রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত চরমে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিধানসভায় পাস ও হওয়া বিলে সাক্ষর না করা, নানা ইস্যুতে নবান্নের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তাঁকে বিজেপির মুখপাত্র বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। রাজ্যপালের দাবি, তিনি মাথা নত না করে অবিচল থাকবেন সংবিধান রক্ষার কাজে। সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে সংসদেও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন রাজ্যের শাসকদলের সাংসদরা। কোথায় বিরোধ? তা জানতেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের মুখোমুখি ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেসের সহকারী সম্পাদক রাভিক ভট্টাচার্য।
প্রশ্ন: সিএএ-এর প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর পথে নেমে আন্দোলনকে আপনি কটাক্ষ করেছেন, কেন?
রাজ্যপালের উত্তর: আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও বিরোধিতা করিনি। বিরোধিতার নামে তাণ্ডব বন্ধ করতে তাঁকে আইনের শাসন বলবৎ করতে বলেছিলাম মাত্র। উনি সংবিধানের প্রতি শপথ করে মুখ্যমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালনের ভার নিয়েছেন। সংসদের পাস হওয়ার পর বৈধ আইনের বিরুদ্ধে কোনও মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে এই প্রতিবাদ করতে পারেন? আমি তা ভেবেই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি।
এছাডা় সিএএ বিরোধিতায় সরকারি কোষাগার খরচ করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এটা কী করা সম্ভব? আরও অবাকের বিষয় হল সেই বিজ্ঞাপনে মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই দেখা যাচ্ছে রাজ্য পুলিশের ডিজি, রাজ্য প্রশানের শীর্ষ আমলাদের। এটা বেআইনী কাজ। এটা পুলিশ ও প্রশাসনকে হীন বলে তুলে ধরা হচ্ছে।
সিএএ ভারতবাসীদের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। তাও উনি আন্দোলন করছেন। তৃণমূলের এক সাংসদ ও সাধারণ সম্পাদক আমাকে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নয়, তৃণমূল চেয়ারপার্সন হিসাবে মমতা রাস্তায় নেমে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। যা খুবই দুর্বল যুক্তি।
আরও পড়ুন: ‘রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে যান’, মমতাকে পরামর্শ অধীরের
প্রশ্ন: আচার্য হওয়া সত্ত্বেও আপনাকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ে সমাবর্তনে যোগ দিতে দেওয়া হল না। আমনার কনভয় ঘিরে বিক্ষোভ চলল। আপনাকে ফিরে আসতে বাধ্য হতে হল...
রাজ্যপালের উত্তর: কয়েকজন মানুষ পুরো প্রক্রিয়াটি কুক্ষিগত করে রেখেছে। ওই ঘটনার পিছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও রাজ্যসরকার হাত ছিল না তা মানা যাচ্ছে না। সরকার আচার্যের অধিকার খর্ব করতে মরিয়া। আপাতভাবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিরাই বিক্ষোবে সামনে আসছেন। পিছনে কলকাঠি নাড়ছে সরকার। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা বেশ হতাশার। আমাকে এর আগেও পাঁচটি রাজ্য পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের বিষয়ে কোনও কিছুই জানানো হয়নি। বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত শেষ মূহূর্তে বাতিল করা হয়েছে। রাজনীতির খাঁচায় ধরা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এই পরিস্থিতি পাল্টাতে হবে। পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমি, আচার্য হিসাবে উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকের ডাক দিয়েছি। শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি না করার জন্যও আমি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে আর্জি জানিয়েছি।
প্রশ্ন: সিএএ নিয়ে রাজ্য়ে চলা হিংসার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান নিয়ে আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
রাজ্যপালের উত্তর: ওনার সাংবিধানির দায়িত্ব কী? তা নিয়ে গত চার মাসে আমাকে সদুত্তর দিতে পারেননি উনি। সাংবিধানিক প্রধানকে দেওয়া ওনার একটি মাত্র চিঠি কার্যত উপহাসের সমান। উনি আমরা টুইটের বিরোধিতা করেছেন। সাংবিধানিক বৈঠকেও উনি কোনও কোনও কিছু স্পষ্ট করেননি। সবেতেই সত্যতাকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রয়াস।
আমি পেক্ষাপট বিচার করে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দি এবং তাঁকে একসঙ্গে কাজ করার আবেদন জানাই।
আরও পড়ুন: ‘আমাদের এখানে একজন ব্যাঁকা ও ন্যাকা লোক আছে!’ কাকে বললেন মমতা?
প্রশ্ন: রাজ্য সরকার আইনে করেছে, যার ফলে আচার্যকে বিশ্ববিদ্য়ালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সরকারকে মাধ্যম করতে হবে। এবিষয়ে কী বলবেন?
রাজ্যপালের উত্তর: যারা শিক্ষাক্ষেত্রে সঙ্গে যুক্ত ও সচেতন মানুষ তারা সবাই এতে হতচকিত। এটা শিক্ষা প্রশাসনকে পঙ্গু করে দেওয়ার প্রয়াস ছাডা় কিছুই নয়। আমি বিষয়টি দেখেছি। শিক্ষাবিদরা ক্ষুব্ধ, ইতিমধ্য়েই বেশ কয়েকজন উপাচার্য এই আইনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
প্রশ্ন: গত চার মাসে বিভিন্ন কারণে আপনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ১৮ বার মুখ খুলেছেন...
রাজ্যপালের উত্তর: রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের বিবাদ নিরবিচ্ছন্নভাবে মিডিয়াতে উঠে এসেছে। এটা বেদনার বিষয়। বহু ক্ষেত্রেই দেখান হয়েছে রাজ্যপাল ইচ্ছে করে সরকারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু, বাস্ত উল্টোটাই। রাজ্যের মন্ত্রীরা, সরকার আমার সঙ্গে কারণ ছাড়াই বিবাদে জড়িয়েছেন। আমি আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আশা করব তাতে সাড়া দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
Read the full story in English