খাটের ওপর বসে আছেন। বাঁ হাতে রয়েছে স্লাইস পাউরুটি আর ডান হাতে স্টিলের চামচ। বিছানাতেই জলচৌকির ওপর প্লেটে তরকারি, আরেক পিস রুটি। আহার সারছেন তিনি। পরনে নীল টি শার্ট ও ছাপা রংয়ের শর্ট প্যান্ট। চেহারা শীর্ণকায়। কৃষ্ণনগরের বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়ের এই ছবি প্রায় সমস্ত সোশাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল। শুক্রবার এই ছবি ছুটেছে এক মোবাইল থেকে আরেক মোবাইলে। আদৌ কি এটা মুকুল রায়ের ছবি? তা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। এই ছবি ঘিরে নানা মন্তব্য করছেন নেট নাগরিকরা। কিন্তু তৃণমূলে যোগদান করা বিজেপি বিধায়ক এখন কেমন আছেন? তাঁর দৈনন্দিন কাজকর্ম কেমন চলছে? এ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের কোনও শেষ নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটি যে তাঁর বাবার সেটা স্বীকার করেই নিয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ সভাপতির পুত্র তৃণমূল নেতা শুভ্রাংশু রায়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তৃণমূল নেতা শুভ্রাংশু রায় বলেন, 'বাবার শরীর খুব খারাপ। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মাথায় অস্ত্রোপচার হয়েছে। সব কিছুই তো হয়েছে। বাড়িতেই আছেন বাবা।'
সল্টলেকে ২০৬ বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি বাড়িতে অফিসও করেছিলেন মুকুল রায়। সেখানে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে শারীরিক পরিস্থিতি খানিকটা খারাপ হওয়ার দরুন দীর্ঘদিন ধরে সেই অফিসে যাতায়াত বন্ধ বিজেপি বিধায়কের। গত বছরের মে মাসে ওই অফিসে গিয়ে দেখা গিয়েছিল দুপুরের আহার সেখানেই সারছেন মুকুল রায়। তবে টিভি বন্ধ থাকতো এমনকী সেখানে খবরের কাগজও পড়তে দেখা যায়নি তাঁকে।
বরং খাবার আরও কমাতে হবে বলে বকাঝকা করতেন। রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন এসেছিলেন মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করতে। বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসার পর তাঁর সঙ্গে যাঁরা দেখা করতে আসতেন তাঁদের অনেকেই দলের বসে যাওয়া বা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতা-নেত্রী। কোনও আওয়াজ কানে এলেই বলতেন কেউ এসেছে?
নিয়মিত কাঁচরাপাড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে সল্টেলেকে যেতেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী। আবার সাড়ে তিনটে-চারটের মধ্যে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিতেন। দুপুরটা কাটতো সল্টলেকের অফিসে। গাড়িতে সানগ্লাস পরে চালকের পাশের আসনেই বসতেন তিনি। তাঁর কনভয়ের গতিবেগ থাকতো খুবই কম। কোনও কোনও সময় ছেলে শুভ্রাংশু থাকতেন তাঁর সঙ্গে। এটাই ছিল ব্যস্ততাহীন মুকুল রায়ের প্রতিদিনের রুটিন। এখন বাড়িতে অসুস্থতা নিয়ে দিন কাটছে একসময়ের তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান সেনাপতির। সাম্প্রতিক ছবি ভাইরাল হতেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়েছে।
স্বপুত্র বিজেপি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে এলেও সাংগঠনিকভাবে কোনও গুরুত্ব পাননি মুকুল রায়। তাঁকে বিধানসভার পিএসি-র চেয়ারম্যান করা হলেও সেভাবে বৈঠকে হাজির থাকতেন না। ওই পদ পাওয়ার পর থেকেই ছেড়ে দিতে চাইতেন। তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের জন্য মামলাও করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
আরও পড়ুন- পার্থর ‘অপা’র পর এবার বালুর ‘দোতারা’, শান্তিনিকেতনেই হদিশ প্রাসাদোপম অট্টালিকার
কয়েকমাস আগে বাড়ির কাউকে না বলে দিল্লি চলে গিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মুকুল রায়। অপহরণের অভিযোগ করেছিল তাঁর পরিবার। যদিও মুকুল রায় জানিয়েছিলেন, তিনি প্রাপ্তবয়স্ক। কেউ তাঁকে অপহরণ করেনি। স্বেচ্ছায় দিল্লি এসেছেন। পাশাপাশি তাঁর ঘোষণা ছিল, তিনি বিজেপিতেই আছেন। কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবার আর মুকুল রায়কে গুরুত্ব দেয়নি। তিনি ফিরে আসেন কলকাতায়। তারপর থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছেন তিনি। ভাইরাল ভিডিও ফের তাঁকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।