Kanchanjunga Express Accident: মৃত শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে শোকে পাথর এক মা। শিলিগুড়ির রাঙাপানি এলাকায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার এমন দৃশ্য দেখে রীতিমতো শিউরে উঠেছেন শিয়ালদহ গামী কাঞ্চনজঙ্ঘা ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী। যাঁরা সোমবার সন্ধ্যায় রীতিমতো বাসে করে শিলিগুড়ি থেকে মালদা টাউন স্টেশনে এসেছিলেন। তবে ওইসব যাত্রীরা রেলের ভূমিকা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দুর্ঘটনার প্রায় দেড় ঘন্টা পর রাঙাপানির ওই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রেল পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলে যাত্রীদের একাংশে অভিযোগ। তার আগেই আশেপাশের গ্রামবাসীরা এসে যাত্রীদের উদ্ধারকার্যে নেমে পড়েন।
এদিন সন্ধ্যায় মালদা টাউন স্টেশনের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে বসে এমনটাই জানালেন ত্রিপুরার আগরতলার বাসিন্দা সুমন সোম। পেশায় তিনি লরি চালক। এদিন আগরতলা থেকে কলকাতায় যাচ্ছিলেন ব্যক্তিগত কাজে। ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত এস - ফাইভ কামরায় ছিলেন ত্রিপুরার বাসিন্দা সুমনবাবু। তিনি বলেন, "সকাল তখন প্রায় ৮টা ২০ মিনিট। ট্রেনের কামরার বাথরুমের সামনে দাঁত মাজছিলাম। ধীরগতিতে ট্রেনটি চলছিল। হঠাৎ বিকট আওয়াজ ছিটকে পড়ি কামরার মধ্যে। এরপরই অসংখ্য মানুষের আর্ত চিৎকার। ট্রেন যে দুর্ঘটনা কবলে পড়েছে সেটা বুঝতে পেরে গেট থেকে লাফ দিয়ে জঙ্গলে গিয়ে পড়ি। সেই সময় মোবাইলটা হারিয়ে যায়। হতভম্ব হয়ে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে এদিক সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে দিই। কিছুটা পিছনে দিকে এগিয়ে যেতেই দেখি দেশলাই কাঠির মত চার-পাঁচটি ট্রেনের বগি একে অপরের মাথার উপর উঠে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চরম কান্নার রোল। চোখের সামনেই দেখতে পাই রক্তাক্ত এক শিশুকন্যাকে নিয়ে শোকে পাথর এক মা।"
তিনি আরও বলেন, "দুর্ঘটনাগ্রস্ত বগিগুলিতে কয়েকজন যাত্রী জখম অবস্থায় আটকে রয়েছে। তাঁদের উদ্ধার করছেন গ্রামবাসীরা। অনেকক্ষণ পরে রেল পুলিশ এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। রেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনওরকম সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। অবশেষে কিছুক্ষণ বসার পর মাথায় জল দিয়ে বাসে চেপে মালদা টাউন স্টেশনে এসে পৌঁছায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় বিকল্প কোন ট্রেন নেই। ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস মালদায় পৌঁছালেই ওই ট্রেনে যাত্রীদের যেতে হবে। পরে অবশ্য আমার সহযাত্রী কাছ থেকে মোবাইলে ফোন করে বাড়িতে সুরক্ষিত আছি বলেই খবর পাঠাই।"
ত্রিপুরার আরেক ব্যবসায়ী বাবলু ঘোষ বলেন, "কলকাতায় ব্যবসার কাজে যাচ্ছিলাম। এত বড় দুর্ঘটনা যে ঘটবে কল্পনায় করতে পারিনি। চোখের সামনে সব ওলট পালট হয়ে গিয়েছে। কী করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। যাত্রীদের উদ্ধার করব না নিজে বাঁচবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। নিজের ব্যাগপত্র যে কোথায় পড়েছে তখন মাথাতেই নেই। শুধু ভাবছি ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচেছি। আমার সংরক্ষিত এস - ফাইভ কামরাতে যে সিটে বসেছিলাম, দুর্ঘটনার আমার ঘাড়ের উপর আরও তিনজন যাত্রী পড়ে যায়। তাতে চোট পাই। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ সেখানে কোনওরকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। মালদা টাউন স্টেশনে ঢোকার আগেই প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েছি। সুস্থ আছি বলে মোবাইলে ফোন করে জানিয়েছিলাম। কিন্তু চোখের সামনে যে ভয়াবহ দুর্ঘটনা দেখলাম, তা মন থেকে কিভাবে মিটিয়ে ফেলব বুঝতে পারছি না। সারা শরীর কেঁপে যাচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "ট্রেন দুর্ঘটনায় যেসব যাত্রীরা বিভিন্ন যানবাহন করে মালদা টাউন স্টেশনে এসে পৌঁছেছেন, সেইসব যাত্রীদের তাঁদের গন্তব্যস্থলে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি রেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। ফলে কলকাতা যাব কী করে বুঝতে পারছি না। তবে মালদা রেল কর্তৃপক্ষ বলেছে রাতে ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রীদের যেতে হবে। কিন্তু আমাদের আতঙ্ক এতটাই রয়েছে যে ওই ট্রেনে আর উঠতে চাইছি না। কীভাবে কলকাতায় পৌঁছাব বুঝতে পারছি না।"
উল্লেখ্য, সোমবার সকালে রাঙাপানি এলাকায় শিয়ালদহ গামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেনের পিছন দিকে ধাক্কা মারে মালগাড়ি। তাতে পাঁচটি বগির চরম ক্ষতি হয়। অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন অনেকেই। তারপরেই বিভিন্ন স্টেশনে খোলা হয় যাত্রীদের নানান পরিষেবা দেওয়ার ক্যাম্প।