সন্তান হারানোর যন্ত্রণা কেমন, তা তিনি দেখেছেন। নির্বাচনের প্রাকলগ্নে আসানসোলের নূরানি মসজিদের ইমাম মহম্মদ ইমদাদুল্লাহ রশিদির তাই প্রার্থনা, আর কোনও বাবাকে যেন তাঁর মতো সন্তানহারা হতে না হয়।
গত বছরের ২৮ মার্চ আসানসোলে খুন হয়েছিল ইমামের ছেলে, বছর আঠারোর সিবঘাতুল্লা। অভিযোগ, রামনবমীর মিছিল থেকে তার উপর হামলা করে দুষ্কৃতিরা। তার অব্যবহিত পরেই 'প্রতিশোধ' চেয়ে মসজিদ চত্ত্বরে জমায়েত হন প্রায় হাজার দশেক মানুষ। সেই জনসমাবেশের সামনে বক্তৃতা করেন সদ্য পুত্রহারা ইমাম। তিনি বলেন, প্রতিশোধ কোনও সমাধান নয়। তিনি চান না অন্য কোনও বাবা তাঁর মতোই পুত্রহারা হন। এমনকি এও বলেন, হানাহানি না থামলে আসানসোল ছেড়ে চলে যাবেন তিনি।
ইমাম রশিদির এই পদক্ষেপের পরেই আসানসোলের দাঙ্গা পরিস্থিতির অভাবনীয় উন্নতি হয়। উন্মত্ততা প্রশমিত হয়ে শান্ত হতে শুরু করে শিল্পাঞ্চল। ইমাম হয়ে ওঠেন শান্তি ও সম্প্রীতির আইকন। পরে রাজ্য সরকারও তাঁকে সম্মানিত করে। রামনবমী এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি কথা বললেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে।
আরও পড়ুন: আজ ভোট, বঞ্চনার আলোচনায় মশগুল ছিটমহল
ছেলের মৃত্যুর এক বছর পর পরিস্থিতির কি কোনও পরিবর্তন হয়েছে? ইমাম বলেন, "সার্বিকভাবে কী হয়েছে, তা নিয়ে বিশদে কথা বলতে চাই না। কিন্তু আসানসোলের পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক শান্ত। আশা করব, আর কোনও গোলমাল হবে না।" তাঁর কথায়, "সিবঘাতুল্লা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছিল। তার আগেই খুন হয়ে গেল। ওর স্বপ্ন ছিল আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে পড়ার। বেঁচে থাকলে হয়তো সেখানেই পড়ত। আমি বাবা হয়ে ওকে বাঁচাতে পারিনি। চাই না আর কোনও বাবার এমন দুর্ভাগ্য হোক।"
গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গো-রক্ষার নামে সাধারণ মানুষের উপর আক্রমনের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনের আগে সে নিয়ে বেশ তপ্ত রাজনীতির আঙিনা। ইমামের কথায়, "আমি প্রতিটি ঘটনার কথাই জানি। সম্প্রতি আসামে যা হয়েছে, তাও দেখেছি। কিন্তু এটাই আমাদের দেশের প্রকৃত ছবি নয়। যাঁরা অসহায় মানুষকে ঘিরে ধরে মারছেন, কোনও বিশেষ মাংস মুখে গুঁজে দিচ্ছেন, আমি মনে করি না তাঁরা কোনও ধর্মে বিশ্বাস করেন বলে। কোনও ধর্ম এসব করতে শেখায় না। ওই লোকগুলির একটাই পরিচয় - হামলাবাজ।"
নির্বাচনের খবরাখবর নিয়ে ইমামের উৎসাহ রয়েছে, তবে প্রত্যাশিতভাবেই সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হলেন না তিনি। ইমাম বলেন, "নির্বাচনের সময় সব দলের নেতারা আসেন, প্রচার করেন, আমি তাঁদের বক্তব্য বুঝতে, শিখতে চেষ্টা করি। তবে ওঁদের আর আমার কাজের জায়গাটা আলাদা, তাই কোনও দলের নাম করে কিছু বলব না। শুধু চাইব, যাঁরা মানুষে মানুষে বিভাজন, হানাহানি চান না, তাঁরাই যেন ভোটে জেতেন। সম্প্রীতিই আমাদের দেশের মূল সুর, তা যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।"