Advertisment

ie বাংলার খবরের জের, বেঙ্গালুরুতে বন্দি বাঙালি দম্পতির মুক্তির আশা বাড়ল

বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে বেঙ্গালুরুর জেলে বন্দি পশ্চিমবঙ্গের এক শ্রমিক দম্পতি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Hopes for the release of the Jamalpur couple detained in Bengaluru jail rose

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে আটক দম্পতির বাড়ি। ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্য়ায়।

বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে বেঙ্গালুরুর জেলে বন্দি পশ্চিমবঙ্গের এক শ্রমিক দম্পতি। একরত্তি শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়েই জেলজীবন দম্পতির। সম্পূর্ণ নিরাপরাধ ওই পরিবারটি মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুণছে। শেষমেশ রাজ্য প্রশাসন ও একাধিক সামাজিক সংগঠনের সাঁড়াশি চাপে তৎপর হয়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।

Advertisment

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের ওই পরিবারটির বেঙ্গালুরুর জেলে আটকে থাকার খবর প্রথম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাই সামনে এনেছিল। তারপরেই তোলপাড় পড়ে যায় রাজ্য প্রশাসনিক মহলে। সূদূর কর্নাটকের জেলে আটক পলাশ অধিকারী, তাঁর স্ত্রী শুক্লা ও তাঁদের শিশুপুত্রের পরিচয়-ঠিকানা যাচাই করে দেখতে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে এল বেঙ্গালুরু পুলিশ।

প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়েই বেঙ্গালুরুর জেলে দিন কাটাচ্ছেন অসহায় দম্পতি পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী। এই ঘটনা সংক্রান্ত খবর গত ২৪ অক্টোবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাই প্রথম সামনে এনেছিল। তারপরেই তোলপাড় পড়ে যায় রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে। বিভিন্ন সংগঠনও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। এরই জেরে টনক নড়ে বেঙ্গালুরুর ভারথুর থানার পুলিশেরও। তাঁরা এখন পশ্চিমবঙ্গে এসে বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে ঘুরে নথি সংগ্রহ করে নিশ্চিত হতে চাইছেন বেঙ্গালুরুর জেলে বন্দি থাকা দম্পতি আদৌ কি বাংলাদেশী! নাকি তাঁরা প্রকৃতই ভারতীয় নাগরিক। বেঙ্গালুরু পুলিশের এই তৎপরতায় অবশেষে স্বস্তির শ্বাস ফেলছে পলাশের পরিবার।

পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের তেলে গ্রামের বাসিন্দা। সেখানে রয়েছে তাঁদের টিনের চালার দু’কুঠুরির ভাঙাচোরা বাড়ি। ওই বাড়ি দেখলে যে কেউ বুঝে যাবেন দারিদ্র্যতাই অধিকারী পরিবারের নিত্যদিনের সঙ্গী। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুই তাঁদের সম্বল। পলাশের বিবাহিত বোন শম্পা হালদার ও তেলে গ্রামের বাসিন্দা পিন্টু হাওলাদাররা জানান, বেঙ্গালুরুতে ভালো রোজগারের আশাতেই গিয়েছিলেন পলাশ ও তাঁর স্ত্রী। শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়েই ওঁরা বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন। চলতি বছরের জুনের শেষের দিকে ওঁরা বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিল। কাজের খোঁজে পলাশের বাবা পঙ্কজ অধিকারী এবং মা সবিতাদেবীও বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন- কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থে কয়েক’শ কোটির দুর্নীতি, সরাসরি যুক্ত বাংলার মন্ত্রী, বিস্ফোরক শুভেন্দু

সেখানকার মারাথাহাল্লি (Marathahalli) মহকুমার ভারথুর(varthur) থানার সুলিবেলে(sulibela) গ্রামের কায়েন খাঁনের বাড়িতে তাঁরা ওঠেন। সেখানে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মজুরিরর শর্তে তাঁরা কায়েন খাঁনের অধীনে কাজ করা শুরু করেন। তাঁদের কাজ ছিল হোটেল, রেঁস্তোরা, সিনেমা হল সহ বিভিন্ন জয়গা থেকে সংগৃহীত বর্জ্যবস্তু,বোতল ,প্লাস্টিক সরঞ্জাম এই সব বাছাই করা।

