Advertisment

জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের হাড়হিম করা নীল নকশা: অর্ডার দেওয়া চপার দিয়ে নিপুণভাবে খুন, গামছায় মোছা রক্ত!

প্রমাণ মুছতে নিজের সঙ্গে থাকা গামছা দিয়ে হাত এবং ইনস্যুরেন্সের বইটি মুছে নেয় সে। এরপর বাইরের দরজার আওয়াজ শুনে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় উৎপল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
murshidabad triple murder, father, mother, son

দোকান থেকে কেনা হাঁসুয়া নয়, রীতিমতো অর্ডার দেওয়া 'বিশেষ চপার' দিয়েই বন্ধুপ্রকাশ পাল ও তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে খুন করেছে সে, জিয়াগঞ্জে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার অভিযুক্ত যুবক উৎপল বেহেরাকে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই নৃশংস খুনের 'পিছনে' নবম শ্রেণী পাশ, পেশায় রাজমিস্ত্রি উৎপল বেহেরার পরিকল্পনা জেনে চমকে যাচ্ছেন পুলিশকর্তারা। টানা এক সপ্তাহব্যাপী ম্যারাথন জেরার পর খুনের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রের 'আসল পরিচয়' পুলিশকে জানায় উৎপল, এমনটাই খবর। পুলিশ সূত্রে খবর, সপরিবার বন্ধুপ্রকাশকে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র কোনও সাধারণ দোকান থেকে কেনা হাঁসুয়া কিংবা ধারালো অস্ত্র নয়। বরং রীতিমতো পরিকল্পনামাফিক তা বিশেষ অর্ডার দিয়ে ন'শো টাকার বিনিময়ে বানানো হয়েছিল। জানা যাচ্ছে, এই চপারটি তৈরি করেছে সাগরদীঘির সাহাপুরের বাসিন্দা উৎপলের পরিচিত এক কামার।

Advertisment

আরও পড়ুন- জামিনের পরেই হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুললেন কংগ্রেস নেতা সন্ময়

উৎপলকে জেরা করে মেলা তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে ইতিমধ্যে সাগরদীঘির ওই কামারের ডেরায় যায় পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে এই তথ্যর সত্যতা স্বীকারও করে নেন ওই কামার। যদিও তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এখনই ওই কর্মকারের নাম প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না।

publive-image জেরায় খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রের কথা স্বীকার উৎপলের, খবর পুলিশ সূত্রের। ছবি- পরাগ মজুমদার

প্রসঙ্গত, দুর্গাপুজো চলাকালীন দশমীর দিন শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল ও তাঁর পরিবারকে খুন করা হয়। এর সাত দিনের মাথায় সাগরদীঘি থানার সাহাপুরের বাসিন্দা উৎপল বেহারেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জেরায় পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে উৎপল। কিন্তু পুলিশের ম্যারাথন জেরায় শেষমেশ ভেঙে পড়ে উৎপল। এরপরই পুলিশের কাছে ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে খুনের দিনের ঘটনা পরম্পরা।

ঠিক কী ঘটেছিল খুনের দিন?

পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের দিন ঠিক কী হয়েছিল তাঁর সঠিক চিত্র পেতে অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিদের মাঝে বসিয়ে জেরা করা হয় উৎপল বেহেরাকে। পুলিশ জানায়, এই জেরার মাঝেই উৎপল বেহেরা স্বীকার করে যে দশমীর রাতে বন্ধু প্রকাশের বাড়ি যান তিনি। এরপর দরজা খোলার পর বন্ধু প্রকাশ তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ঘরের বিছানায় বসতে গেলে সেই মুহূর্তেই চপারের কোপ বসায় গৃহস্থের গলায় সে। একই কায়দায় পাশের ঘরে বন্ধুর স্ত্রী বিউটিকেও গলায় কোপ মেরে খুন করে সে। এরপর খুন করে তাঁদের ছ'বছরের সন্তান অঙ্গন পালকেও। পরবর্তীতে বিউটি দেবীর ঘরে ঢুকে তাঁকে বিছানার চাদর দিয়ে দিয়ে মৃতদেহ মুড়ে ফেলে অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করে সে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই কাজ করার সময় হাতে রক্ত লাগে উৎপলের। তাই প্রমাণ মুছতে নিজের সঙ্গে থাকা গামছা দিয়ে হাত এবং ইনস্যুরেন্সের বইটি মুছে নেয় সে। ইতিমধ্যে বাইরের দরজার আওয়াজ শুনে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় উৎপল। তড়িঘড়ি করায় সঙ্গে থাকা ব্যাগ আর নিয়ে যেতে পারেনি উৎপল। পুলিশ জানায়, ওই ব্যাগ থেকেই রক্ত মোছা গামছা এবং ইনসুরেন্সের বই ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাঁরা।

publive-image জিয়াগঞ্জ হত্যাকান্ড। অলঙ্করণ- অভিজিৎ বিশ্বাস।

আরও পড়ুন- জল নয়, কল থেকে বেরোচ্ছে আগুন! অবাক কাণ্ড দেগঙ্গায়

সূত্রের খবর, সাগরদীঘি থেকে ট্রেনে করে আজিমগঞ্জ নেমে সদর ঘাট হয়ে লেবুবাগান এসেছিলেন উৎপল। সি সি টিভির ফুটেজ থেকে সে প্রমাণ পুলিশ আগেই জানতে পারে। উচ্চপদস্থ এক পুলিশ কর্তা বলেন , “উৎপলের দেওয়া বিবরণ থেকে জানতে পারা গিয়েছে, খুনের পর খুনের চিহ্ন লোপাট করতে চেয়েছিল সে। কিন্তু এর আগেই দুধ ওয়ালার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে আর সেই ঝুঁকি নিতে পারেনি সে। তাছাড়া মৃত বন্ধুপ্রকাশের মোবাইলে ওই সময় ফোন আসতেই পালিয়ে যায়।" বিজয়া দশমীর সকালে থালা ভর্তি পান্তা ভাত খেয়ে লেবুবাগানের উদ্দেশ্যে রওনা হয় সে, জেরার মুখে এমন কথা স্বীকার করেছে উৎপল, দাবি পুলিশ সূত্রের। মুর্শিদাবাদ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকার বলেন, "তথ্য সংগ্রহ করে ক্রমাগত পর্যায়ক্রমিক ভাবে বিশ্লেষণ চলছে। দ্রুত এই ঘটনার পুন:নির্মান করা হবে। তদন্তের স্বার্থে এর থেকে বেশি এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়"।

Murshidabad Murder
Advertisment