রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আর রাজভবনে 'পিস রুম'। মনোনয়নপত্র জমার শুরু থেকে আজ, রবিবার পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ভোটকে কেন্দ্র করে। বোমা, গুলি, আগুন কিছু বাদ যায়নি মনোনয়ন পর্বে। হাইকোর্টের নির্দেশে এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকার। এদের বিরুদ্ধে আবার সুপ্রিম কোর্টে হাজির ডিএ আন্দোলনকারী সরকারি কর্মীরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের হালহকিকতে তাজ্জব বলছেন আপামর সাধারণ মানুষজন।
মনোনয়ন পর্ব মিটে যাওয়ার পর রাজ্যে ফিরেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এই সময়কালের মধ্যেই একাধিক রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়েছেন। পুলিশি ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করেছে রাজ্যবাসী। পুলিশের হাতে লাঠি, টিয়ার গ্যাসের সেল আর ঢাল, অন্যদিকে দুষ্কৃতীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা, ধারলো অস্ত্র। লাগাতার বোমা নিক্ষেপ যেমন চলেছে তেমনই গুলি চালিয়েছে রাজনৈতিক আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। পুলিশই বারে বারে ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করেছেন। দাপিয়ে বেরিয়েছে সমাজবিরোধীরা। ভাঙড়ে সরেজমিনে গিয়েছেন রাজ্যপাল। তারপর রাজভবনেই খুলেছেন 'পিস রুম'। ভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষের যে কোনও অভিযোগ এই ‘পিস রুমে’ জানানো যাবে। অভিযোগ পাওয়ার পরেই সেগুলি রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্য পুলিশ থাকা সত্বেও প্রথমে আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নির্দেশ। তারপর রাজ্যপালের উদ্যোগে রাজভবনে পিস রুম খোলা। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে হাইকোর্ট বা রাজ্যপাল কেউই রাজ্যের পুলিশের ওপর ভরসা রাখছে না। তবে এখনও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও মমতা সরকার। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের উদ্যোগে এমন ঘোষিত 'পিস রুম' এর আগে কখনও হয়নি। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যপালের পোশাক পড়া নিয়েও নাম না করে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। তাহলে কী এবার বড় ধরনের সংঘাত তৈরি হচ্ছে রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে?
রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের সংঘাত নিয়ে পর্যবেক্ষক মহলের নানা অভিজ্ঞতা রয়েছে। এর আগে এখানে দীর্ঘ দিন রাজ্যপাল ছিলেন জগদীপ ধনকড়। উঠতে-বসতে ধনকড়ের সঙ্গে রাজ্যের বিবাদ লেগে থাকতো। সকালে রাজ্যপাল সাংবাদিক বৈঠক করছেন তো বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করছেন। এরাজ্যে নবান্ন ও রাজভবনের মধ্যে বিরোধই একমাত্র আলোচ্য বিষয় বলে তখন চর্চা শুরু হয়েছিল। ওই রাজ্যপালকে সরাতে রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। পরে দেখা গেল উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপির সমর্থনে প্রার্থী জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে ভোটই দিল না তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর তো ধনকড়ের সঙ্গে হাসি মুখে ছবিও দেখা গিয়েছে তৃণমূলের সাংসদ প্রতিনিধি দলের।
মনোনয়ন পর্ব মিটে যাওয়ার পর রাজ্যে এসেই কড়া বার্তা দিয়েছেন সি ভি আনন্দ বোস। গিয়েছেন ভাঙড়। খুলেছেন পিস রুম। পর্যবেক্ষক মহলের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকুক বা রাজ্য পুলিশ, পিস রুম খোলা হোক বা না হোক হিংসা মুক্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন দেখতে চায় রাজ্যবাসী। মনোনয়ন চলছে আর বোমার পর বোমা ফাটছে বিডিও অফিসের আশপাশে, বিডিও অফিস থেকে মেড়ে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, আর পুলিশ নির্বিকার, কোথাও আবার দেখাও মেলেনি উর্দিধারীদের। সবে স্ক্রটিনি পর্ব চলছে, এরই মধ্যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও প্রচার পর্ব, ভোট, গণনা, ফল ঘোষণা বাকি রয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, অবিলম্বে সমস্ত কচকচানি ছেড়ে অশান্তি বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের। কড়া হাতে মোকাবিলা না করলে কত মায়ের কোল খালি হবে সেটাই সব থেকে বড় আশঙ্কার।