Sandeshkhali: উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে (Sandeshkhali) এযেন উলোটপুরাণ। গতকালের পর আজও বেনজির বিক্ষোভ সন্দেশখালিতে। শেখ শাহজাহান ও তার অনুগামী তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি উত্তম সরদার ও আর এক তৃণমূল নেতা শিবু হাজরার গ্রেফতারির দাবিতে সোচ্চার এলাকার হাজার-হাজার মানুষ। ঝাঁটা, লাঠি, বাঁশ হাতে পথে বেরিয়ে মিছিল মহিলাদের। যদিও পুলিশ দু'জনকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রামবাসীদের প্রবল রোষের মুখে তৃণমূল (TMC) নেতা-কর্মীরা। সন্দেশখালির ঘটনার ৩৪ দিন পরেও বেপাত্তা দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান (Sheikh Shahjahan) । এবার শাহজাহান ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতার বাড়ি-অফিস-পোল্ট্রি ফার্মে বেপরোয়া ভাঙচুর চালায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। যদিও এই হামলার পিছনে বিজেপি ও সিপিএমের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের।
সন্দেশখালিতে রেশন দুর্নীতি (Ration Scam) মামলার তদন্তে অভিযানে গিয়েছিল ইডি (ED)। তৃণমূল নেতা শেখ শাহাজহানের বাড়িতে গেলে তার অনুগামীদের হাতে আক্রান্ত হতে হয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে। তারপর থেকে শাহাজাহনের খোঁজ নেই। এবার শাহজাহান (Shahjahan) ঘনিষ্ঠ সন্দেশকালি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি উত্তম হাজরার (Uttam Hazra) বাড়িতে চড়াও গ্রামবাসীরা। আদিবাসী পাড়ায় গতকাল সন্ধেয় উত্তমের বাড়িতে ঢুকে পড়ে হাজার দেড়েক জনতা। বেপরোয়াভাবে ফ্রিজ, টিভি ও আসবাবপত্রে ভাঙচুর চালানো হয়। আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বাইরে পালিয়ে যান তৃণমূল নেতার পরিবারে সদস্যরা।
এরই পাশাপাশি ওই দিনেই আর এক তৃণমূল নেতা শিবু হাজরার ভেড়ির অফিসে চড়াও হয় গ্রামবাসীদের আরও একটি দল। ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় সেই অফিসটিতেও। এই শিবুও শাহজাহানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই দাবি স্থানীয়দের। এলাকার তৃণমূল কর্মীরা হামলার প্রতিরোধ করতে গেলে তাদের ধাওয়া করে এলাকাছাড়া করে দেয় গ্রামবাসীরা। শেষমেশ পুলিশের হস্তক্ষেপে এলাকা থেকে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয় ওই তৃণমূল কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার সকালেও গোটা এলাকা ছিল থমথমে। চোখে-মুখে একরাশ আতঙ্কের ছাপ তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি উত্তম সরদারের পরিবারে সদস্যদের। এদিন সংবাদমাধ্যমে উত্তম সরদারের মা বলেন, "গতকাল হাজার দেড়েক মানুষ এসেছিল। আমি সরে গেছি বলে বেঁচে গেছি। সিপিএম-বিজেপি (CPM-BJP) মিলে এই হামলা করেছে।"
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো (Sukumar Mahato) অবশ্য গোটা ঘটনার দায় চাপিয়েছেন বিরোধীদের দিকেই। তিনি বলেন, "উত্তম সরদারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পর্যন্ত নিয়ে যেতে দেয়নি। একটি কেজি স্কুলেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বিজেপি-সিপিএমের উসকানিতেই এটা হয়েছে।"
তবে বিরোধীরা এই হামলাকে জনরোষ হিসেবেই দেখছে। বিজেপি (BJP) নেতা সজল ঘোষ সংবাদমাধ্যমে বলেন, "সিপিএমের আমলে ২০০৯-২০১০ সালে যা হয়েছে এখন সেই অবস্থা। দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতারা দৌড়ে পালাচ্ছে। যাকে গণপ্রহার করা হয়েছে সে তো শাহাজানের ডান হাত। মানুষ জাগছে, মানুষ ক্ষেপছে। এতদিন ধরে লুঠতরাজের জবাব দিচ্ছে মানুষ। অনেকদিনের জ্বালা, ক্ষোভের বহিপ্রকাশ এই ঘটনা।"
আরও পড়ুন- Sundarban: এবার জমে ক্ষীর সুন্দরবন! বাঘ তো দেখবেনই! পর্যটকদের জন্য দুরন্ত চমক আর ক’দিনেই
অন্যদিকে সিপিএম (CPIM) নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "শাসকদলের বোঝা উচিত মানুষের জনরোষ কত ভয়াবহ। তৃণমূলের নেতাদের আক্রমণের পর গোটা গ্রামের মানুষ লাঠি-ঝ্যাঁটা নিয়ে তাড়া করেছে। পুলিশের সাহায্যে তৃণমূল নেতারা পালিয়েছে। ওরা গ্রামবাসীদের জমি দখল করেছে। তৃণমূল নেতারা এটা করেছে। আদিবাসীদের জমি দখল করেছে। গ্রামের মানুষ ভয়াবহ বিপদে পড়েছে। লুঠের টাকা ভায়া হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।"
এদিকে, সন্দেশখালিতে আজ গ্রামবাসীদের বিশাল মিছিল বের হয়। শেখ শাহজাহান ও তার দুই সহযোগী তৃণমূল নেতা উত্তম সরদার, শিবু হাজরার গ্রেফতারে রদাবিতে সোচ্চার হয় স্থানীয়রা। এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।