Advertisment

'রাজীব কাণ্ডে' তোলপাড় সিবিআই, খবর ফাঁস করছে কে?

বিভিন্ন সময় সিবিআই-তে ডেপুটেশনে আসেন একাধিক রাজ্যের পুলিশকর্মীরা। তবে বিশেষ স্পর্শকাতর তদন্তের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্য থেকে ডেপুটেশনে আসা কর্মীদের অবহিত না করার রেওয়াজই রয়েছে। তাহলে কীভাবে ফাঁস হচ্ছে খবর?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mamata rajeev kumar vs cbi

মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না শেষে নগরপাল রাজীব কুমার, সঙ্গে ডিসি (সেন্ট্রাল) শুভঙ্কর সিনহা সরকার। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সর্ষের মধ্যেই কি ভূত? অতি পরিচিত এই প্রবচনই এই মুহূর্তে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর অন্দরে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সমন পাঠানো এবং তাঁর বাড়িতে হানা দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ার ঘটনাতে এই 'ভূতের' নাকি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, এমনটাই মনে করছেন দিল্লির লোধি রোডে সিবিআই সদর দফতরের বড় কর্তারা।

Advertisment

সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন, সংক্ষেপে সিবিআই। এই কেন্দ্রীয় সংস্থার উপরই দেশের যাবতীয় হাই-প্রোফাইল তদন্তের ভার ন্যস্ত হয়ে থাকে। কোনও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দায়িত্ব দিলে অথবা আদালত নির্দেশ দিলে তবেই তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই। ফলে, সার্বিকভাবে সিবিআই-এর গুরুত্ব অপরিসীম।

সংস্থার গুরুত্ব যেমন অনস্বীকার্য, তেমনই সংস্থাটির অন্দরে তদন্তের গতিপ্রকৃতির গোপনীয়তা রক্ষাও অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এই মুহূর্তে গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টির সামনেই ঝুলছে সবচেয়ে বড় জিজ্ঞাসা চিহ্ন। বিশেষ সূত্রের দাবি, "ফাঁস" হয়ে যাচ্ছে সিবিআই-এর গতিবিধি। সিবিআই কাকে সমন পাঠাতে চলেছে, সে কথা না কী সমন পৌঁছনোর আগেই পৌঁছে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রাপকের কানে। আর সেই মতোই নানা কায়দায় সমন এড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। শুধু সমনই নয়, নির্দিষ্ট একটি তদন্ত কোন খাতে বইছে, সে খবরও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে বলে দাবি।

আরও পড়ুন: দিল্লি গেলেন রাজীব কুমারের বাড়িতে হানা দেওয়া সিবিআই দলের প্রধান

রবিবার কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সরকারি বাসভবনে হঠাৎ হানা দেয় সিবিআই। সেখানে প্রায় তৎক্ষণাৎ পৌঁছে যান কলকাতা পুলিশের বড় কর্তারাও। এমনিতে নগরপালের বাড়ির সামনে সাধারণ পুলিশকর্মীদের প্রহরা থাকে। উচ্চপদস্থ কর্তারা থাকেন না। সেদিন সিবিআই-এর ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার তথাগত বর্ধনের নেতৃত্বাধীন তদন্তকারী দল লাউডন স্ট্রিটে পৌঁছতেই সেখানে এসে পড়েন কলকাতা পুলিশের বেশ কয়েকজন বড়কর্তা।

এরপর সেই রাতেই নগরপালের বাংলোয় আসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘক্ষণ বৈঠক সেরে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় মমতা জানান, ১৯ জানুয়ারি তাঁর ডাকে কলকাতায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতীয় স্তরের বিরোধী দলগুলির সভার দিনই কলকাতার সিবিআই অফিসারদের ডেকে পাঠান ভারপ্রাপ্ত সিবিআই অধিকর্তা এম. নাগেশ্বর রাও। মমতা সেদিন দাবি করেন, সব খবরই তাঁর কাছে রয়েছে। ফলে, সিবিআই-এর অন্তত কিছু খবর যে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন: হাজিরা দিতে চেয়ে সিবিআইকে চিঠি রাজীব কুমারের

বাস্তবিক দিক থেকে দেখলে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মতো ক্ষমতাশালী ব্যক্তির কাছে এই খবর থাকতেই পারে। আদর্শগতভাবে কিন্তু তা হওয়ার কথা নয়। সিবিআই-এর এক সূত্র মনে করছে, মমতা নাহয় রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে ক্ষমতার জোরে এই খবর পেয়েছেন, কিন্তু তিনি বা তাঁর মতো ব্যক্তিরা ছাড়াও অন্যান্য অনেকেই নাকি আগে থেকে খবর পেয়ে যাচ্ছেন। এমনিতে বিভিন্ন সময়ে সিবিআই-তে ডেপুটেশনে আসেন একাধিক রাজ্যের পুলিশকর্মীরা। তবে বিশেষ স্পর্শকাতর তদন্তের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্য থেকে ডেপুটেশনে আসা কর্মীদের অবহিত না করার রেওয়াজই রয়েছে। তাহলে কীভাবে ফাঁস হচ্ছে খবর?

আরও পড়ুন: সারদা কেলেঙ্কারি ও তৃণমূল সংযোগ

সিবিআই-এর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব প্রশ্নাতীত। সুপ্রিম কোর্টই অতীতে এই সংস্থাকে 'খাঁচায় বন্দি তোতাপাখি' আখ্যা দিয়েছে। ফলে, রাজনীতির চোরাগলি বেয়ে খবর ফাঁস হতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এর উপর, অলোক ভার্মা-রাকেশ আস্থানা পর্বে দীর্ঘ টালমাটাল চলেছে সংস্থায়। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অফিসার বদলি এবং পুনর্বহাল হয়েছেন পদে পদে। অন্তর্বর্তীকালীন ডাইরেক্টর এম. নাগেশ্বর রাওয়ের আমলেও রদবদল জারি থেকেছে। ফলে সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটিতে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন কর্মীরা। এর পাশাপাশি, ভোট এগিয়ে আসাতে রাজনৈতিক কারণে প্রত্যাশিতভাবে সিবিআই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ 'অস্ত্র' হয়ে উঠছে। আর এর ফলেই সিবিআই তদন্তকারীরাও 'ভরসার খোঁজে' রাজনৈতিক প্রভুদের আশ্রয় পেতে চাইছেন। এসবের ফলেই চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষার দিকটি।

CBI Vs Mamata cbi
Advertisment