/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/05/jhuma-pandit-chaterjee.jpg)
নিজের হতের কাজ নিয়ে ঝুমা পণ্ডিত চট্টোপাধ্যায়।
এ এক অন্য লড়াইয়ের কাহিনী
স্বামীর হাতেই মুখ পুড়েছে। শরীর পুড়েছে ছোট্ট মেয়ের। শরীর নিয়ে জুঝেছেন টানা ৬ বছর। তবু জীবনযুদ্ধের লড়াই আটকানো যায়নি। হাতের কাজের ওপর ভর করেই মেয়েকে নিয়ে সংসারযুদ্ধে সামিল পূর্ব বর্ধমানের ভেদিয়ার ঝুমা পন্ডিত চট্টোপাধ্যায়।
২০০৮ সালে আউসগ্রামের ভেদিয়ার হাটতলার ঝুমার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল খাটালপাড়ার বিশ্বজিৎ পন্ডিতের। তখন ঝুমার বয়স ছিল মাত্র ১৫। ঝুমা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'একপ্রকার জোর করেই আমাকে বিয়ে করেছিল বিশ্বজিৎ। প্রতিমা গড়ার কাজ করতো সে। প্রথমে মেনে না নিলেও পরে বাড়ির লোকজন মেনে নেয়। একসময় জানতে পারি দাদুর সম্পত্তির ওপর লোভ করেই বিয়ে করে বিশ্বজিৎ। তারপর নানা বিষয় নিয়ে ঝঞ্ঝাট শুরু করে দেয়।'
কীভাবে সমস্যা সৃষ্টি হয়? ঝুমার কথায়, 'বিয়ের পর থেকেই নতুন নতুন বাহানা শুরু হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়িতে গেলেই মারধর করে। আবার বাবার বাড়িতে দিয়ে যায়। এভাবেই টানা ৩ বছর ধরে চলতে থাকে লাগামছাড়া অত্যাচার। শেষমেষ বাবা নতুন জায়গা কিনে ছিটে বেড়ার বাড়ি বানিয়ে দেয়। এবার স্বামী দাবি করতে থাকে ওই বাড়ি তাঁর বোনের নামে লিখে দিতে হবে। অশান্তি বাড়তেই থাকে। এবার শুরু করে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে। আমার মা-কে নানা কুকথা বলতে শুরু করে। এর কোনও প্রমান চাইতেই আরও রেগে যায়।'
ঘটনার দিনের কথা ভাবলে এখনও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায় ঝুমাকে। তিনি বলেন, ২০১২ সালের এপ্রিল। আমার ২ বছর ৫ মাসের মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। ভেদিয়া স্টেশন রোডে আমার ওপর অ্যাসিড ছোড়়ে বিশ্বজিৎ। আমার তখন মরণযন্ত্রনা। চারিদিক অন্ধকার দেখছি। মেয়ের গায়েও অ্যাসেডের ছ্যাঁকা লাগে। প্রথমে বোলপুরে সিয়ান হাসপাতালে, পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা না হওয়ায় বাড়ি নিয়ে আসে। অবস্থা খারাপ হতে থাকায় পরে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারপর ব্যাঙ্গালুরু। ২০১৮ সাল অবধি চিকিৎসা চলে। মুখে প্লাস্টিক সার্জারিও করা হয়েছে। এখন কাঁথা স্টিচের কাজ নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে কোনওরকমে সংসার চলছে।'
আক্রান্তের পর গ্রেফতারও হয়েছিল স্বামী। একদিকে অর্থ রোজগারে জন্য কাজ, অন্যদিকে আদালতে হাজির হওয়া। একেবারে নাজেহাল অবস্থা হয়ে গিয়েছিল ঝুমার। শরীরও রোজ সায় দিচ্ছিল না। সরকারি আইনজীবী ছাড়া আলাদা করে আইনজীবী দাঁড় করানোর মতো আর্থিক ক্ষমতাও ছিল না ঝুমার। তারওপর মেয়েকে বড় করে তোলার চ্যালেঞ্জ। শেষমেশ একপ্রকার বোঝাপড়ায় আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বছর তিরিশ-উর্দ্ধ ঝুমা।
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই পাড়ার বউদিদের কাঁথা স্টিচের কাজ দেখতেন ঝুমা। তখন ছিল শখের কাজ শেখা। প্রথম রোজগার ৯০টাকা। সেই শখের কাজ আজ জীবীকার অন্যতম মাধ্যম ঝুমার কাছে। সঙ্গে টেলারিংও শিখে নিয়েছে ঝুমা। বাংলার নানা মেলায় এখন ঝুমার হাতের কাজ অন্যদের সঙ্গে বিক্রি হয়। একমাত্র মেয়েকে পড়াশুনা শিখিয়ে নিজের পরিচয়ে মানুষের মতো মানুষ করাই ঝুমার জীবনের প্রধান লক্ষ্য। লড়াইয়ের সময় তাঁর প্রতিবেশি কাকিমা কল্পনা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। ঝুমা বলেন, 'এই কাকিমা আমার জীবনে আরেক মা। বিপদের দিনে যেভাবে কাকিমা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন সেই ঋণ কোনওদিন শোধ করতে পারব না। আমার জন্য ট্রেনে আঁচল পেতে লোকের কাছে সাহায্যও নিয়েছেন। এখন কাঁথা স্টিচ ও টেলারিংয়ের কাজ করছি। উৎকর্ষ বাংলার ট্রেনিং নিয়েছি।' সরকারি স্কুলের ড্রেসের কাজ পেলে আর একটু সুবিধা হবে বলে ঝুমা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন-ডাক্তার হতে চায় সারিফা, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন হাই মাদ্রাসা টপারের