আইপিএল হোক কিংবা টেস্ট ম্যাচ, ক্রিকেট ঘিরে বাঙালির উন্মাদনা বরাবরই আকাশ ছোঁয়া। আর বিশ্বকাপ হলে তো কথাই নেই। ‘ওয়ার্ল্ড কাপে’র মরশুমে বাঙালি সব কাজ ফেলে বাইশ গজের লড়াইয়েই গা ভাসায়! সেই পরম্পরায় ছেদ পড়েনি, ইতিমধ্যেই পাড়ায় পাড়ায় ঢুঁ মারলেই চোখে পড়বে বাঙালির বিশ্বকাপ ম্যানিয়ার নিদর্শন। কোথাও ঝুলছে জাতীয় পতাকা, কোথাও আবার কোহলি-রোহিত শর্মা-ধোনিদের ইয়া বড় বড় কাটআউট। কেউ কেউ আবার টিম ইন্ডিয়ার জার্সি গায়ে চাপিয়েই টিভির সামনে বসছেন। কোনও মিষ্টি দোকানে আবার সাজানো আস্ত বিশ্বকাপের 'মিষ্টি' ট্রফি। তবে এসব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছেন কলকাতার দুই বাসিন্দা। ক্রিকেট জ্বরে কাবু কলকাতার ওই দুই বাসিন্দা বানিয়ে ফেলেছেন বিশালাকার বিশ্বকাপের ট্রফি। এগুলির কোনওটির উচ্চতা ১২ ফুট, তো কোনওটা আবার ৯ ফুট।
৯ ফুটের বিশ্বকাপের ট্রফি। ছবি: শশী ঘোষ।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের উদ্বোধনে প্রথা ভাঙল ব্রিটেন, চমকে গেল বিশ্ব
২০ বছর ধরে বেতের কাজ করে আসছেন গিরিশ পার্কের বাসিন্দা বিশ্বনাথ মাইতি। আর চার-পাঁচটা বাঙালির মতো ক্রিকেট জ্বরে তিনিও কাবু। বেত, থার্মোকল দিয়ে ১২ এবং ৯ ফুটের বিশ্বকাপের ট্রফি বানিয়ে ফেলেছেন বিশ্বনাথ। ক্রিকেটপ্রেমী শহরে এহেন বিশ্বকাপের ট্রফির চাহিদা নেহাত কম নয়। তাই শখ আর ব্যবসা দুটোই সামলে নিয়েছেন বিশ্বনাথ। তাঁর বানানো ১২ ফুট উচ্চতার বিশ্বকাপ ট্রফি পাড়ি দিয়েছে মধ্যমগ্রাম। ৯ ফুটের বিশ্বকাপের ট্রফিটা যাচ্ছে রাজারহাটের নারায়ণপুরে। বিশ্বনাথবাবু জানালেন, এসব ট্রফি বানাতে খরচাও কম নয়। ১২ ফুটের ট্রফি বানাতে তাঁর পকেট থেকে গুণতে হয়েছে ১০ হাজার টাকা।
বিশ্বনাথ মাইতি। ছবি: শশী ঘোষ।
তবে বিশ্বনাথ যে এবারই প্রথম বিশ্বকাপের ট্রফি বানালেন তা নয়, ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের সময়ও তাঁর হাতে তৈরি হয়েছিল নকল বিশ্বকাপ। সেবার সৌরভের ভারতের খেলায় মুগ্ধ শিল্পী ২৫ ফুটের ট্রফি বানিয়ে তাক লাগিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত রিকি পন্টিংয়ের অষ্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছিল টিম সৌরভকে। মন ভেঙে গিয়েছিল বিশ্বনাথ মাইতির।
তৈরি হচ্ছে ৭ ফুটের বিশ্বকাপের ট্রফি, অবাক পানে চেয়ে থ্যানোস। ছবি: শশী ঘোষ।
বিশ্বনাথের পাশাপাশি একইরম ট্রফি বানিয়ে ফেলেছেন গৌতম সাঁতরাও। উচ্চতার নিরিখে গৌতমের কাপ, বিশ্বমনাথের থেকে একটু ছোটো। তাঁর হাতে তৈরি ৭ ফুটের বিশ্বকাপের ট্রফির কাজ এখনও চলছে। গৌতম জানাচ্ছেন, এখনও ট্রফি তৈরির কাজ ৬০ শতাংশ বাকি। এজন্য অবশ্য অর্ডার পাননি গৌতম। নেহাত ক্রিকেট পাগলামি থেকেই বানানো। এর আগে ১৫ ফুটের বিশ্বকাপের ট্রফি বানিয়েছিলেন তিনি।
বিয়ে বাড়ির গেট, পুজোর প্যান্ডেল তৈরি, এসব কাজেই বছরের বাকি দিনগুলোয় লেগে থাকেন বিশ্বনাথ-গৌতমরা। সেই কাজের ফাঁকে বিশ্বকাপ ঘিরে কোহলিদের নিয়ে ওঁরাও মেতে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ওঁদের এই উচ্ছ্বাসকে মর্যাদা দিয়ে কোহলির ভারতের হাতে বিশ্বকাপের সেই ‘আসল’ ট্রফি ওঠে কি না সেদিকেই তাকিয়ে ক্রিকেটমহল।