Advertisment

বউয়ের কবজি কেটে শ্রীঘরে বর, নৃশংস-কাণ্ডে বিস্ফোরক তথ্যে হইচই

ধৃত সরিফুল জেরায় পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, সে তাঁর স্ত্রী রেণুর ডান হাত কেটে নেওয়ার জন্যে মুর্শিদাবাদের দুই দুষ্কৃতীকে কাজে লাগিয়েছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
husband

ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়।

নার্সের সরকারি চাকরি পাওয়ায় নিজের স্ত্রীর ডান হাত কেটে নিয়েছিল। তারপর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল অভিযুক্ত স্বামী শের মহম্মদ ওরফে সরিফুল শেখ। অবশেষে অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হল কেতুগ্রাম থানার পুলিশ। এই আগেই গ্রেফতার করা হয় আক্রান্ত বধূর শ্বশুর-শাশুড়িকে। ধৃতদের নাম সিরাজ শেখ ও মেহেরনিকা বিবি। বাড়ি, পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রামে। কেতুগ্রাম থানার পুলিশ সোমবার রাতে চাকতা বাসস্ট্যান্ড থেকে ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করে।

Advertisment

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেতুগ্রামের চিনিসপুর গ্রামে আক্রান্ত বধু রেনু খাতুনের বাবা আজিজুল হকের বাড়ি। পাঁচ মেয়ের মধ্যে রেনু সবার ছোট। কেতুগ্রামের আনখোনা হাইস্কুলে পড়ার সময়েই স্থানীয় কোজলসা গ্রামের সরিফুলের সঙ্গে রেণুর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিল। বাড়ির লোকজনের অমতেই ২০১৭ সালে প্রেমিক সরিফুলকে বিয়ে করেছিলেন রেণু। ওই বছরেই শেষ হয় রেণুর নার্সিং প্রশিক্ষণ। তার পর তিনি দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরিতে যোগ দেন।

পাশাপাশি নার্সের সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্যেও রেণু চেষ্টা চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরিও পেয়ে যান। দু'চার দিনের মধ্যেই তাঁর ওই চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, বেকার স্বামীর স্ত্রী রেণুর সরকারি চাকরি পাওয়াটাই জীবনে বড় বিপদ ডেকে আনে। সরিফুল ও তাঁর বাবা-মায়ের মনে আশঙ্কা তৈরি হয় যে বাড়ির বউ রেণু সরকারি চাকরিতে যোগ দিলে আর 'বেকার' স্বামীর ঘর করবে না। তাই তারা চাকরি না-করার জন্য রেণুর ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছিল।

কিন্তু রেণু তাঁর স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ির চাপের কাছে নতিস্বীকার করেননি। তাই রেণুর সরকারি চাকরি করা আটকাতে নিষ্ঠুরতার পথই বেছে নেয় তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। শনিবার রাতে রেণু যখন শ্বশুরবাড়ির ঘরে অঘোরে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন তাঁর ডানহাতের কবজিতে ধারাল অস্ত্রের কোপ বসিয়ে দেয় স্বামী সরিফুল। অভিযোগ, এই নৃশংস কাজে সরিফুলকে সঙ্গ দেয় তার বাবা-মা ও দুই বন্ধু।

আক্রান্ত বধূর বাবা আজিজুল হক বলেন, 'সরিফুল আমাদের বলেছিল যে সে মেকানিক্যাল বিভাগে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা করেছে। কিন্তু সে কোনও শংসাপত্র দেখাতে পারেনি। ওই ছেলেকে বিয়ে না-করার জন্য মেয়েকে বহুবার বলেছিলাম। কিন্তু, মেয়ের জেদের কারণে আমরা সরিফুলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। এখন মেয়ে বুঝতে পারছে, যে সে কী ভুল করেছে। আমরা সরিফুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।'

আরও পড়ুন- ‘পিছনের দরজা’ দিয়ে নিয়োগ সমবায় ব্যাঙ্কেও, বিশাল বেনিয়মের চর্চা সর্বত্র

বধূর শ্বশুর সিরাজ শেখ ও শাশুড়ি মেহেরনিকা বিবি মঙ্গলবার আদালত চত্বরে দাবি করেন, যে তাঁরা নির্দোষ। ঘটনার দিন রাতে তাঁরা আলাদা ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা চলছিল। তাই বউমার চিৎকার তাঁদের কানে আসেনি। পুলিশ কর্তারা যদিও ধৃতদের এইসব বক্তব্যকে কোনও গুরুত্ব দিতে চাননি। সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ মঙ্গলবার দুই ধৃতকেই কাটোয়া মহকুমা আদালতে পেশ করে। বিচারক দুই ধৃতকে ৬ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

এরপরই ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ মূল অভিযুক্ত সরিফুল শেখ ও তার দুই বন্ধুর সন্ধানে নামে। রেণু খাতুনের শ্বশুর ও শাশুড়িকে জেরা করে পুলিশ মূল অভিযুক্ত শের মহম্মদ শেখ ওরফে সরিফুল কোথায় আত্মগোপন করে আছে, তা জানতে পারে। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রাতেই মুর্শিদাবাদের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় হানা দিয়ে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ রেণুর স্বামী সরিফুলকে গ্রেফতার করে।

ধৃত সরিফুল জেরায় পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, সে তাঁর স্ত্রী রেণুর ডান হাত কেটে নেওয়ার জন্যে মুর্শিদাবাদের দুই দুষ্কৃতীকে কাজে লাগিয়েছিল। ওই দুই দুষ্কৃতীর খোঁজ পেতে বুধবার ধৃত সরিফুলকে আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফজতে নিতে চাইছে পুলিশ।

Nurse burdwan Husband-Wife
Advertisment