গরু এবং শুয়োরের মাংস ডেলিভারি দেওয়া নিয়ে জোম্যাটোর 'দাদাগিরি'র বিরুদ্ধে এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে বসছেন হাওড়া-সালকিয়া জোম্যাটোর ডেলিভারি কর্মীরা। রবিবার থেকেই হাওড়া জেলায় কর্মরত ১৫ জনের বেশি ডেলিভারি কর্মী গ্রাহকদের মধ্যে শুয়োরের মাংস এবং গোমাংস সরবরাহ করতে অস্বীকার করে ধর্মঘটে বসেন। এমনকি সংস্থাটি তাঁদের বেতনও বন্ধ করে দিয়েছে, এমন দাবি তুলেও সুর চড়ান তাঁরা।
আরও পড়ুন, ২০০ বছরের পুরানো ছাপাখানার খোঁজ মিলল হাওড়ায়
তবে কর্মীদের মূল অভিযোগ এই যে, জোম্যাটো সংস্থা ডেলিভারি কর্মীদের দিয়ে গোমাংস এবং শুয়োরের মাংস গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে বাধ্য করছে। উল্লেখ্য, যাঁরা প্রতিবাদ করছেন তাঁদের মধ্যে হিন্দু মুসলিম উভয় ধর্মের কর্মীরাই আছেন। তাঁদের এটাই বক্তব্য যে না চাইলেও জোর করেই তাঁদের দিয়ে এই ডেলিভারি দেওয়ায় জোম্যাটো।
প্রতিবাদকারীদের একজন, মৌসিন আখতার, বলেন, "আমাদের অভিযোগগুলি শোনার পরিবর্তে, কোম্পানি আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গরুর মাংস এবং শুয়োরের মাংস সরবরাহ করতে বাধ্য করছে। হিন্দুদের যেমন গোমাংস ডেলিভারি দিতে সমস্যা হয়, তেমন মুসলিমদেরও শুয়োরের মাংস ডেলিভারি দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। আমরা এই খাবারগুলি দিতে রাজি নই, কিন্তু আমাদের জোর করা হচ্ছে খাবারগুলি দিতে। এমনকি কোম্পানি আমাদের টাকা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। সেই কারণেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে নেমেছি আমরা।"
আরও পড়ুন, রেল আধিকারিকের মানবিকতায় পরিবারের কাছে ফিরল মানসিক অবসাদগ্রস্ত বালক
অপর এক প্রতিবাদী কর্মী বলেন, "কোম্পানি আমাদের ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে ছেলেখেলা করছে। কোম্পানির তরফে আমাদের এই ধরনের খাবার নিয়ে যেতে ইচ্ছে করেই নিয়োগ করা হচ্ছে। আমাদের হিন্দুদের বলা হচ্ছে গোমাংস ডেলিভারি করতে আর মুসলিম ভাইদের বলা হচ্ছে শুয়োরের মাংস ডেলিভারি করতে। এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।"
অবশ্য ডেলিভারি কর্মীদের এই বক্তব্য মানতে চায়নি সংস্থাটি। তাদের তরফ থেকে জানানো হয়, "ভারতের মতো বৈচিত্রপূর্ণ দেশে খাবার ডেলিভারি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমিষ এবং নিরামিষাশী বিচার করে ডেলিভারি কর্মী নিযুক্ত করা সম্ভব নয়। ডেলিভারি পার্টনারদের আমাদের কাজের যে ধরন সেটা বুঝতে হবে। আমাদের সব পার্টনাররা এটা বুঝেই কাজ করেন। হাওড়াতে একটা ছোট গ্রুপ একটা বিষয় নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে, আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই সমস্যার সমাধান করার।"
আরও পড়ুন, লাইব্রেরিতে ভিড় টানতে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত হাওড়ায়
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই ফের একবার ধর্মীয় বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে জোম্যাটো। মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের বাসিন্দা অমিত শুক্লা মুসলিম ডেলিভারি কর্মীর কাছ থেকে খাবার নিতে অস্বীকার করায় তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। অমিত শুক্লার জবাবে সংস্থার পক্ষ থেকে লেখা হয়, "খাদ্যের কোনও ধর্ম হয় না। খাদ্যই ধর্ম।" কিন্তু হাওড়ার এই বিতর্কে আবারও প্রকাশ্যে এলো ধর্মীয় ভেদাভেদের চিত্র।
হাওড়ার সব খবর পড়ুন এখানে