তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসে দলের সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। একদল ব্যাট ধরেছেন আদি তৃণমূলের হয়ে। কুণাল ঘোষ দিনভর সরাসরি দলের মমতাপন্থী নেতা ও মন্ত্রীদের তোপ দাগলেন। কেন দলের জন্মদিনেই বিতর্ক তুলে ধরা হল? তা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এটাও কি নয়া কৌশল তৃণমূলের?
এর আগের বছরগুলি তৃণমূলের জন্ম দিন নমো নমো করে কেটে গিয়েছে। পতাকা উত্তোলনে, রক্তদান শিবির, সামাজিক কাজকর্মে সীমাবদ্ধ থাকতো। এবার দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে বিতর্ক জুড়ে দিয়ে সারাক্ষণ প্রচারে থেকে গেল ঘাসফুল শিবির। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ফিরহাদ হাকিম, কুণাল ঘোষের বক্তব্য নিয়ে জোর চর্চা চলল রাজনৈতিক মহলে।
আরও পড়ুন- দিনভর জোর বিতর্ক, সন্ধ্যায় আচমকা মমতার বাড়িতে অভিষেক! কেন?
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদরা টিকিট পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় জারি হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগেই। বয়স বাড়লে প্রোডাক্টিভিটি কমে যাওয়ায়, দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই মন্তব্য করতেই বর্ষীয়ান সাংসদরা প্রমাদ গুনতে থাকেন। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সাংসদরা বলতে থাকেন, মমতা প্রার্থী করলে ভোটে লড়বেন। আজ আবার তিনি বলেছেন, মমতা না থাকলে বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে থাকবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রবীণরা মমতা বন্দনা করে কোনও ভাবে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে তুলোধোনা করেছেন কুণাল ঘোষ। লড়াইয়ের ময়দান থেকে অভিষেক পিছিয়ে যাবেন না, তা নিয়েই সুব্রত বক্সীকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন কুণাল। সাংগঠনিক প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। আক্রমণ করেছেন সুদীপ বন্দ্যেপাধ্যায়কে। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, কুণাল ঘোষ দলের প্রবীণ নেতাদের একের পর এক ছক্কা হাঁকাচ্ছেন। অভিষেকের হয়ে সরাসরি ব্যাট ধরেছেন। বলছেন, বাঘের বাচ্চার মতো লড়াই করছেন। ফিরহাদ হাকিম বলছেন, নতুনদের তৃণমূলের লড়াইয়ের ইতিহাস জানতে হবে। একদিনে দল ক্ষমতায় আসেনি বলেও প্রতিষ্ঠা দিবসে মন্তব্য করেছেন ফিরহাদ।
আরও পড়ুন- ‘আমার ধারণা উনি পিছবেন না’, বছরের শুরুতেই ‘নাছোড়’ অভিষেককে বার্তা মমতার ‘দূত’ সুব্রতর
রাজনৈতিক মহলের মতে, যত লোকসভা ভোট এগিয়ে আসছে তত নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতৃত্ব। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক কি শুধু নিজেকে ডায়মন্ড হারবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন? দলের যাঁরা একথা ভেবে উৎসাহিত হচ্ছেন তাঁদের হাসি আদৌ বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। নিজ কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছেন, ঘনিষ্ঠ মহলে এমন চর্চা চললেও এর আগে যখন ডায়মন্ড হারবার আসনে লড়াই করেছেন তখন দলের শীর্ষ পদে ছিলেন না অভিষেক।
মান-অভিমান, আদি-নব্য দ্বন্দ্ব, বিতর্ক, দলের কৌশল যাই হোক না কেন বছরের প্রথম দিন প্রচারে থাকল তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকি এখনও পর্যন্ত মমতা ও অভিষেক এবিষয়ে কোনও মন্তব্যও করেননি এদিন।
আরও পড়ুন- মমতা ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীদের বেলাগাম তোপ কুণালের, নিশানায় প্রবীণ তৃণমূল সাংসদও