State Budget Highlights: বুধবার পেশ হল রাজ্য বাজেট। রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য ৪ শতাংশ ডিএ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী। আগামী এপ্রিল মাস থেকে কার্যকর হবে সেই বর্ধিত ডিএ। পাশাপাশি এদিনের বাজেটে রাজ্যে ৬টি ইকোনমিক ফ্রেইট করিডর তৈরির উল্লেখ রয়েছে। যা আন্তঃরাজ্য পণ্য পরিবহণে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে উল্লেখ মখ্যমন্ত্রীর।
রাজ্য বাজেটে সরকারি কর্মীদের চার শতাংশ DA বাড়ানোর প্রস্তাব পেশ হয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে নতুন হারে DA কার্যকর করা হবে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা এর আগে ১৪ শতাংশ ডিএ পেতেন। এখন সেই ডিএ বেড়ে ১৮ শতাংশ হল। গত বছরের বাজেটেও সরকারি কর্মীদের চার শতাংশ ডিএ বাড়ানোর ঘোষণা করেছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ভট্টাচার্য। এবারের বাজেটেও ফের চার শতাংশ ডিএ বাড়ানো হলো। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা এই মুহূর্তে ৫৩ শতাংশ ডিএ পান।
কেন্দ্রের সঙ্গে এখনও রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ-র ফারাক ৩৫ শতাংশ। কেন্দ্র প্রতি বছর দু'বার করে DA দিয়ে থাকে। এবার এখনও এক দফায় ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা বাকি রয়েছে। ফলে সেই ঘোষণা হয়ে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ-র ফারাক আরও বেড়ে যাবে। ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা ছাড়াও আরও একাধিক প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব পেশ এবারের বাজেটে।
এবারের বাজেটে 'নদীবন্ধন' প্রকল্পে বরাদ্দ করা হচ্ছে ২০০ কোটি টাকা। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। আগামী ২ বছরে সেই প্ল্যান শেষ হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। বাংলার বাড়ি প্রকল্পে অতিরিক্ত ১৬ লক্ষ উপভোক্তার জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ। ‘পথশ্রী’ প্রকল্পে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন চালিয়ে যাবে রাজ্য। আগামী অর্থ বছরে আরও ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল এই প্রকল্পে। গ্রামোন্নয়নে ও পঞ্চায়েতে ৪৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবারের বাজেটে। পথশ্রী প্রকল্পে গ্রামীণ রাস্তার জন্য বরাদ্দ ১৫০০কোটি। বিদ্যালয় শিক্ষায় ৪১ হাজার কোটি টাকা। স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ২১ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। ৭০ হাজার আশা কর্মীকে স্মার্টফোনের ঘোষণা। পাশাপাশি ৩৫০টি সুফল বাংলার স্টল। ধান কেনার জন্য নতুন কেন্দ্র ২০০ কোটি। তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পে ৫২ লক্ষ স্মার্টফোনের ঘোষণা।
যদিও এবারের বাজেটকে 'বেকার বিরোধী বাজেট',বলে উল্লেখ করে বাজেট অধিবেশন ওয়াক আউট করে মমতাকে তুলোধনা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিনের বাজেটের কড়া সমালোচনা করে বিরোধী দলনেতা বলেন, "সরকার দেউলিয়া তা ছত্রে ছত্রে প্রমাণিত। তৃণমূল সরকারের ১৫ তম শেষ বাজেট। ২ কোটি ১৫ লক্ষ বেকারদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে রাজ্য সরকার। এই বাজেট উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল, সুন্দরবন বিরোধী বাজেট। এই বাজেট কৃষক বিরোধী"। তিনি আরও বলেন, "স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নতুন কোন পরিকল্পনা নেই। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে জমি অধিগ্রহণ হয়নি। ফলে তা খাতায় কলমে থেকে যাবে। ৬ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা থেকে কীভাবে বেরোবে রাজ্য তার কোন উল্লেখ নেই। বিধায়কের এলাকা উন্নয়নে কোন অর্থ বৃদ্ধির প্রস্তাব নেই। মহিলাদের জন্য একটি শব্দও নেই এই বাজেটে। লক্ষ্মী ভান্ডারে বরাদ্দ বৃদ্ধির কোন প্রস্তাব নেই। সরকারি কর্মীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে রাজ্য। ২০২৬ সালে বিজেপি তার পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবে"।
২৬-এর ভোটের আগে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ রাজ্যের। এদিনের বাজেটে বাজেট পেশের পর এদিন সংবাদ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, "আমরা যেটা বলি, আমাদের যা ফান্ড পারমিট করে সেই অনুযায়ী আমরা প্রতিশ্রুতি দিই এবং তা পূরণ করি। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। গ্রামীণ বাড়ি প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। মোট ২৮ লক্ষ পরিবারকে গ্রামীণ বাড়ি প্রকল্পের আওতায় সুবিধার উল্লেখ করেছে এবারের বাজেটে। আমাদের রাজস্ব থেকে আমরা বাজেটে বরাদ্দ করি। মোট ৯৪ টি স্কিম চলে। বাজেটে কোন স্কিমকে বঞ্চিত করা হয়নি। সীমিত সাধ্যের মধ্যে ২৮ লক্ষ পরিবারকে বাংলার বাড়ি। অন্য রাজ্য লক্ষ্মী ভাণ্ডার প্রকল্প নকল করছে"।
বাজেট শেষে ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বাংলার বাড়ি প্রকল্পে কাউকে বঞ্চিত করতে চাইনা। মার্চের মধ্যে ৪৫ লক্ষ ঐক্যশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। ভোট এলে এক রকম কথা বলে কেন্দ্র, আমরা তা করি না। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫০০ কোটি। বাংলার বাড়ি প্রকল্পে অতিরিক্ত ১৬ লক্ষ পরিবারের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে"।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "কর্মসংস্থানে রাজ্য সরকার বিশেষ জোর দিয়েছে এবারের বাজেটে। বাজ্যে তৈরি হবে রাজ্যে তৈরি হচ্ছে ৬টি ইকোনমিক ফ্রেইট করিডর। যা আন্তঃরাজ্য পণ্য পরিবহণে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে যা বাংলার অর্থনীতিতে জোয়ার আনবে"। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন ২৬,৭০০ কোটি টাকা লক্ষ্মী ভাণ্ডারের জন্য রাখা হয়েছে।