সময়ের পরতে পরতে কালিয়াচক খুনের ঘটনার তদন্ত নয়া মোড় নিচ্ছে। ধৃত আসিফ মহম্মদকে জেরায় উঠে আসছে একের পর এক শিউড়ে ওঠার মতো তথ্য। জেরায় দুই বন্ধুর কথা জানিয়েছে সে। সাবির আলি ও মাফুজ শেখের বাড়িতে শনিবার রাতেই হানা দেয় পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে ৫টি ৭এমএম পিস্তল, ৮৪ রাউন্ড গুলি ও ১০টি ম্যাগাজিন। এই দুই তরণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এইসব অস্ত্র নিয়ে তারা কি করতো তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি খুনের ঘটনায় আসিফের সঙ্গে এই দু'জনের কি সম্পর্ক তারও অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আরও সন্দেহভাজন ১৫ জনের খোঁজ চালানো হচ্ছে।
এদিকে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, বছর ১৯-র আসিফ মাধ্যমিকের পর টানা দু'বছর বাড়িতে ছিলো না। তখন সে কোথায় ছিলো? কাদের সঙ্গে মেলামেশা করেছে? আপাতত তারই হদিশ পেতে মরিয়া পুলিশ প্রশাসন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে খুব দূরে নয় কালিয়াচক। তাই আসিফ ও তার বন্ধুদের কোনও আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের যোগ রয়েছে কিনা তা দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- Malda: কালিয়াচকে নারকীয় হত্যালীলার নেপথ্যে কি মমি তৈরির গবেষণা?
পুলিশ সূত্রে খবর, যে কায়দায় ঠান্ডা পানীয়র সঙ্গে মাদক মিশিয়ে বাবা-মা সহ বাড়ির চার সদস্যকে অচৈতন্য করে নৃশংসভাবে খুন করেছে আসিফ, তাতে পেশাদার অপরাধীদের নিখুঁত পরিকল্পনার ছাপ ধরা পড়েছে। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তাই ঘটনার গভীরে পৌঁছতে চাইছে পুলিশ। শনিবারই আসিফ কবুল করেছে যে, দেহগুলি গুদাম ঘরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাতে গ্রামবাসীরা জানতে না পারেন, তার জন্য ১২ ফুটের একটি সুড়ঙ্গ কাটা হয়েছিল। ওই সুরঙ্গ পথেই ঘর থেকে গুদামে দেহগুলো সরানো হয়। পরে ওই গর্ত ঢালাই করে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ প্রমাণ লোপাটের যাবতীয় মরিয়া চেষ্টা করেছিল সে।
আরও পড়ুন- পানীয়ে মাদক মিশিয়ে খুন, ঘরেই সুড়ঙ্গ, কালিয়াচক খুনে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য
ছোট ল্যাব বানিয়ে কাজ করতো আসিফ। গত চারমাস ধরে বাড়িটিকে দুর্গে পরিণত করেছিল সে। সম্ভবত মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ১৮ বছরের তরুণ ঘরে বসেই মৃতদেহ সংরক্ষণের গবেষণা করছিলো কিনা তাও নজরে রয়েছে পুলিশের। কেমিকেল, কফিনের সাজসরঞ্জাম সবই ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার করে সংগ্রহ করেছিল। ঘটনার পর্যায়ক্রম, আসিফ ও রাহুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের অনুমান, সম্ভবত মমি তৈরির গবেষণা মাথায় চড়েছিল ওই তরুণের।
গত চারমাস ধরে আসিফের আচরণে সন্দেহ দানা বাঁধে। দাদা অভিযোগ করে থানায়। শেষপর্যন্ত বাড়ির জলের ট্যাঙ্ক থেকে পরিবারের চারজনেরই মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে আসিফ ও তার বন্ধুরা নিজেরাই নিজেদের অপহরণ করে আসিফের বাবার থেকে আড়াই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছিল। সাইবার জালিয়াতি, অপহরণের জন্যেও আসিফকে আটক করেছিল পুলিশ। হ্যাকারদের সঙ্গেও আসিফের যোগ খুঁজে পেয়েছে তদন্তকারীরা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন