Offbeat Destinatios: সুযোগ পেলেই বেড়াতে যেতে মন চায় না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল। বাঙালির একটা বড় অংশের যেমন পছন্দ সমুদ্র তেমনই অন্য অংশটির মন টানে পাহাড়। ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির এই দ্বিতীয় অংশটির জন্যই আজকের এই প্রতিবেদন। মেরেকেটে দিন কয়েকের ছুটি ম্যানেজ করতে পারলেই ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতির নিজে হাতে সাজানো এবাংলারই অনিন্দ্যসুন্দর এক পাহাড়ি গ্রাম থেকে। একবার যে গাঁয়ে গেলে মন বাঁধা পড়বেই। অপূর্ব-অসাধারণ সবুজে সবুজ মায়ায় ভরা এপ্রান্তে রয়েছে অনাবিল আনন্দ-ভরপুর স্বস্তি। এই প্রতিবেদনেই সেই জায়গাটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানো হল।
নিরিবিলিতে কয়েকদিনের ছুটি কাটাতে হলে ঘুরে আসতে পারেন কালিম্পঙের (Kalimpong) সিলারিগাঁও (Sillery Gaon)থেকে। সবুজে ঘেরা কালিম্পং পাহাড়ের সেরা ঠিকানা বলতে পারেন এই সিলারিগাঁও-কে। পাহাড়ের ফাঁক বেয়ে নীচে বয়ে চলেছে তিস্তা (Teesta) নদীর জলস্রোত। সবুজে সাজানো এই ছোট্ট গ্রাম থেকে চোখ মেললেই দেখা মেলে সুন্দরী কাঞ্চনজঙ্ঘার (Kangchenjunga)। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬ হাজার ফুট উচ্চতায় রয়েছে পাহাড় কোলের এক চিলতে এই গ্রাম। চারিদিকে পাইন গাছের সারি দিয়ে যেন ঘেরা গোটা সিলারিগাঁও। অপূর্ব মনোমুগ্ধকর মায়াবী পরিবেশ নিমেষেই যেন ভুলিয়ে দেয় সব ক্লান্তি।
সিলারিগাঁওয়ে দাঁড়িয়ে চোখ যতদূর যায় দেখবেন শুধু সবুজ আর সবুজ। প্রতিদিন ভোরে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ মেজাজ মন রাঙিয়ে দেয়। পাহাড়ের দিকে চোখ মেললে দেখা মিলতে পারে রামধনু। এছাড়াও নাম না জানা পাখির দলের কিচিরমিচির এলাকায় অদ্ভুত এক মাদকতা এনে দেয়। পাহাড়ি এই গ্রাম জুড়ে রয়েছে চোখ জুড়িয়ে দেওয়া নাম না জানা হরেক রঙের ফুল। এই গ্রামের প্রায় প্রতিটি হোম স্টে কিংবা বাড়িতেই রংবেরঙের ফুল দেখতে পাবেন। এককথায় কোলাহলমুক্ত পরিবেশে দিন কয়েকের অবসর নিতে হলে উত্তরবঙ্গের এই পাহাড়ি গ্রামের জুড়ি মেলা ভার। ব্যস্ত জীবনের সব স্ট্রেস মুহূর্তে ভুলতে হলে বাংলার এই প্রান্ত সত্যিই অনবদ্য।
আরও পড়ুন- সবুজে সবুজ পাহাড়ি গ্রাম, অসাধারণ শোভা প্রকৃতির! পুজোর ছুটিতে যাবেন নাকি বাংলার এপ্রান্তে?
সিলারিগাঁওয়ে কী কী দেখবেন?
চাইলে এখান থেকেই একটি গাড়ি ভাড়া করে নিন। ঘুরে আসতে পারেন পেডং, রেসিং, আরিতার দিক থেকে। শতাব্দী প্রাচীন বৌদ্ধদের মনেস্ট্রি দেখতে পাবেন। এছাড়াও ১৮৮২ সালে ফদার অগাস্টিনের তৈরি ক্রস হিলও দেখে আসতে পারেন। ট্রেকিংয়ের শখ থাকলে চলে যেতে পারেন ইচ্ছেগাঁওয়ে। এছাড়াও ট্রেকিংয়ের জন্য যেতে পারেন তিনচুলায়। অথবা সিঙ্কোনা প্ল্যান্টেশনও ঘুরে দেখতে পারেন। সিলারিগাঁও থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে দামসাং দুর্গ। শোনা যায়, ১৬৯০ সালে এই দুর্গটি তৈরি করেছিলেন লেপচা রাজা। তবে ১৮৬৪ সালের যুদ্ধে সময় ব্রিটিশরা এই দুর্গ ধ্বংস করে দেয়। এখন শুধু সেই ধ্বংসাবশেষ কিছু পড়ে আছে।
আরও পড়ুন- মন্ত্রমুগ্ধ পরিবেশ হৃদয় জুড়োবেই! পুজোয় বেড়ানোর সেরা ঠিকানা বাংলার এই পাহাড়ি গ্রাম
কীভাবে যাবেন সিলারিগাঁওয়ে?
কলকাতার দিক থেকে গেলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে পৌঁছে যান নিউ জলপাইগুড়ি বা এনজেপি। বিমানে গেলে আপনাকে নামতে হবে শিলিগুড়ির বাগডোগরায়। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে কালিম্পঙের এই সিলারিগাঁয়ের দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটারের মতো। এনজেপি স্টেশন থেকেই গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন- এখানেতেই স্বর্গসুখ! সবুজে সাজানো পাহাড়ি গ্রাম! নিরিবিলি মায়াবী পরিবেশ হৃদয়ে ঝড় তুলবেই!
সিলারিগাঁওয়ে থাকবেন কোথায়?
এখানে থাকার জন্য একাধিক সুদৃশ্য হোম স্টে রয়েছে। সেগুলিতে থাকা-খাওয়া হিসেবে খরচ নেওয়া হয়। হোম স্টে-গুলির আতিথেয়তা ভোলার নয়। স্থানীয় লোকজনই সেগুলি পরিচালনা করেন। থাকা-খাওয়া হিসেবে জনপ্রতি ১২০০-১৪০০ টাকা নেওয়া হয়। তবে কোনও কোনও হোম স্টে-তে বাচ্চাদের জন্য আগে থেকে কথা বলে নিলে ভাড়া কম লাগতে পারে। এখানকার প্রতিটি হোম স্টের নজরকাড়া শোভা আপনার বেড়ানোর দিনগুলিকে যেন আরও বেশি প্রাণবন্ত করে তুলবে।
আরও পড়ুন- ভুলেই যাবেন দিঘা-পুরী! বাংলার এই সমুদ্রতটের অপরূপ শোভা লজ্জায় ফেলে সুন্দরী রমণীদের
সিলারিগাঁওয়ের কয়েকটি হোম স্টে-র ফোন নম্বর…
সিলারিগাঁও রিট্রিট- ৯৪৩৪০১২২০০
হেভেন ভ্যালি- ৯৯৩৩৩৯০৯৩৭
বনলতা হোম স্টে- ৯৭৩৩১৯৫৪৬১, ৯৫৬৩১০৫৫৬০
সি সিলারি- ৯৯০৩২৯৫৯২০
নির্মলা রিসর্ট- ৯৬৩৫০০৫৩১৮