Puri Jagannath Rath Yatra 2025: 'ভক্তদের মাঝে স্বয়ং ভগবান', পুরীতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা, ভক্তির জোয়ারে ভাসছে সৈকত নগরী
শুক্রবার থেকে শুরু হল ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শ্রী জগন্নাথ রথযাত্রা ২০২৫ (Lord Jagannath)। আজকের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে ভক্তদের মাঝে রথে চড়ে আসবেন স্বয়ং প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। পুরীর রাজপথে সেই মুহূর্ত চাক্ষুষ করতে ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ ভক্তের ঢল নেমেছে।
রথযাত্রা উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছে 'জগন্নাথ ধাম' পুরী। রথযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানান রীতিনীতি। প্রথমে রথকে স্নান করা হয়। ১০৮টি পাত্রের পবিত্র জল দিয়ে দেবতাদের স্নান করানো হয়। তারপর রথ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এতে পুরোহিতরা বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করে নতুন রথগুলিকে পবিত্র করেন। রথযাত্রা এই উৎসবের সবচেয়ে বিশেষ অংশ যেখানে হাজার হাজার ভক্ত ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার রথ গুন্ডিচা মন্দিরে টেনে নিয়ে যান। দেবতারা সেখানে নয় দিন অবস্থান করেন।
রথযাত্রার জন্য ১০,০০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওড়িশা পুলিশ জানিয়েছে যে প্রায় ১৫ লক্ষ ভক্তের ভিড় সামাল দেওয়ার দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্যামেরা এবং ড্রোন নজরদারি। শহরের নির্দিষ্ট স্থানে সাব-কন্ট্রোল রুমও স্থাপন করা হয়েছে। পহেলগাঁও কান্ডের পর এবারের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে এবার প্রথম এনএসজি কমান্ডো মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল, অ্যান্টি টেরর স্কোয়াড। থাকছে বিশেষ ড্রোন-বিরোধী ব্যবস্থাও। ওড়িশা পুলিশের সাথে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর (সিএপিএফ) আটটি কোম্পানিও মোতায়েন করা হয়েছে। মেরিন পুলিশ, ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং ভারতীয় নৌবাহিনী সমুদ্রসীমা পর্যবেক্ষণের জন্য একসাথে কাজ করছে। সমুদ্রের উপর চলছে কড়া নজরদারি।
মহাপ্রভু জগন্নাথের মহারথযাত্রা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে প্রচণ্ড উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ধারণা করা হচ্ছে এবার রথযাত্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি ভক্ত দর্শনের জন্য আসবেন। ভক্তদের এই বিশাল ভিড়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সুষ্ঠু যান চলাচলের ব্যবস্থা করা পুলিশ ও প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে রথযাত্রা আয়োজনের জন্য পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
মন্দিরের ভিতরে এবং বাইরের নিরাপত্তা, রথের ভেতরের এবং বাইরের, ভিড় নিয়ন্ত্রণ, যানজট, সমুদ্রপথের নিরাপত্তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। রথযাত্রার নিরাপত্তার জন্য ২১ জন আইপিএস এবং ১২০০ কর্মকর্তা মোতায়েন করা হবে। রথযাত্রার সময় ভক্তদের সকল স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষবা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। বিভিন্ন স্থানে ৬৯টি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ৬৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালে ৩৭৮ জন অতিরিক্ত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে । আইসিইউ এবং ২৬৫টি জরুরি শয্যার ব্যবস্থার পাশাপাশি, রাজ্যে ডায়রিয়ার সংক্রমণ রোধে সরকার সকল ব্যবস্থা করেছে। বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের জন্য ২০ লক্ষ জলের বোতল সরবরাহ করা হয়েছে। বিজেপি সাংসদ সম্বিত পাত্র বলেন, “আজ ঈশ্বর স্বয়ং ভক্তের মাঝে—এটাই সনাতন সংস্কৃতির সৌন্দর্য।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “মহাপ্রভুর আশীর্বাদে বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রগতিশীলতা বিরাজ করুক।”
রথযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ এবং বিস্ময়কর রীতি হল— 'সোনার ঝাড়ু' দিয়ে 'রথের পথ' পরিষ্কার করা। অনেকের মনেই প্রশ্ন, কেন এই ঝাড়ু সোনা দিয়ে তৈরি? এই রীতির এত গুরুত্বই বা কেন? সোনার ঝাড়ু আদতে আচার, আস্থা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। এই রীতি শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একাধিক আধ্যাত্মিক ও প্রতীকী অর্থ।
সোনা হিন্দুধর্মে অত্যন্ত পবিত্র ধাতু , সমৃদ্ধি ও ঈশ্বরত্বের প্রতীক, তাই রথযাত্রার পথে সোনার ঝাড়ু ব্যবহারের মাধ্যমে পথকে পবিত্র, দুর্ভাবনামুক্ত এবং দেবোপযোগী করে তোলা হয়। এই রীতি ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তির প্রকাশ। বিশ্বাস করা হয়, ঝাড়ু দ্বারা নেতিবাভচক শক্তি ও অশুভ প্রভাব দূর হয় এবং এতে সৃষ্টি হয় এক পবিত্র, ইতিবাচক পরিবেশ। এই প্রতীকী আচারটির মাধ্যমে বোঝানো হয়—ভগবানের সামনে সবাই সমান, রাজা বা সাধারণ ভক্তের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এই ঝাড়ু দিয়ে রথের চারপাশ ও পথ পরিষ্কার করার পর বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণে আধ্যাত্মিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যা রথযাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা চিহ্নিত করে।
এই ঝাড়ু সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পারেন না। পুরীর রাজপরিবার বা তাঁদের উত্তরাধিকারীরাই রথযাত্রার দিন ভগবানের রথের সামনে দাঁড়িয়ে সোনার ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করেন পথ। এই ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এবং এটি ভক্তি ও রাজধর্মের সংমিশ্রণ বলেই মনে করা হয়। এক পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, রথযাত্রার সময় ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা তাঁদের ভক্তদের ঘরের দরজায় আসেন। যদি সেই সময় ভক্ত বাড়িতে না থাকেন, তাহলে ভগবান দরজায় সোনার ঝাড়ু দিয়ে স্পর্শ করেন, যাতে বোঝা যায়, প্রভু এসেছিলেন, তাঁর আশীর্বাদ রেখে গিয়েছেন।