Advertisment

Lok Sabha Election 2024: বড় প্রাপ্তি পরিচয়, অপ্রাপ্তির ভাঁড়ারে কী কী? ভোটের ভারতে ঢুঁ ছিটমহলের অলি-গলিতে

Lok Sabha Polls 2024 In West Bengal: ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ভারত ও বাংলাদেশের চুক্তি মোতাবেক ছিটমহল দুই দেশে মধ্যে হস্তান্তরিত হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহল থেকেও অনেকে এদেশে চলে আসেন। এখানে অবস্থিত বাংলাদেশের ছিটমহলের বাসিন্দারা ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা খবর নিতে হাজির হয়েছে কোচবিহারের দিনহাটার তিনটে ছিটমহলে।

author-image
Joyprakash Das
New Update
How are the Chitmahals residents now Know their news before the Lok Sabha Election 2024, এখন কেমন আছেন ছিটমহলের বাসিন্দারা লোকসভা ভোটের আগে জানুন তাদের খবর

Election 2024: সরকারি পরিচয়পত্র হাতে ছিটমহলের বাসিন্দা মন্টু ও তাঁর স্ত্রী একাদশী দাস। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

Lok Sabha Election 2024 In Chitmahals: একসময় ছিল "রাষ্ট্রহীন"। খাতায় কলমে বাংলাদেশের বাসিন্দা হলেও ভৌগলিক অবস্থান ছিল ভারতের সীমানার মধ্যে। এই ছিটমহলের বাসিন্দাদের না ছিল পুলিশ-প্রশাসন, না ছিল কোনও পরিচিতি। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ভারত ও বাংলাদেশের চুক্তি মোতাবেক ছিটমহল দুই দেশে মধ্যে হস্তান্তরিত হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহল থেকেও অনেকে এদেশে চলে আসেন। এখানে অবস্থিত বাংলাদেশের ছিটমহলের বাসিন্দারা ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা খবর নিতে হাজির হয়েছিল কোচবিহারের দিনহাটার তিনটে ছিটমহলে। এই প্রতিবেদনে থাকছে ছিটমহলবাসীর পাওয়া, না-পাওয়ার হিসেবনিকেশ।

Advertisment

শিবপ্রসাদ মস্তফী:

অধুনা বাংলাদেশবাসী শিবপ্রসাদ মস্তফীর বাসিন্দারা একটা সময় পরিচয়হীনতায় ভুগতেন। বাজার-হাটে গেলে ভারতীয়রা 'ছিটের লোক, ছিটের লোক' বলে সম্বোধন করত! প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না। এই গ্রামের বাসিন্দা মন্টু দাস, বয়স ৬৭। তাঁর স্ত্রী একাদশী দাস। ছিলেন ভারতীয়, বিয়ের কারণে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছিলেন একাদশীদেবী। ২০১৫ সালে তিনি ফের ভারতীয় নাগরিকত্ব পেয়েছেন। আধারকার্ড, ভোটারকার্ড হয়েছে। একথা জানিয়ে একাদশী দাস বলেন, "এখনও রেশন কার্ড হয়নি। জমির নথিপত্র নিয়েও সমস্যা রয়েছে।"

আরও পড়ুন- Amit Shah: ৪২…৩৫…এবার? বাংলায় কত আসন চাই, নয়া লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলেন শাহ, কারণও জানালেন

মন্টু দাসের ছেলে গণেশ দাস, পুত্রবধূ সবিতা দাস। বড় নাতি ১৪ বছরের চৈতন্য দাস ও ছোট নাতনি সুবর্ণা দাস। মন্টু দাস বলেন, "জমির কাজকর্ম করি। এখনও কয়েক বিঘে জমির সরকারি নথি হয়নি। ভূমি সংস্কার দফতরে দৌড়ঝাঁপ করেও কোন লাভ হচ্ছে না৷ আমাদের জেলা ছিল বাংলাদেশের রংপুর। থানাও রংপুর। কিন্তু জীবনে কখনও বুঝলাম না আমরা বাংলাদেশের বাসিন্দা ছিলাম। ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার সময়টুকুই যা হইচই হয়েছিল।"

publive-image
কোচবিহারে ছিটমহলের দিশা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

গবরাছাড়া নয়াহাট গ্রামপঞ্চায়েতের শিবপ্রসাদ মস্তাফী এলাকায় ১১-১২টি পরিবারের বাস। কোচবিহার লোকসভার মধ্যে দিনহাটা বিধানসভা এলাকার ভোটার মন্টুবাবুরা। সরকারি ভাবে এদেশে এসে কর্মসংস্থানের সমস্যা মিটল? এই প্রশ্নে হতাশ মুখে মন্টু দাস বলেন, "৬ জনের সংসার। নাতি-নাতনিদের পড়াশুনা আছে। একে এখানে কাজ নেই, তার ওপর সংসারের আর্থিক সঙ্গতি খারাপ থাকায় ছেলে থাকে বেঙ্গালুরুতে। সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। এদিকে এখনও আবাস যোজনার বাড়িও পাইনি। আদৌ কবে পাব জানি না।"

পোয়াতুর কুটি:

