বিশ্বমঞ্চে পারফর্ম করে ইতিহাস গড়ল বাংলার স্কুল। তৈরি হল এক ইতিহাসের। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক ব্যান্ডের কার্নিভাল ‘বাসেল ট্যাটু’তে পারফর্ম করল কালিম্পংয়ের কুমুদিনী হোমস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্ররা।
বছর ১৭ এর শুভম ছেত্রীর কথায়, “এখনও স্বপ্নের মত লাগছে। বিদেশের মাটিতে পারফর্ম করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পেরে আমি গর্বিত”। শুভমের বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি। বিশ্বমঞ্চে পারফর্ম করা ছেলের কৃতিত্বে রীতিমত গর্বিত বাবাও।
তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “ আমরা গরীব মানুষ। এটা খুবই গর্বের বিষয় যে আমার ছেলে সুইজারল্যান্ডে পারফর্ম করছে। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় থেকেই ছেলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বিদেশে যাওয়ার জন্য ওকে একটা ট্রলি ব্যাগ কিনে দিতে হয়েছিল এবং কিছু নগদও দিতে হয়েছে। আমার গ্রামের প্রায় প্রতিটি শিশুই এর পর থেকে বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখতে চায়। সর্বোপরি, কে না সুইজারল্যান্ড দেখতে চাইবে?"
শুধু শুভম একা নয়। উচ্ছ্বসিত ব্যান্ডের ওপর এক সদস্য সাবিন রাই। তার কথায়, “ বিদেশের মাটিতে পৌঁছানোর আগের রাত ঘুমাতে পারিনি। একটা চাপা টেনশন কাজ করছিল। এটা আমাদের কাছে এক গর্বের মুহূর্ত। তবে পারফর্ম করার সময় বুঝতে পেরেছিলাম বিদেশের মাটিতে অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের গুণমান খুবই উন্নত। সেই তুলনায় আমাদের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করছে, সেখানে উপস্থিত সকলেই”।
আরও পড়ুন: <২১ জুলাই স্তব্ধ হতে পারে কলকাতা, বন্ধ থাকছে একাধিক নামী স্কুল>
১৫ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে এই কার্নিভ্যাল চলবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। ভারতের একমাত্র ব্যান্ড হিসাবে বাসেল ট্যাটুতে অংশ নিতে চলেছে কুমুদিনী হোমস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্ররা। স্কুলের পাইপ এবং ড্রাম ব্যান্ডটি ভারত থেকে প্রথম ব্যাসেল ট্যাটুতে পারফর্ম করার জন্য নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস রচনা করেছে, একটি দুর্দান্ত বার্ষিক সামরিক ইভেন্ট, যেখানে অভিজাত সামরিক এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক ব্যান্ড কার্নিভালে তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করবে। ট্যাটু হল মূলত মিউজিক্যাল পারফরম্যান্স বা অনুষ্ঠান যাতে মার্চিং ব্যান্ড এবং নির্ভুল ড্রিলস অন্তর্ভুক্ত থাকে।
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় স্কুলের শিক্ষক এবং ব্যান্ড প্রশিক্ষক প্রিয়দর্শি লামা,বলেন, “১৯৪০-এর দশকে চালু হওয়া কালিম্পং-এর প্রথম স্কুলগুলির মধ্যে পাইপ এবং ড্রামস ব্যান্ডে কুমুদিনী হোমস অন্যতম”।
১৯৪০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই ব্যান্ড তাদের পারফর্মে সকলের নজর কেড়েছে তারপর যন্ত্র এবং প্রশিক্ষকের অভাবে বেশ কিছুদিন এই ব্যান্ডটি বন্ধ থাকে। ২০১০ সাল থেকে এটি আবার চালু করা হয়”।
ফোনে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাথে কথা বলার সময়, লামা স্মরণ করেন কীভাবে তিনি ১২ বছর আগে কুমুদিনী হোমসে প্রশিক্ষণের কাজে নিযুক্ত হন। লামার কথায়, “এটা আমাদের সকলের জন্য একটি স্বপ্ন-সত্য মুহূর্ত। হঠাৎ করে, জীবন আমাদের অন্য দিকে নিয়ে গেছে! যারা এখানে বাসেল ট্যাটুতে পারফর্ম করেছেন তারা বিশ্বের সেরাদের মধ্যে একজন। আমাদের পুরো যাত্রা, থেকে বাসেল ট্যাটুতে পারফর্ম যেন একটা স্ক্রিপ্ট”।
সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “২০১৯ সালে আমন্ত্রণ পাওয়া সত্বেও কোভিডের কারণে আমরা সেখানে যেতে পারিনি। অবশেষে এই বছর আমরা দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তার সাহায্যে বিদেশের মাটিতে নিজেদের দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারলাম, আমরা বাসেল ট্যাটুতে সেরা তিনটি ব্যান্ডের মধ্যে একটি।
অ্যালেক্স লেপচা, যিনি গত বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, “স্কটল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত ব্যান্ডগুলির সঙ্গে একই মঞ্চে পারফর্ম করা একটা স্বপ্নের মত। এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। পারফরম্যান্সের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সকলেই সেই বিরল মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে নেটদুনিয়ায় ভিড় জমাচ্ছেন। কুমুদিনী হোমসের পড়ুয়াদের পারফরম্যান্স বিশ্বমঞ্চে ভারত তথা বাংলাকে এক অনন্য স্বীকৃতি প্রদান করেছে।