পিন্টু হাওলাদার বলেন, “সেখানে সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। হঠাৎ করেই গত ২৭ জুলাই ভারথুর (varthur) থানার পুলিশ কায়েন খাঁনের ডেরায় হানা দেয়। সেখানে যাঁরা যাঁরা বাংলাভাষী ছিলেন তাঁরা সবাই নাকি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী। এই বলে ভারথুর থানার পুলিশ তাঁদের ও আরও পাঁচ জনকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে যায়। ওই সময়ে পলাশ, তাঁর স্ত্রী, বাবা-মা ও সবাই ভারথুর থানার পুলিশকে জানান তাঁরা কেউই বাংলাদেশী নন। তাঁরা নিজেদেরকে ভারতীয় বলে জানিয়ে আধার কার্ড,প্যান কার্ড,ভোটার কার্ডও দেখান।''

ওই ব্যক্তি আরও জানিয়েছেন, সেই সব দেখে সেখানকার ভারথুর থানার পুলিশ পলাশের বৃদ্ধ বাবা, মাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু পলাশ এবং তাঁর স্ত্রী ও শিশু পুত্র-সহ সাত জনকে আটকে রাখে। তাঁদের বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বলে ভারথুর থানার পুলিশ গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়। সেই থেকে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়েই বেঙ্গালুরুর জেলে চোখের জল ফেলেই দিন কাটাচ্ছে

পলাশ ও তাঁর স্ত্রী শুক্লা। এদিকে, ছেলে-বউমা ও আদরের নাতিকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য পলাশের বাবা ও মা বেঙ্গালুরুতে থেকে নানাভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা না হওয়ায় তাঁরাও যথেষ্ট হতাশ হয়ে পড়েছেন। পলাশের ভগ্নিপতি সুজন হালদার জানান

, পলাশ এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে যাতে জেল থেকে মুক্ত করা যায়, তার জন্য তিনিও বেঙ্গালুরুতে থেকে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পলাশদের খবর প্রকাশ হতেই বেঙ্গালুরুর ভারথুর থানার পুলিশ নড়ে চড়ে বসেছে। সম্প্রতি ভারথুর থানার পুলিশের একটি দল পূর্ব বর্ধমানে পৌঁছেছে। জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, “ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার খবর দেখে প্রথম জানতে পারি আমার ব্লকের তেলে গ্রামের বাসিন্দা এক দম্পতিকে ফরেনার্স এ্যাক্টে গ্রেফতার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা সেখানকার জলে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে বন্দি হয়ে রয়েছে।'' বিডিও জানান, এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হওয়ার পরেই বেঙ্গালুরুর ভারথানার পুলিশ নড়ে চড়ে বসেছে । তিন চারদিন আগে বেঙ্গালুরুর ভারথুর থানার তিন পুলিশ আধিকারিক তদন্তের স্বার্থে তাঁর কাছে এসেছিল। পলাশ অধিকারী ও তাঁর স্ত্রী প্রকৃতই ভারতীয় নাগরিক কিনা এবং ভোটার ও আধার কার্ডটি সঠিক কিনা সেইসব বিষয়ে বেঙ্গালুরু পুলিশ তাঁর কাছে জানতেও চায়। এছাড়াও পলাশদের পারিবারিক পরিচিতি, কতদিন তাঁরা তেলে গ্রামে বসবাস করছেন সেটাও জেনে নেন ভিনরাজ্যের সরকারি ওই আধিকারিকরা।

বিডিও বলেন, ''জৌগ্রামের তেলে গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা পলাশদের ব্যাপারে জামালপুর থানার পুলিশও রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে।'' বিডিও

শুভঙ্কর মজুমদার আরও জানান, ভারথুর থানার তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা শুধু জামালপুরের বিডিও অফিস ও থানায় তথ্য যাচাই করে ফিরে গিয়েছেন, এমনটা নয়। বেশ কয়েকদিন ধরে ওই পুলিশ আধিকারিক দল জামালপুরের দলিল রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি দফতরের অফিস, জৌগ্রাম পঞ্চায়েত এমনকী বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমা শাসকের অফিসেও তথ্য যাচাইয়ের জন্য গিয়েছিল।

পলাশের বোন শম্পা হালদার বলেন, ''বেঙ্গালুরু পুলিশের দল আমাদের তেলে গ্রামের বাড়িতে এসেছিল। বাড়ি ঘর ঘুরে দেখার পাশাপাশি ওই পুলিশ দল আমার দাদা, বউদি ও ভাইপোর ভারতীয় নাগরিকত্বের সব নথিও যাচাই করেছে। পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গেও কথা বলেছে।''

police bengaluru East Burdwan
Advertisment