Kali temple being built in Jagatpur Mahishadal on the model of Akshardham temple: প্রায় ৫ কোটি ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন এক মন্দির। যা সাধারনের জন্য খুলে দেওয়া হবে বাংলার নতুন বছরের শুরুতেই। এখন চলছে শেষ মুহুর্তের কাজ। ঐতিহ্য, পুরাণ কথা ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে গড়ে উঠছে সুবিশাল এই মন্দির। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের জগৎপুরের কালী মন্দির (Kali Mandir)। স্থানীয় আর্কিটেক্ট, শিল্পীদের ভাবনা ও তাঁদেরই ছোঁয়ায় এই মন্দির হয়ে উঠেছে প্রাচীন মন্দির শৈলীর নবতম সাংস্করণ। সবুজে ঘেরা গ্রামীণ পরিবেশে মন্দিরের অসাধারণ নির্মানকাজ সকলকে মুগ্ধ করবেই।
মহিষাদলের জগৎপুরের ঐতিহ্যবাহী রক্ষাকালী পুজো প্রায় ১৭৬ বছরের পুরনো। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে কালীপুজোয় কাতারে-কাতারে ভক্তের সমাগম হয় এই পুজোয়। কথিত আছে, জমিদার রামকান্ত মিশ্র জগৎপুরে থাকতেন। কলেরা, বসন্ত রোগের মহামারি ঠেকাতে রামকান্তের চিকিৎসক পুত্র কৈলাস মিশ্র রোগ সারানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে তিনি সফল হননি। পরে এলাকার শ্মশানের পাশে অস্থায়ী মন্দির তৈরি করে কালীপুজো শুরু হয়। প্রথমে হোগলার মন্দির, পরে বাঁশ, মাটি দিয়ে তৈরি হয় মন্দির। বর্তমানে কংক্রিটের সুবিশাল মন্দির তৈরি হচ্ছে। নবনির্মিত মন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে জোরদার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে গ্রামজুড়ে।
মহিষাদলের বেতকুন্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতের জগৎপুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গ্রাম হিসেবে বহুদিন থেকেই পরিচিত। কালীপুজোয় (Kali Puja) সব ধর্মের মানুষের মিলনভূমি হয়ে ওঠে জগৎপুর। মন্দিরের পুজোয় হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, এমনটাই মন্দির কমিটির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। দিল্লির অক্ষরধাম মন্দিরের (Akshardham mandir) আদলে তৈরি হয়েছে নতুন এই মন্দির। 'মিনি অক্ষরধাম' নামে ইতিমধ্যে পরিচিত হয়ে উঠেছে জগৎপুরের নব নির্মিত এই কালী মন্দির। ১৮৫৫ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহ এবং ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সমসাময়িক জগৎপুরে রক্ষাকালীর পুজো শুরু হয়।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live:জ্বলন্ত খড়ের গাদা থেকে মহিলার অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার, তুমুল চাঞ্চল্য এলাকায়
উৎসব কমিটির সভাপতি তথা এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ভক্তিপদ পালই বলেন, "ব্রিটিশদের শোষণ ও অত্যাচারের জেরে গ্রামের আর্থ সামাজিক অবস্থা ভেঙে পড়েছিল। কথিত আছে, শেষমেশ জমিদার রামকান্ত মিশ্র ও তাঁর মৃত্যুর পর তার ছেলে কৈলাস মিশ্র গ্রামবাসীদের রক্ষা করতে বৈশাখ মাসের সাবিত্রী চতুদর্শী তিথিতে শ্মশানের পাশেই রক্ষাকালীর আরাধনা শুরু করেন। সেই থেকে যুগ যুগ ধরে পুজো হয়ে আসছে।"
আরও পড়ুন- Deucha Pachami: 'ভিটে-মাটি ছাড়ব না', ফের দেউচা-পাঁচামি কয়লা খনির কাজ বন্ধ করল আদিবাসীরা
গ্রাম কমিটির সম্পাদক কমলকান্ত অধিকারী বলেন, "প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মন্দিরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কালীমূর্তির পাশাপাশি শিব ও দেবী শীতলার মুর্তিও পুজো হবে। একসময় সাবিত্রী চতুদর্শীতে পুজো হতো। বর্তমানে নৃসিংহ চতুদর্শীতে পুজো হয়। এতদিন তিন দিনের পুজো হতো, এবছর নতুন মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে এক সপ্তাহ ধরে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। আগামী ২৭ বৈশাখ নৃসিংহ চতুর্দশীতে মন্দিরের উদ্বোধন হবে।"
শিল্পী মোহনলাল মান্না এবং ভাস্কর শান্তনু মণ্ডলের যৌথ প্রয়াসে মন্দির ভাস্কর্য্য ফুটে উঠছে। ৮০ ফুট উচ্চতার মন্দিরের দেওয়ালে ৫১ সতীপীঠের দেবী মূর্তিগুলি ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পীরা। শিল্পী শান্তনু মণ্ডলের কথায়, "৮ বছর ধরে কংক্রিটের নির্মাণ করতে সময় লাগে, গত ৪ বছর ৪ জন শিল্পী নিয়ে মন্দিরে ৫১ সতীন্নীঠের দেবী মূর্তিগুলি মন্দি ফুটিয়ে তোলার কাজ করি। কাজ প্রায় শেষের পথে। শেষ তুলির টানের কাজ চলছে।"
আরও পড়ুন- Kolkata Weather Today: ফের কমতে পারে তাপমাত্রা, একাধিক জেলায় ঝেঁপে বৃষ্টির সম্ভাবনা
কীভাবে যাবেন এই মন্দিরে? হলদিয়া-মেচেদার রাজ্য সড়কের উপর থাকা মহিষাদলের দ্বাড়িবেড়িয়া শিবন্দির বাস স্ট্যান্ডে যেতে হবে। সেখান থেকে উত্তর দিক ধরে গেলে ১৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন এই মন্দিরে।মন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে গ্রামবাসীদের মধ্যে উন্মাদনা শুরু হয়েছে। মন্দির নির্মাণের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ মুক্ত হস্তে দান করে চলেছেন।