বাদলের টানা গাড়িতেই বাংলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত জীবিকার সন্ধানে ঘুরে বেড়ান জালাল। নদিয়ার কৃষ্ণনগরের চাপড়ায় বাস বছর ৪৯-এর জালাল শেখের। সারা বছর তাঁকে সঙ্গ দেয় বাদল। সঙ্গী বাদলের গাড়িকেই রীতিমতো দোকান বানিয়ে ফেলেছেন জালাল। সঙ্গীর খরচ যোগাতে তাঁর কোনও কষ্ট নেই। তাছাড়া গাড়ির জ্বালানি খরচ তো আর লাগছে না। ঘর-সংসার ছেড়ে বছরের বেশিরভাগ সময় বাদলের গাড়িতেই কেটে যায় জালালের।
গত এক বছর এই নস্যি রঙের ঘোড়াই জীবন-জীবিকা বদলে দিয়েছে জালালের। জালালের কাছে সে রয়েছে চার বছর ধরে। দুর্গাপুজোর ক'টা দিন বাদলের গাড়ি-দোকানে বর্ধমানে রয়েছেন জালাল। ব্যথা-বেদনার মলম, আয়ুর্বেদিক ওষুধ-সহ নানা সামগ্রী পাওয়া যায় এই ঘোড়ার গাড়িতে। এতেই কোনওরকমে সংসার টেনে চলেছেন জালাল। পুজোতে বর্ধমান শহরে কাটিয়ে ফের পাড়ি দেবেন রাজ্যের অন্য কোনও জায়গায়। এভাবেই গত এক বছর ধরে রাজ্য চষে ফেলছেন জালাল। আগামী দিনও এভাবে চলবে বলে জানিয়েছেন জালাল।
জালাল বলেন, 'সাত সকালে বেরিয়ে পড়েছি। বাদলের শরীরটা খারাপ হয়েছে, তাই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। ওর শরীর তো ভাল রাখতেই হবে। বাদলের জন্য ভিটামিন টনিক নিতে হবে। অল্প বয়স থেকেই বাদল আমার সঙ্গে রয়েছে। এখন ওর বয়স চার বছর। যত্ন নিলে আরও ১৬ বছর সুস্থ থেকে বাদল আমার সঙ্গ দিতে পারবে। আমার প্রতিটি কথা শোনে বাদল। তবে ও দোকান-গাড়ি টানছে এক বছর ধরে। আমার ও বাদলের খরচ বাদ মিটিয়ে দিনে ৫০০ টাকা লাভ হয়। সংসারটা চলে যায়, আর কী! আগে পুরোপুরি কৃষিজমিতে কাজ করতাম। এছাড়া আমার নিজের ৫ বিঘে জমি রয়েছে কৃষ্ণনগরে। সেই জমিতে পাট, ধান, গম, ছোলা চাষ করে কিছু টাকা রোজগার হয়। বাদল আমার জীবিকা বদলে দিয়েছে।' কৃষ্ণনগরে এক ওস্তাদের কাছ থেকে ঘোড়াটি নিয়েছেন জালাল। 'ডিজেলের গাড়িতে খরচ অনেক, বরং ঘোড়ার গাড়ি মানুষজন বেশি পছন্দও করে,' বলেন জালাল।
আরও পড়ুন- দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনে দুর্ঘটনা, মাল নদীতে হড়পা বানে মৃত ৮, শোকপ্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর
জালালের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে। মেয়ে বড়, দশম শ্রেণিতে পড়ছে। বড় ছেলে অষ্টম শ্রেণি ও ছোট ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ব্যবসার কারণে জালালকে রাজ্যের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে হয়। জালাল বলেন, 'দুর্গাপুজোয় অনেক মানুষ বাইরে বের হন। আমি বর্ধমানে চলে এলাম। এখানে পাঁচ দিন রয়েছি। কাল আবার চলে যাব অন্য কোথাও। বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম নানা জেলাতেই আমি যাই।'