Women's Day 2025 Special Story: লোকাল ট্রেন যেন 'আস্ত মন্দির', পেটের তাগিদে ফেরি করেই স্বপ্ন বুনছেন এমএ, বিএড বৃষ্টি

Women's Day 2025 Special Story : স্বামী চাকরি করতেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। হঠাৎ করেই স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ার পরই সংসারের হাল ধরতে ট্রেনে শাড়ি, কুর্তি, নাইটি ফেরি করতে শুরু করেন ভূগোলে মাস্টার্স, বি.এড করা বৃষ্টি।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
International Women's Day 2025 Special Story: লোকাল ট্রেনটাই যেন 'আস্ত মন্দির', পেটের তাগিদে এমএ, বিএড মেয়েটার লড়াইকে কুর্নিশ

লোকাল ট্রেনটাই যেন 'আস্ত মন্দির', পেটের তাগিদে এমএ, বিএড মেয়েটার লড়াইকে কুর্নিশ

International Women's Day 2025 Special Story: স্বামী চাকরি করতেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। হঠাৎ করেই স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ার পরই সংসারের হাল ধরতে ট্রেনে শাড়ি, কুর্তি, নাইটি ফেরি করতে শুরু করেন ভূগোলে মাস্টার্স, বি.এড করা বৃষ্টি। প্রথম দিকে লড়াইটা কঠিন মনে হলেও আজ লোকাল ট্রেনটাই যেন এক 'আস্ত মন্দির' বৃষ্টির কাছে। 

Advertisment

তীব্র গরম হোক অথবা প্রবল ঠান্ডা, কখনও বা মুষল ধারার বৃষ্টি, কখনই নিজের লক্ষ্য থেকে পিছু না হটে দাঁতে দাঁত চিপে সংসার চালানোর লড়াইয়ে ময়দানে  বাঁকুড়ার বৃষ্টি পাল। গোটা বছরই সংসার চালাতে ট্রেনে শাড়ি, কুর্তি ফেরি করে বেড়াচ্ছেন তিনি। বৃষ্টির এই লড়াই কাহিনী ইতিমধ্যেই বাংলা জুড়ে আলোড়ন ফেলেছে। 

বাঁকুড়ার সুপ্রিয়া পাল, তাঁকে অবশ্য সকলেই 'বৃষ্টি' নামেই চেনেন সকলে। নিজের লড়াইয়ের মাধ্যমে আর পাঁচটা মেয়েকে স্বাবলম্বী করতে নিজেই খুলেছেন 'বৃষ্টির লড়াই' নামে একটি ফেসবুক পেজ। আর তাতেই বৃষ্টির কঠিন জীবন জার্নির কাহিনী চোখে জল এনে দিতে বাধ্য।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সংসারের যাবতীয় কাজ সামলে হাতে দুটো ভারী ব্যাগ নিয়ে ছোটেন স্টেশনের দিকে। লক্ষ্য একটাই ট্রেনে ডেইলি প্যাসেঞ্জারদের  কাছে শাড়ি, কুর্তি, নাইটি বিক্রি। লোকাল ট্রেনে কামরায় হাসি মুখেই চলে বিক্রিবাট্টা। অফিস টাইম শেষ লোকাল বাসে ফেরি করেন বৃষ্টি। বিকেলে ফের ট্রেনে কেনা বেচার পর্ব শেষ করে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরেন তিনি। বাড়িতে স্বামী, সন্তান সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন তাঁর জন্য।

Advertisment

দু'চোখে নেই আলো, ছাপোষা ঘরের মেয়েটির অদম্য জেদ আর লড়াইয়ের কাহিনী শিহরণ জাগাবে

ভূগোলে মাস্টার্স করেও চাকরি না পেয়ে লোকাল ট্রেনে এভাবে শাড়ি বিক্রি করতে দেখে সমাজের অনেকেই তাঁকে কটু কথা বলতে ছাড়েননি। কিন্তু সে-সবে বিশেষ কান না দিয়ে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেন তিনি। আজ ধীরে ধীরে কিছুটা হলেও আর্থিক অনটন কেটেছে। সংসারের হাল ফিরলেও লোকাল ট্রেনের লড়াইটা কিন্তু আজও জারি রয়েছে তাঁর।

সামান্য এই উপার্জনের টাকা দিয়েই গ্রামে স্বামীকে একটা দোকানও করে দিয়েছেন তিনি। বৃষ্টি বিশ্বাস করেন সংসার চালানোর দায় একা কখনওই পুরুষের নয়। তাই তো স্বামীর কঠিন সময়ে শাড়ি, কুর্তি, সালোয়ার নিয়ে লোকাল ট্রেনের কামরায় বিক্রি করতে এক মুহূর্তের জন্যও ভাবেননি তিনি।

বৃষ্টি বলেন, 'বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি থেকেই মাস্টার্স সম্পূর্ণ করে ইচ্ছে ছিল একটা চাকরি করার। ইতিমধ্যেই বি.এডও করি। কিন্তু চাকরি জোটেনি। হঠাৎ করেই স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সংসারের জন্য কিছু করতেই হবে এই ভেবেই বেরিয়ে পড়ি শাড়ি, কুর্তি নিয়ে লোকাল ট্রেনে। প্রথম প্রথম চোখে জল আসলেও, ওসব এখন অতীত। আজ বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন আমার লড়াইয়ে পাশে থেকেছেন। আমার থেকে শাড়ি, পোশাক কিনে আমার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। লাখ মানুষের ভালবাসা আমি পেয়েছি। সেটা আমার কাছে সব চেয়ে বড় তৃপ্তি'।

সাধারণ ঘরের মেয়েদের কাছে বৃষ্টি আজ এক অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। নারী দিবসে সমাজের মেয়ের প্রতি বৃষ্টির বার্তা  ''আমি মেয়েদের বলতে চাই, জীবনে কোনও পরিস্থিতিতেই হাল ছাড়বে না। লড়াই চালিয়ে যাবে। সময়ও তোমার কাছে এসে মাথা নত করতে বাধ্য করবে"।

International Women’s Day