সোমবার হাওড়ার শালিমার স্টেশনে কাজ চলাকালীন ভেঙে পড়ল নির্মীয়মাণ একটি শেড। এ ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কংক্রিটের শেড চাপা পড়ে অন্তত চারজন আহত হয়েছে বলে খবর।
ঠিক কী ঘটেছে?
দক্ষিণ-পূর্ব শাখার শালিমার স্টেশনে ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষের দিকে কিছুটা শেড বাড়ানোর কাজ চলছিল। তখন আচমকাই ভেঙে পড়ে প্রায় আড়াইশো স্কোয়ার ফিটের একটি স্ল্যাব। তার তলায় চাপা পড়ে যান বেশ কয়েকজন। এমনকি, এই ঘটনার সময় ওই শেডের বাইরেও যাঁরা ছিলেন তাঁরাও আহত হন। সূত্রের খবর, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় উত্তেজিত জনতার হাতে প্রহৃত হন শালিমার রেল ইয়ার্ডের কর্মরত চিফ ইয়ার্ড মাস্টার দুলাল বিশ্বাস। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন রেলের আধিকারিকরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন হাওড়ার নগরপাল গৌরব শর্মা। পৌঁছয় দমকল ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরাও। জানা গিয়েছে, প্রায় ১২ বছর আগের একটি ঘটনারও পুনরাবৃত্তি হল হাওড়ার শালিমারে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে শালিমার স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে কাজে যুক্ত কৌশল সিং বলেন, “প্রায় ১২ বছর আগে এই শালিমারে নির্মীয়মাণ যাত্রী শেড ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল অনেকের। সেদিন গভীর রাতে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা ঘুমন্ত একদল যাত্রীর উপরে ভেঙে পড়ে সদ্য নির্মিত যাত্রী শেডের একটি অংশ। ভেঙে পড়া সেই বিশাল কংক্রিটের নিচে পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন অনেকে।" সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি এদিন ঘটল বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষেরা।
আরও পড়ুন- পুজোয় সুখবর, ৭ বছর পর ৩০ টন পদ্মার ইলিশ বাংলায়
বেলা প্রায় ৩টে নাগাদ শালিমার স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তের কিছুটা দূরে একটি নির্মীয়মাণ যাত্রী শেড আচমকাই ভেঙে পড়ে মাটিতে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক মেজর সিং বলেন, “আমি এবং আরও ৪ জন শ্রমিক ওই শেডের তলায় বসে বিশ্রাম করছিলাম। তখনই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভেঙে পড়ে শেডটি। আমি এবং অন্য ৪ জন পালাতে পারলেও একজন শ্রমিক সম্ভবত বেরতে পারেননি”। দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, শালিমার স্টেশনে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। যার দায়িত্বে রয়েছে ইরকম সংস্থা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছোন খড়্গপুরের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার এবং ইরকমের আধিকারিকরা।
রেল সূত্রে খবর, ঘটনায় মৃত্যু হয় শেড নির্মাণকারী কনস্ট্রাকশন সাপ্লায়ার ইরকম সংস্থার এক শ্রমিকের। মৃতের নাম দুখা চৌপাল (২৬)। বিহারের দ্বারভাঙা জেলার বাসিন্দা তিনি। সেখান থেকে শ্রমিকের কাজ করতেই এই নির্মাণকারী সংস্থায় যোগ দেন দুখা। এছাড়াও এই ঘটনায় ৪ জন আহত হয়েছে। তাঁদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও আটক রয়েছেন কয়েকজন, এমনটাই দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের।
আরও পড়ুন- জীর্ণ টালা ব্রিজের একাংশ মেরামতির জন্য রেলকে অনুরোধ রাজ্যের
রেল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে দক্ষিণ পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশও দিয়েছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। পরিস্থিতি দেখে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি আমার কাছ থেকে ঘটনার খোঁজখবর নিয়েছেন। নিহত এবং আহতদের ক্ষতিপূরণের দাবি করেছেন তিনি।