স্কুল বন্ধে কোপ শিক্ষায়, বাড়ির দেওয়ালেই ব্ল্যাকবোর্ড এঁকে ছাত্র পড়ান মাস্টারমশাই

পশ্চিম বর্ধমানের আদিবাসী এই গ্রামে গত এক বছর ধরে এভাবেই কচিকাচাদের পড়িয়ে চলেছেন বছর ৩৪-এর এই যুবক।

পশ্চিম বর্ধমানের আদিবাসী এই গ্রামে গত এক বছর ধরে এভাবেই কচিকাচাদের পড়িয়ে চলেছেন বছর ৩৪-এর এই যুবক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
In remote village, teacher turns walls into blackboards

আদিবাসী গ্রামে পরপর বাড়ির দেওয়ালে ব্ল্যাকবোর্ড এঁকে চলছে পড়াশোনা

করোনার কোপে শিক্ষা। একটানা বন্ধ রয়েছে স্কুল। ঘোর বিপাকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের পড়ুয়ারা। অধিকাংশ পরিবারেই নেই স্মার্টফোন। স্কুলের অনলাইন ক্লাসে যোগ দেওয়াটা অনেকটা ঠিক স্বপ্নের মতো। এক কথায় করোনাকালে পড়াশোনা লাটে ওঠার জোগাড়। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছেন এলাকারই এক শিক্ষক। পশ্চিম বর্ধমানের আদিবাসী এই গ্রামে বাড়ির দেওয়ালেই এঁকেছেন ব্ল্যাকবোর্ড। রাস্তার ধারে খুদে পড়ুাদের একজোট করে নিয়মিত পড়িয়ে চলেছেন তিনি। কচিকাচার দলও উন্মুক্ত পরিবেশে শিক্ষার এই সুযোগ পেয়ে বেশ খুশি। তারাও নিয়ম করে হাজির হয় স্যারের ক্লাসে।

Advertisment

দ্বীপনারায়ণ নায়েক। বছর ৩৪-এর এই যুবকের অবাক কীর্তিকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন অনেকে। পশ্চিম বর্ধমানের একটি আদিবাসী গ্রাম জোবা অট্টপাড়া। করোনার জেরে প্রায় ২ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে এলাকার স্কুল। এ তল্লাটের বহু পরিবারই আর্থিকভাবে দুর্বল। বাড়ির বাচ্চাদের অনলাইনে পড়াশোনা চালানোর সাধ্য নেই অধিকাংশ পরিবারের। এই পরিস্থিতিতে ত্রাতার ভূমিকায় দ্বীপনারায়ণ নায়েক নামে এই যুবক। আপন ইচ্ছেয় গত বছর থেকে টানা পড়িয়ে চলেছেন এলাকার খুদে পড়ুয়াদের।

আদিবাসী গ্রাম জোবা অট্টপাড়ায় পরপর বেশ কয়েকটি বাড়ির দেওয়ালে এঁকেছেন ব্ল্যাকবোর্ড। অ-আ, ক-খ থেকে শুরু করে একে চন্দ্র, দু'য়ে পক্ষের পাঠ দিচ্ছেন খুদে পড়ুয়াদের। গত বছর থেকে এভাবেই আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া বহু পরিবারের বাচ্চাদের পড়াশোনা করাচ্ছেন এই যুবক। নিয়ম করে স্যারের ক্লাসে হাজির থাকছে পড়ুয়ারাও। ক্লাসের সময় হলেই বস্তা নিয়ে হাজির কচিকাচার দল। বস্তা পেতে যে যার জায়গায় বসে পড়াশোনা।

করোনাকালে স্কুল বন্ধ। বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় ছিলেন অভিভাবকরা। তাঁদের সেই চিন্তা দূর করছেন মাস্টারমশাই। প্রত্যেকেই দ্বীপনারায়ণ নায়েকের এই উদ্যোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। স্থানীয় বাসিন্দা কিরণ তুরি সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ''লকডাউন জারির পর থেকেই আমাদের শিশুদের পড়াশোনা বন্ধ। শিশুরা শুধু ঘুরে বেড়াত। শিক্ষক এসে তাদের পড়াতে শুরু করেন।'' পড়াশোনার পাশাপাশি করোনাকালে প্রত্যেককে কোন কোন ধরনের সাবধানতা নিতে হবে, তারও পাঠ দেন যুবক। খুদে পড়ুয়াদের মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার ব্যাপারে নিয়মিত পরামর্শ দেন তিনি।

Advertisment

আরও পড়ুন- মণ্ডপজুড়ে তৃণমূলনেত্রী, থিমে কাত গেরুয়া, বিশ্বকর্মা পুজোয় রাজনীতির ছোঁয়া

নিজের এই কীর্তি সম্পর্কে দ্বীপারায়ণ নায়েক বলেন, ''আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমার ছাত্রদের অধিকাংশই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী। তাদের বাবা-মা দিনমজুরের কাজ করেন। স্কুল না খুললে অনেকেই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেই দূরে থেকে যাবে।'' অগাস্ট মাসে দেশজুড়ে গ্রামাঞ্চলের ১৪০০ পড়ুয়াকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দেশের গ্রামাঞ্চলের মাত্র ৮ শতাংশ পড়ুয়া অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পাচ্ছে। ৩৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার সুযোগই পাচ্ছে না।

Read full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Pandemic school West Bengal corona