথায় জল দিতেও দেখা যায় তাঁকে। রচনার কথায়, আমার সৌভাগ্য যে আমি সাংসদ হওয়ার পর মহাকুম্ভ হল, আমি তার অংশীদার হলাম। এখানেও তাই। প্রয়াগ রাজে তুলনাহীন ব্যবস্থাপনা ছিল এখানেও দারুন ব্যবস্থা। প্রশাসন সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিয়েছে। পানীয় জল, বায়ো টয়লেট, পর্যাপ্ত আলো, যথেষ্ট সংখ্যক। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ সুন্দর। তবে ঘাটগুলির আরও সংস্কার দরকার। এরজন্য কেন্দ্রকেও এগিয়ে আসতে হবে।