Mob Lynching: 'ছেলেধরা' সন্দেহে গুজব জারি রয়েছে। গুজবের পাশাপাশি গণধোলাইয়ে মেতেছে একদল উন্মত্ত জনতা। বারাসতে দুটি ক্ষেত্রে গণপিটুনির পর শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগণার দুই জায়গায় ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে এই 'ছেলেধরা' গুজবেই উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
তিন দিন আগে বারাসতের গনধোলাইয়ের ঘটনার পর শুক্রবার বারাসত পুলিশ জেলার অশোকনগরে ফের 'ছেলেধরা' সন্দেহে এক ভবঘুরে মহিলা রজনী খাতুনকে মারধর করে স্থানীয়রা। পুলিশও ঘটনাস্থলে উদ্ধার করতে গেলে ক্ষিপ্ত জনতার হামলার শিকার হয়। কোনওক্রমে তাঁরা গণধোলাইয়ের হাত থেকে ওই মহিলাকে রক্ষা করেছে। আবার দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুরে একদল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ রুখে দাঁড়িয়ে এক মহিলাকে রক্ষা করেছেন। এক্ষেত্রেও একই সন্দেহ-'ছেলেধরা'। ওই মহিলা অ্যালজাইমার্সের রোগী।
শুক্রবার রাতে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় ফের 'ছেলেধরা' গুজবে এক যুবককে বেধড়ক পেটানো হয়। গণধোলাইয়ে গুরুতর জখমের এখন চিকিৎসা চলছে কলকাতার হাসপাতালে। মোহনপুর পঞ্চায়েতের কাঠালিয়ার মেলায় ঘটনাটি ঘটেছে। ৩২ বছর বয়স যুবকের নাম নাজির হোসেন। খড়দহ এলাকাতেই তাঁর বাড়ি।
আরও পড়ুন- TMC: দলেরই দুই কাউন্সিলরের গোষ্ঠীর ‘মারামারি’তে অতিষ্ট মমতা! নিলেন কড়া পদক্ষেপ
গুজব যেন কিছুতেই থামছে না। দোসর গণধোলাই। বারাসতের কাজি পাড়ায় এক শিশু খুনের ঘটনার পরই ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। বারাসত পুলিশ জেলায় তো ছড়িয়েছে, রাজ্যের অন্যত্রও তা বেড়ে চলেছে। গুজবের সঙ্গে অযথা গণপিটুনি দেওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে সাধারণ মানুষের একাংশের। বিশেষজ্ঞদের মতে, বারাসতের ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষত ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের বিভিন্ন গ্রুপে 'ছেলেধরা' নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন- Kolkata Metro: রাতের মেট্রোয় বাড়ি ফেরেন? কোন স্টেশনে কোন গেট খোলা জেনে নিন
ঘটনাহীন কোনও বিষয়কে তুলে ধরে বলা হচ্ছে। 'বাচ্চা চুরি হয়ে গিয়েছে', এটা বলেই ছড়ানো হচ্ছে গুজব। কখনও কারও ছবি দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের একাংশ যাচাই না করে ভুয়ো তথ্য বা ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে।
আরও পড়ুন- Ilish: মরশুমের শুরুতেই উপচে পড়া ইলিশের জোগান! এবছর কোথায় নামতে পারে রুপোলি শস্যের দাম?
বারাসতের মডার্ন স্কুলের সামনের ঘটনায় আক্রান্ত মহিলা বারে বারে বলেছিলেন, "আমার সম্বন্ধে খোঁজ নিয়ে আমাকে মারধর করুন।" কে শোনে কার কথা! এখন তিনি হাসপাতালে। কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি ও তাঁর দেওর। আরও একটা ঘটনা বারাসতে ঘটেছে। অর্থাৎ গত চার দিনের মধ্যে ৫টি গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘটেছে 'ছেলেধরা' গুজবকে কেন্দ্র করে। এমনকী পুলিশকে থোড়াই কেয়ার।
পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে তাঁদের বেধড়ক মারধর চলছে, সঙ্গে গাড়ি ভাঙচুরও। গুজব এতটাই ছড়িয়েছে যে পুলিশের ওপর কোনও ভরসা করছেন না এই শ্রেণির মানুষজন। যদি কারও প্রতি সন্দেহ হয় তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াই কর্তব্য। গণপিটুনির ভাইরাল ভিডিও-র দৃশ্য দেখলে ভাবতে লজ্জা লাগবে আমরা এ কোনও দেশে বাস করছি! এটা কোন সভ্য জগৎ? মারধর তো কাউকে করা যায় না, কিন্তু এক্ষেত্রে অভিযুক্ত একেবারে নির্দোষ। কী উদ্দেশ্য হামলাকারীদের?
প্রথমত যে কোনও ভিডিও, ছবি বা তথ্য পেলেই শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। যাচাই করতে না পারলে অযথা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা কারও কাজ হতে পারে না। আইনকে এভাবে হাতে তুলে কোনও ব্যক্তির প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। যাঁরা একাজ করছেন তাঁরা যদি অচেনা জায়গায় গণধোলাইয়ের শিকার হন, একবার ভেবে দেখেছেন। বেঁচে থাকলেও এই ট্রমা থেকে সে মুক্তি পাবে কখনও? বারাসত জেলা পুলিশ লিফলেট বিলি করে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। এই গুজব এখনই বন্ধ না হলেও বারাসত, অশোকনগর, খড়দহ, বারুইপুরের ঘটনা কিন্তু থেমে থাকবে না। তালিকা কিন্তু ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে।