পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মানকে নিয়ে ঝটিকা সফরে এসে নবান্নে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেছেন তাঁরা। মোদিকে হঠানোর কথা বললেও কেউই কিন্তু বিরোধী জোট নিয়ে খোলসা করছেন না। কংগ্রেসের নাম তো দূরের কথা সরাসরি কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের নামই মুখে আনেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন, আর বিরোধী শিবিরের একাধিক নেতৃত্ব মনে করছেন তাঁরাই মোদি বিরোধী প্রধান মুখ। কেজরিওয়াল, নীতীশদের দল থেকে তাই বলা হচ্ছে প্রকাশ্যে। তৃণমূল তো মনেই করে দেশে প্রধান মোদী বিরোধী মুখ মমতাই। কেউ অন্য কারও কথা বলছেন না।
বিগত কিছু দিন ধরে আপ নেতৃত্ব বলে চলেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো নেতা দেশে চাই। দেশের পরিবর্তন আনতে পারবেন একমাত্র কেজরিওয়ালই। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস তো বরাবরই বলে এসেছে মোদির প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাবী প্রধানমন্ত্রী বলে এর আগে প্রচারও চলেছিল। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই দুই দল ইস্যুভিত্তিক বৈঠক করলেও কেউই কাউকে বিরোধী নেতৃত্বের মুখ বলতে নারাজ। কংগ্রেস যে আপ ও তৃণমূলের কাছে ব্রাত্য তাঁদের হাবভাবেই স্পষ্ট।
বিরোধীদের একজোট হয়ে মোদির বিরুদ্ধে লড়াই কথা বলেছেন মমতা। কিন্তু তেলেঙ্গানা, পঞ্জাব, কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষা, বিহার, ঝাড়খন্ডে এক সঙ্গে আছি বললেও সদ্য বিজেপিকে গোহারা হারিয়ে কর্নাটকে কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করলেও সেই রাজ্যের নাম মুখে আনেনি মমতা। এমনকি সরাসরি যে যে রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে রাজস্থান, ছত্তিশগড়, হিমাচলপ্রদেশের নামও শোনা যায়নি মমতাবন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। অথচ প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী দল বামশাসিত কেরালার কথা বলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
রাজনৈতিক মহলের মতে, মুখে যাই বলুক না কেন আগামী লোকসভা নির্বাচনে আপ ও তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল না লড়লেও সেখানে আপ প্রার্থী দিয়েছিল। ২০৮টি আসনে প্রার্থী দিয়ে সব আসনেই জামানত খুইয়েছে আপ। এমনকী নোটার থেকেও কম ভোট পেয়েছে আপ। ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনেও নোটার থেকে কম ভোট পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। গুজরাট বিধানসভা ভোটে যেমন আপ লড়াই করেছে, তেমনই গোয়া ও মেঘালয়ে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল। কংগ্রেসের বক্তব্য, ভোট কেটে বিজেপিকে জয়ী করতে বিভিন্ন রাজ্যে রাজনৈতিক পর্যটক হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আপ ও তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্য়ে রাজ্যে এমন পরিস্থিতির পর একের বিরুদ্ধে এক, যে যেখানে শক্তিশালী, সেই সব তত্ব কতটা খাটবে সেই প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে।
এককাট্টা হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা ঘোষণা করেছেন মমতা। কিন্তু আগামী লোকসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে একের বিরুদ্ধে এক লড়াই কি সম্ভব? সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। কয়েক মাস আগেও তৃণমূল লাগাতার প্রচার চালিয়েছিল কংগ্রেস বিজেপির কাছে জিততে পারে না বলে তাঁরা ভিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করতে যাচ্ছে। হিমাচলপ্রদেশ, কর্নাটকে কংগ্রেস জিততেই সেই যুক্তি আপাতত স্থগিত রেখেছে তৃণমূল। আঞ্চলিক দলগুলি এক জোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বললেও ২০২৪-এ কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলের।