ভয়াবহ ঘটনা হুগলির ধনেখালিতে। বাবা-মা-বোনকে খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টা পেশায় গৃহশিক্ষক যুবকের। গুরুতর জখম অবস্থায় অভিযুক্তকে আটক করেছে পুলিশ। মানসিক অবসাদের জেরেই এই ঘটনা, প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের।
স্থনীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লেখাপড়ায় বেশ ভালো ধনেখালির দশঘড়া রায় পাড়ার প্রমথেশ ঘোষাল। চুটিয়ে প্রাইভেট টিউশনি করতেন তিনি। তবে বদভ্যাস বলতে ছিল অতিমাত্রায় মদ্যপান। অতিরিক্ত মদ্যপানের জেরে ইতিমধ্যেই লিভারের ক্যানসারে কাবু প্রমথেশ। তাঁর কিডনির অবস্থাও ভালো নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে এরাজ্যের পাশাপাশি চেন্নাইয়ে গিয়েও চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ওষুধ শুধু তাঁরই লাগে। এছাড়াও বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মার মাসে ওষুধের খরচ হাজার পাঁচেক টাকার মতো। এমনকী একমাত্র বোনের বিয়ের পরেও তাঁর সংসার খরচের বেশ কিছুটা ব্যয় করতেন দাদা প্রমথেশই।
গত বছরের লকডাউনের পর থেকেই আয় কমতে শুরু করে প্রমথেশ ঘোষালের। টিউশনি পড়তে আসা একপ্রকার বন্ধই করে দেন ছাত্রছাত্রীরা। মাসের পর মাস ধরে চলে এই অবস্থা। প্রবল আর্থিক অনটনে মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছেন প্রমথেশ। একদিকে নিজের ওষুধের টাকার জোগাড় করতে পারছিলেন না, অন্যদিকে বৃদ্ধ বাবা-মার ওষুধের খরচ জোগাড় করাও তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাইফোঁটায় দাদা প্রমথেশকে ফোঁটা দিতে বাপের বাড়িতে এসেছিলেন বোন পল্লবী চট্টোপাধ্যায়। গতকাল অর্থাৎ সোমবার রাতে মত্ত অবস্থায় বৃদ্ধ বাবা-মা ও বোনের উপর হামলা চালায় প্রমথেশ। লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান করে দেয় বাবা অসীম ঘোষাল, মা শুভ্রা ঘোষাল ও বোন পল্লবী চট্টোপাধ্যায়কে। তারপর তাঁদের হাতের শিরা কেটে দেয় প্রমথেশ। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে ওই তিনজনেরই মৃত্যু হয়। পরে নিজেও শরীরের বিভিন্ন জায়গা ব্লেড দিয়ে কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন প্রমথেশ ঘোষাল নামে ওই যুবক। তবে শেষমেশ প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
আরও পড়ুন- বাড়ল সংঘাত, তথ্য কমিশনার নিয়োগ বৈঠকে থাকছেন না শুভেন্দু অধিকারী
মঙ্গলবার সকালে প্রমথেশের কয়েকজন ছাত্র তাঁর বাড়িতে যায়। বেশ কিছুক্ষণ দরজা ধাক্কা দেওয়ার পর মত্ত শরীরেই এসে দরজা খোলেন প্রমথেশ। ভিতরে ঢুকে তাঁর ছাত্ররা শিউরে ওঠেন। বাড়ির ভিতরেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল প্রমথেশ ঘোষালের বাবা-মা ও বোনের দেহ। গোটা ঘটনা তাঁরা জানান প্রতিবেশীদের। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছোয় পুলিশ। হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার আমন দীপ জানিয়েছেন, ওই যুবক মানসিক অবসাদ থেকেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। আর্থিক সমস্যায় ভুগছিল গোটা পরিবার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন