Jaynagar rape-murder case: জয়নগরে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় আরজি কর কাণ্ডের আবহেই উত্তাল হয়েছিল বাংলা। এবার সেই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া মুস্তাকিন সর্দারকে ফাঁসির সাজা শোনাল বারুইপুর আদালত। ঘটনার ৬৩ দিনের মধ্যে আসামীকে চরমতম শাস্তি দিল আদালত। বৃহস্পতিবার ওই মামলায় মূল অভিযুক্ত মুস্তাকিনকে দোষী সাব্যস্ত করেন ফাস্ট অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জাজেস কোর্টের বিচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। এরপর আজ, শুক্রবার রায়দান করেন তিনি। একইসঙ্গে, নির্যাতিতার পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায়দানের পর সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'নৃশংস এই ঘটনা অত্যন্ত বিরল। তাই আমরা ফাঁসির আবেদন করেছিলাম। বিচারক দোষীর ফাঁসির সাজাই দিয়েছেন। এই মামলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ডিএনএ প্রোফাইল মিলে গিয়েছে। ফলে সন্দেহের আর কোনও অবকাশই নেই।'
কী জানিয়েছে আদালত?
রায়দানের সময় আদালত পর্যবেক্ষণে বলে, 'একটি শিশু হচ্ছে ফুলের মত, সে যখন জন্মায় একটা পরিবার নয় সমাজকেও আলোকিত করে। এবং তার এভাবে চলে যাওয়াটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আপনারা জানেন, এই মামলা খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিচার শেষ হয়েছে। ৩৬ জন সাক্ষী ছিল। মার্টিন লুথার কিংয়ের একটি কোট উল্লেখ করব, 'injustice anywhere is a threat to justice everywhere'. আরও একটি কোট মনে পড়ছে, 'if you are nuetral in situation of injustice, you have chosen the side of oppressor'.
'এই ঘটনাকে একেবারে বিরলও বলা যাবে না, আবার বিরল নয় সেটাও বলা যাবে না। এধরনের ঘটনা সমাজে ঘটেই চলেছে। কখনও নির্ভয়া কখনও অভয়া কখনও দামিনী। কোথায় গিয়ে থামব জানি না। কিন্তু এ ধরনের মৃত্যু মিছিল থামানোর দায় আমাদের সবার আছে। প্রশাসন ও আইন বিভাগেরও আছে। মানুষ পুলিশ প্রশাসনের উপর আইনশৃঙ্খলা এবং তদন্তের জন্য ভরসা রাখে, আর বিচার পাওয়ার জন্য আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটির শরীরে বহু আঘাতের চিহ্ন ছিল। নির্মম যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। তারপর খুন করা হয়েছে। এরপরেও অভিযুক্তের মধ্যে কোনও অনুতাপ বা অনুশোচনা দেখা যায়নি। ঘটনার পর বাড়িতে গিয়ে নির্বিকার ভাবে ঘুমিয়ে পড়ে। এমনকি বিচার চলাকালীন তার মধ্যে কোনও অনুতাপ দেখা যায়নি। খুবই আশঙ্কার বিষয়। সমাজের law abiding citizen যাঁরা তাঁদের এই ধরনের মানুষের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে।'
আরও পড়ুন বিচার চেয়ে ফেসবুকে পেজ আরজি করে নির্যাতিতার মা-বাবার, রাজ্য তথা দেশবাসীকে বিশেষ ভিডিও বার্তা
এদিন রায়দানের সময় মুস্তাকিনকে বিচারক জিজ্ঞেস করেন তাঁর কিছু বলার আছে কি না। তখন মুস্তাকিন বলে, 'আমি এটা করিনি। আমি এই বিষয়টা জানতাম না। আমি ছাড়া বাবা মায়ের কেউ নেই। বাবা অসুস্থ। আমি ছাড়া কেউ দেখার নেই। যদি পারেন আমাকে মাফ করবেন। অভাবের কারণে আমি কাজ করতাম।' তাঁর আইনজীবী বলেন, 'বাবা অসুস্থ। বাড়িতে রোজগারের কেউ নেই। পড়াশুনা শেষ না করে কাজ শুরু করেন। বয়স কম। কোর্ট যদি ওর বয়স বিবেচনা করে আইনত ওকে শুধরে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। সংশোধনাগারে সুযোগ দেওয়া হোক সংশোধনের।'
সরকারি আইনজীবী কী জানান?
পাল্টা সরকারি কৌঁসুলি বলেন, 'ডেথ সেন্টেন্স চাই। যে যে ধারাতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তার মধ্যে চারটি ধারার সর্বোচ্চ ধারা মৃত্যু দণ্ড বা ফাঁসি। তাহলে কী ভাবে এই অভিযুক্ত বলছেন সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হোক! উনি যখন ২০ বছর এই সমাজে ঘুরে বেরোবেন যেখানে ভিকটিমের বাবা-মা থাকবেন। সমাজের সাধারণ মানুষ থাকবেন। আর এই সমাজে এই অভিযুক্ত সাজা শেষ করে বাইরে ঘুরে বেরোবেন! সমাজের এর প্রতিক্রিয়া কী হবে? এই নাবালিকা স্কুলে পড়ত। ক্লাসে প্রথম হত। ভারতবর্ষের একজন প্রতিভাবান নাগরিক হতে পারত। মেয়েটি ডাক্তার হতে পারত, উকিল হতে পারত। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। ফুলের মত জীবনকে মেরে ফেলা হল। শেষ করে দেওয়া হল।'
জয়নগরে কী ঘটনা ঘটেছিল?
গত ৪ অক্টোবর সন্ধেয় গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যায় নাবালিকা। মেয়ে বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি করেও পাননি পরিজনরা। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে যান তাঁরা। প্রথম পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ ওঠে। পরে গভীর রাতে জলাজমির মধ্যে মেয়েটির দেহ উদ্ধার হয়। রাতেই গ্রেফতার করা হয় মুস্তাকিনকে। পরেরদিন সকালে পুলিশ এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতা এলাকায় গেলে তাঁদের উপর হামলা হয়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশ ফাঁড়ি। প্রথমে খুনের মামলা দায়ের করে পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে পকসো আইন যুক্ত করে পুলিশ। ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে কঠোর শাস্তির আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার ২৬ দিন পর চার্জশিট পেশ করা হয়। ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয় ট্রায়াল। মোট ৩৬ জন সাক্ষ্য দেন। ৬৩ দিনের মাথায় সাজা ঘোষণা হল।