Katwa Student Death: বাঁশদ্রোণীর পর পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া উত্তাল হল ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা নিয়ে। পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার জনবিক্ষোভ আছড়ে পড়ে কাটোয়ার কোশিগ্রাম ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন। কয়েকশো পড়ুয়া ও উত্তেজিত জনতা স্কুলে ঢুকে প্রধান শিক্ষকের ঘরে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে উত্তেজিত জনতাকে কোনওরকমে সামাল দিলেও উত্তেজনা জিইয়ে থাকে। পরে পুলিশ ছাত্রমৃত্যুর দায়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করলে স্বাভাবিক হয় স্কুলের পরিস্থিতি। জেলা পুলিশ সুপার আমন দীপ জানিয়েছেন, ’ছাত্রের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ স্কুলের প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে’।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে ,১০ বছর বয়সী কাটোয়ার বাঁধপাড়া নিবাসী মৃত ছাত্রের নাম ইন্দ্রজিৎ মাঝি। কাটোয়ার কোশিগ্রাম ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে পঞ্চম শ্রেণিতে সে পড়ত। ছাত্রের বাবা কার্তিক মাঝি এদিন জানান, অন্যান্য দিনের মতো গত মঙ্গলবারও তাঁর ছেলে ইন্দ্রজিৎ স্কুলে গিয়েছিল। ওই দিন স্কুলের মাঠে ইন্দ্রজিৎ যখন খেলছিল তখন তার পায়ে কিছু একটা কামড়ে দেয়। জ্বালা যন্ত্রণা শুরু হলে ইন্দ্রজিৎ তার পায়ে কিছু কামড়ে দেওয়ার বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানায়।
কার্তিক বাবুর অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ ইন্দ্রজিৎকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পায়ে বরফ ঘষে দিয়ে ইন্দ্রজিৎকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ দায় সারে। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়তে গিয়ে ইন্দ্রজিৎ গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। দ্রুত তাকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। তখনই তিনি এবং তাঁর পরিবারের সকলে জানতে পারেন ইন্দ্রজিৎকে সাপে কামড়ে ছিল। বুধবার কাটোয়া হাসপাতালেই ইন্দ্রজিৎ মারা যায় বলে কার্তিক মাঝি জানিয়েছেন। ছেলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি বাবা কার্তিক মাঝি ও তাঁর পরিবার। স্কুলের গাফিলতিতেই ইন্দ্রজিতের মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। পাশাপাশি ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে তারা এদিন স্কুলে পৌছে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করেন।। সেই ঘেরাও বিক্ষোভে কয়েকশো উত্তেজিত জনতা-সহ ছাত্র ছাত্রীরাও সামিল হয়।
আরও পড়ুন প্রতিপদে বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে ঘট স্থাপন, রাঢ়বঙ্গে দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি!
বিক্ষোভ ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে স্কুল চত্বর। খবর পেয়ে কাটোয়া থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী স্কুলে পৌছে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে উত্তেজিত জনতাকে স্কুল চত্বর থেকে হঠিয়ে দিলেও উত্তেজনা জিইয়ে থাকে। পরে পুলিশ স্কুলের প্রধান শিক্ষক পূর্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করলে স্বাভাবিক হয় স্কুলের পরিস্থিতি ।
প্রধান শিক্ষক শিক্ষক পূর্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি এদিন বলেন,’ঘটনাটা খুবই মর্মান্তিক। কিন্তু এতে আমাদের কিছু করার নেই। ইন্দ্রজিৎকে যে কিছুতে কামড়েছে সেটা আমাকে কেউই বলেনি। আজ পরিকল্পিত ভাবে দলে দলে মানুষজন স্কুলে এসে আমাকে আটকে রাখে। আমার উপর চড়াও হয়। পুলিশ দ্রুত স্কুলে না এলে আমার প্রাণনাশ হতে পারত।“
আরও পড়ুন বানভাসি এলাকায় গিয়ে বিরাট বিপত্তিতে তৃণমূল সাংসদ! অল্পের জন্য রক্ষা মৌসম নূরের
মৃত ছাত্র ইন্দ্রজিৎ মাঝির কাকা বিশ্বজিৎ মাঝি তাঁর অভিযোগে বলেন,’স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি ঘটনার দিন আমার ভাইপোর চিকিৎসার ব্যবস্থা করত, তাহলে তাকে অকালে এভাবে প্রাণ হারাতে হত না। শিক্ষকরা ইন্দ্রজিতের চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা না করেই শুধুমাত্র তার পায়ের ক্ষতস্থানে বরফ ও 'ডেটল' লাগিয়ে দিয়েই দায় সারে। ওইদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ইন্দ্রজিৎ কিছু খেতে পারেনি। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বমি করতে শুরু করে। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও ভাইপোকে বাঁচানো যায়নি।' বুধবার কাটোয়া হাসপাতালে মর্গে ইন্দ্রজিতের দেহের ময়নাতদন্ত হয়।