কামদুনি ধর্ষণ-হত্যা কাণ্ডে হাইকোর্টের রায়ের পর ভেঙে পড়েছিলেন গ্রামবাসীরা। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের চার অভিযুক্তের বিধিনিষেধের নির্দেশের পর কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে গ্রামে। তবে এবারের দুর্গাপুজোতে মন নেই কামদুনির। গ্রামের দুর্গাপুজোও যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন। পুজোতে নতুন জামাকাপড়ও কেনা হয়নি মৌসুমী কয়ালদের।
১০ বছর ধরে কামদুনি কাণ্ডের বিচারের জন্য লড়াই করছেন গ্রামবাসীরা। এই আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত রয়েছেন মৌসুমী কয়াল। হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্ট না হয়ে দিল্লিও ছুটেছেন মৌসুমী-টুম্পা কয়ালরা। বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সৌসুমী কয়াল বলেন, '১০ বছর আগে সেদিন রাতের ঘটনা এখনও চোখের সামনে ভাসছে। সেই রাতে ওই স্পটেই ছিল গ্রামের লোকজন। কারও চোখের পাতা পড়েনি। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর পুলিশি তদন্তের গাফিলতির জন্যই হাইকোর্টে ছাড় পেয়েছে অভিযুক্ত চারজন। তবে সুপ্রিম কোর্টে আজ ওদের বেশ কিছু বিষয়ে বিধিনিষেধ জারি করেছে।'
দুর্গাপুজোয় আজ মহাপঞ্চমী। কলকাতা শহর আলোয় ঝলমল করছে। মহানগরের রাজপথে মানুষের ঢল। ঠিক তখনকামদুনিতে মা দুর্গা এলেও নিশুতি রাতের নিশ্তব্ধতা। শারদ উৎসবের আনন্দের ছিঁটেফোটাও নেই গ্রামে। মৌসুমী বলেন, 'এবার আমাদের দুর্গাপুজোয় মন খুব খারাপ। পুজোয় বাড়ির ছোট-বড় কারও নতুন পোষাক হয়নি। মনেও হয়নি নতুন পোষাক কিনতে হবে। গ্রামের বাইরে যাওয়ার তো কোনও ব্যাপারই নেই। কোনওরকমে পুজোর কটা দিন কেটে যাবে আর কি। দোষীদের সাজা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই থেকে সরে আসার কোনও প্রশ্নই নেই। হাইকোর্টের রায়ের পর মন ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের এদিনের নির্দেশের পর নতুন করে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।'
আরও পড়ুন- সুপ্রিম কোর্টে কামদুনি কাণ্ড: মুক্তিপ্রাপ্তদের একতরফা ছাড় নয়, জারি বিধি-নিষেধ
কামদুনির লড়াইতে রাজনীতির রং লাগাতে চান না মৌসুমী কয়ালরা। মৌসুমীর কথায়, 'দীর্ঘ আন্দোলনের মাঝে অনেক দলই প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা কোনও দলে যাইনি। আমাদের আন্দোলনেও অনেক দলের নেতৃত্ব এসেছে, কিন্তু দলের পতাকা ছাড়া। কামদুনি কাণ্ডের বিচার না হলে আমরা কোনও কিছু নিয়েই ভাবতে পারছি না। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবেও আমাদের মন ভাল নেই।'
সুপ্রিম কোর্ট এদিন নির্দেশ দিয়েছে কামদুনি কাণ্ডে মুক্তিপ্রাপ্ত আমিন, আমিনুর, ইমানুল ও ভোলানাথরা রাজারহাট পুলিশ স্টেশনের বাইরে যেতে পারবেন না। বাইরে গেলে ওসির লিখিত অনুমতি নিতে হবে। এছাড়াও একাধিক বিধিনিষেধ রয়েছে। আপাতত পুজোর মুখে এই টুকুই শান্তনা কামদুনির বাসিন্দাদের। তবে পুলিশি তদন্তেই যে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কেঁদেছে, মনে করছেন মৌসুমী কয়ালরা।