দিনহাটার এককালের এই ছিটমহলে এখন বসবাস ৬৫০টি পরিবারের। রয়েছেন ৩,৩০০ বাসিন্দা। গ্রামে রয়েছে ২টি বুথ। বামনহাট ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের এই গ্রামের বাসিন্দাদের বিস্তর অভিযোগ। তবে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেয়ে কিছুটা সুবিধাও পেয়েছেন তাঁরা। বছর তিরিশের অসীম মণ্ডল বলেন, "একটা সময় ভিনরাজ্যে কাজ করতে গেলে পুলিশ-প্রশাসনের ঝামেলা পোহাতে হত। কখনও কখনও ঝামেলা এড়াতে ৪-৫ টা লোকাল ট্রেনে চড়ে কৌশলে গন্তব্যে যেতে হত। এখন সেই ঝামেলা মিটেছে। তবে বাড়ি-জমির নথির সমস্যা মেটেনি, আবাস যোজনার ঘর না পাওয়া পরিবারের সংখ্যাও প্রচুর। তবে এখানে একদা ছিটমহলের বাসিন্দা হিসাবে দুজন চাকরি পেয়েছে।"

অসীমের বাবা অভয় মন্ডল। পরিবারের ১২ বিঘে জমিতে ধান ও পাট চাষ হয় বলে জানালেন অসীম। পরিবারে অসীমের বাবা, মা, স্ত্রী ও মেয়ে থাকে। এই গ্রামের বাসিন্দা মহিরুদ্দিন আলিও জানালেন, "জমির নথির সমস্যা থেকেই গিয়েছে।"

publive-image
ছিটমহলে বিএসএফের টহল। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

অসীমের খুড়তুতো ভাই সমীর মণ্ডল বলেন, 'আমরা ৩ ভাই বেঙ্গালুরুতে থাকি। সেখানে ডেলিভারি বয়ের কাজ করি।" এখানকার বাসিন্দা আরশাদ হোসেন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, "এই গ্রামে বহু সমস্যা আছে। রাস্তাঘাট, রাস্তার লাইট নিয়ে সমস্যা আছে। বারবার বললেও কাজ হচ্ছে না। অসুস্থ হলে একটা অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না।" আরও একটা ব্যাপারে এই গ্রামের লোকজন বীতশ্রদ্ধ। রাজনীতির নানা মারপ্যাঁচে তাঁদের জীবনে জটিলতা বাড়ছে। আগে যখন ছিটমহল ছিল, তখন দুই পরিবারের বিবাদ হলে গ্রামের লোকেরা বৈঠক করে মিটিয়ে ফেলত। তাঁদের বক্তব্য, "এখন নাস্তাপানি না দিলে আর বিবাদ মেটাতে নেতারা আসতে চায় না। সুবিধা বলতে, এখন কেউ আর টোন করে না, ছিটের লোক বলে না, তাছাড়া ভিনরাজ্যে যেতে আর অসুবিধা নেই। এই গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দার আধার, ভোটার, রেশন কার্ড হয়েছে।"

করলা:

বাংলাদেশের সীমানা ঘেঁষা অঞ্চল। ছিটমহল বিনিময়ের সময়ে এই মুসলিমপ্রধান গ্রামের বাসিন্দারা এখানেই থেকে গিয়েছেন। ৪৮ বছরের নুর মহম্মদ মিঁয়ার পরিবারে ৮ জন সদস্য। কৃষিকাজ প্রধান জীবিকা। এখানে হিন্দু-মুসলিম চিরকাল শান্তিতে বসবাস করছে। নূর মহম্মদ বলেন, "আমরা কখনও ভাবিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেব। ভারতেই আমাদের আত্মীয়- স্বজনের বাস। তাই আমরা এদেশেই থেকে গেলাম। ওই দেশে গেলে জীবনের সব কিছু নতুন করে শুরু করতে হ'ত। তা সম্ভব ছিল না।"

publive-image
চাষের কাজে ব্যস্ত ছিটমহলের এক মহিলা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ভারত ও বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় হয়। দেশভাগের সময় সীমানা নির্ধারণের কোনও নিয়ম মানা হয়নি। ফলে, এক দেশের ভূখণ্ডের চারিদিকে দ্বীপের মত ছোট্ট জমির খণ্ডটি অন্য এক দেশের ছিটমহল। স্বাধীনতার পর ভারতের ১১১টি ছিটমহল ছিল বাংলাদেশে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ছিল ভারতে। ভারতে এসেছে ৭,১১০ একর জমি। বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ১৭,১৬০ একর জমি।

publive-image
এখন আর পরিচয়হীনতায় ভুগতে হয় না ছিটমহলের বাসিন্দাদের। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

প্রায় ৯ বছর কেটে গিয়েছে ছিটমহলের বাসিন্দারা ভারতীয় হয়েছেন। পেয়েছেন পরিচয়পত্র, ভোট দেওয়ার অধিকার। তবে এখনও ছিটের লোক কথাটা পুরোপুরি যায়নি। এখানকার বাসিন্দারা নিজেরাও বলে ফেলেন কখনও সখনও। রেশন কার্ড, জব কার্ড, আবাস যোজনার বাড়ি, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক সমস্যার মত নানা বিষয়ে অভিযোগ থাকলেও নাগরিকত্ব পাওয়ার তৃপ্তি নিয়ে একদা ছিটমহলের বাসিন্দারা কম-বেশি একমত। তাঁরা বলছেন, আগে তো মানুষ মেরে ফেলে দেওয়ার জায়গা ছিল ছিটমহল। নথির জটিলতায় প্রয়োজনে জমি বিক্রির সমস্যা রয়ে গিয়েছে। ভারতভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গ রাজনীতির কঠিন স্পর্শ তাঁরা যে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছেন, সেকথা জানাতে ভোলেনি রাষ্ট্রহীনতার তকমা ঘোচা বাসিন্দারা।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের পর ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে প্রথম তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা। এরপর ২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা ভোটেও অংশগ্রহণ করেছিলেন একদা ছিটমহলের বাসিন্দারা।

tmc bjp west bengal politics 2024 General Election loksabha election 2024
Advertisment