Advertisment

জিয়াগঞ্জকাণ্ডে অভিযুক্তের পক্ষে দাঁড়ালেন না কোনও আইনজীবী

“শুনেছি উৎপল ধরা পড়েছে। ও আমার প্রতিবেশি এবং একসময়ের ছাত্রও। সামান্য কিছু টাকার জন্য ও আমাদের এত বড় ক্ষতি করে দিল। ওকে এমন সাজা দেওয়া হোক, আজ আমি যে কষ্ট পাচ্ছি, তেমনভাবে ওর পরিবার যেন কষ্ট পায়।”

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

মামলার নির্দেশ জানতে আদালত চত্বরে ছিল ভিড়। ছবি- পরাগ মজুমদার

জিয়াগঞ্জ ট্রিপল মার্ডার কাণ্ডে মঙ্গলবার গ্রেফতার হওয়া উৎপল বেহেরাকে নিয়ে দিনভর লালবাগ মহকুমা আদালত চত্বরে একাধিক নাটকীয় ঘটনার সৃষ্টি হয়। খবর চাউর হতেই আদালতে উৎসুক মানুষের ভিড় যেমন উপচে পড়ে, তেমনি বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবী মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। কঠোর নিরাপত্তার বলয়ের মধ্যে নীল রঙের তোয়ালে দিয়ে মুখ ঢেকে লালবাগ এসিজেএম আদালতের বিচারক সুপর্ণা রায়ের এজলাসে তোলা হয় উৎপলকে। উটকো উত্তেজনার কথা ভেবে পুলিশ অপরাধীর ধারেকাছে ভিড়তে দেয়নি সাধারণ মানুষকে। তার বিরুদ্ধে ৩০২ ও ২০১ ধারায় খুন ও খুনের চিহ্ন লোপাট করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Advertisment

এদিন অপরাধীর পক্ষে কোনও আইনজীবী মামলা লড়েন নি। এই ব্যাপারে লালবাগ শ্যামাসুন্দরী বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আইনজীবী বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করি। আজ এই হত্যাকাণ্ডের অপরাধীর হয়ে যাতে কেউ মামলা না লড়েন, বারের আইনজীবিদের কাছে সেই আবেদন রেখেছিলাম। আমার বন্ধুরা সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন।" ফলত অভিযুক্তের পক্ষে কার্যত সওয়াল ছাড়াই ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়েছিল পুলিশ। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন।

এদিকে এদিন জিয়াগঞ্জের ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা ধৃতের দিদি জিয়াগঞ্জ কানাইগঞ্জের বাসিন্দা শ্রাবণী সরকারের বাড়িতে হামলা চালায়। আতঙ্কে অসুস্থ শ্রাবণী দেবীকে জিয়াগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, “খুনের আগের দিন উৎপল এই বাড়িতে এসেছিল। তাই আমরা ঠিক করেছি এই রকম অপরাধীর কোনও আত্মীয় পরিজনদের আমরা আমাদের পাড়ায় থাকতে দেব না। এই ব্যাপারে আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলতেও রাজি। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত থেকে এক পা নড়ব না।”

আরও পড়ুন: জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ড: বন্ধুর ‘অভিশপ্ত বাড়ির’ দিকে তাকাচ্ছেন না আতঙ্কিত প্রতিবেশীরা

জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা চিকিৎসক রাজকুমার সাহার বক্তব্য, “পুলিশ অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে। এবার এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত। তাহলেই মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর হবে।” এদিকে অপরাধীকে পুলিশি হেফাজতে পেয়ে জেলার পুলিশ সুপার জানান, “দু-এক দিনের মধ্যেই অপরাধীকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে।" অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং টাকার লোভেই খুন হয়ে যেতে হলো ওই শিক্ষক এবং তাঁর পরিবারকে, এমন মন্তব্যও করেন জেলার পুলিশ সুপার।

অভিযুক্তের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন লালবাগ মহকুমা আদালতের বিচারক সুপর্ণা রায়। এদিন লেবুবাগানের বাড়িতেই ছিলেন বন্ধুপ্রকাশের মা মায়ারানী পাল। মায়ারানী দেবী বলেন, “শুনেছি উৎপল ধরা পড়েছে। ও আমার প্রতিবেশি, এবং একসময়ের ছাত্রও। সামান্য কিছু টাকার জন্য ও আমাদের এত বড় ক্ষতি করে দিল। ওকে এমন সাজা দেওয়া হোক, আজ আমি যে কষ্ট পাচ্ছি, তেমনভাবে ওর পরিবার যেন কষ্ট পায়।” মায়ারানী দেবীর দাবি, "ও একা এই কাজ করেনি। এর সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারে।"

অন্যদিকে অভিযুক্তের বাবা মাধব বেহেরার পাল্টা অভিযোগ, "আমার ছেলে ঘটনার দিন, অর্থাৎ বিজয়া দশমীর দিন, বাড়িতেই ছিল। ঘটনার পিছনে আসল রহস্যকে চাপা দিতেই আমার ছেলেকে ফাঁসানো হল। এর বেশি কিছু বলার নেই।"

Murder Murshidabad
Advertisment