Advertisment

নামেই পঞ্চানন বর্মা সংগ্রহশালা! সংরক্ষিত উপাদান আসলে কার?

"কোটি টাকা ব্যয় করে সংগ্রশালা তৈরি হয়েছে, খুবই ভাল কথা। কিন্তু এই সংগ্রহশালায় ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার নামে যে সব কোট, পোষাক রাখা হয়েছে তা ওনার নয়।"

author-image
Joyprakash Das
New Update
NULL

এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

যাঁর নামে সংগ্রহশালা তাঁর কোনও সংগ্রহ সেখানে নেই! এমন দাবিও যে উঠতে পারে তা কোচবিহারের খলিসামারি গিয়ে টের পাওয়া গেল। প্রবাদপ্রতীম রাজবংশী নেতা পঞ্চানন বর্মার আত্মীয়-স্বজনেরা দাবি করলেন, "গ্রামের কোটি টাকার সংগ্রশালায় ঠাকুর পঞ্চাননের ব্যবহার্য কোনও বস্তুই নেই। সবই অন্য কারও। গবেষণার কোনও কাজও সেখানে হয় না। বরং অন্ধকার ভবনচত্বর ঘিরে ভয় হয়। নির্বাচন এলেই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব এই বাড়ি থেকে মাটি নিয়ে যান।"

Advertisment

২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহারে ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৮টিতেই জয় পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। একটি কেন্দ্রে জয় পেয়েছিল ফরোয়ার্ড ব্লক। তারপর তিস্তা-তোর্ষা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী নিশীথ অধিকারী জয় পায়। ধীরে ধীরে উত্তরবঙ্গের এই জেলায় গেরুয়া শিবির শক্ত মাটি পায়। এবার কোচবিহারে বেশিরভাগ কেন্দ্রেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই বিজেপির। কামতাপুরি সংগঠনগুলো এবারের নির্বাচনে এক জোট হয়ে প্রার্থী দিয়েছে। তবে সব দলেরই এক লক্ষ্য রাজবংশীদের ভোট পাওয়া। তাই ঠাকুর পঞ্চাননকে স্মরণ করতে কেউ ভুল করে না।

মাথাভাঙার খলিসামারি গ্রামে দুই একর জমির ওপর ২০১৮-তে উদ্বোধন হয়েছে পঞ্চানন বর্মা সংগ্রহশালা ও গবেষণাকেন্দ্র। এখানে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৯-এ বাম আমলে। ওই সংগ্রহশালায় গিয়ে দেখা গেল, সেখানে রাখা আছে পোষাক-পরিচ্ছদ, ঠাকুরপুজোর সামগ্রী, বিভিন্ন ধরনের কাঠের কাজের জিনিসপত্র। এই গ্রামেই রয়েছেন পঞ্চানন বর্মার আত্মীয়-স্বজনেরা। সংগ্রহশালা লাগোয়া তাঁর সম্পর্কে নাতি তিমিরবরণ বর্মার বাড়ি। তাঁর আপশোষ, এই সংগ্রহশালায় রাখা কোনও কিছুই পঞ্চানন বর্মার নয়। সংগ্রহশালার ভবনে দাঁড়িয়েই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিমিরবাবু বলেন, "কোটি টাকা ব্যয়  করে সংগ্রশালা তৈরি হয়েছে, খুবই ভাল কথা। কিন্তু এই সংগ্রহশালায় ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার নামে যে সব কোট, পোষাক রাখা হয়েছে তা ওনার নয়। এমনকী কোশাকুশি, থালা, বাটি সহ ঠাকুরপুজোর সামগ্রীও তাঁর ব্যবহার করা নয়। এসব বাজার থেকে কিনে এখানে রাখা হয়েছে। আমাদের অনেকের কাছে তাঁর ব্যবহার করা জিনিস রয়েছে। কিন্তু পদ্ধতি মেনে তা নেওয়া হয়নি।"

publive-image
এক্সপ্রেস ফটো- পার্থ পাল

আরও পড়ুন, Exclusive: “এদেশে এসে সব হারিয়েছি,” জীবন-যন্ত্রনার কাহিনী অধুনা ছিটমহলের বাসিন্দাদের

সংগ্রহে থাকা সামগ্রী দেননি কেন সংগ্রহশালায়? তিমিরবাবুর কথায়, "বাড়ির পাশে বড় পাঁচিল ঘেরা জায়গা এখন আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতে এখানে কেউ ঘাঁটি গেরে থাকলে টের পাওয়া যাবে না। মূল্যবান জিনিস এখানে রাখার পর তা চুরি হলে কে দায়িত্ব নেবে? একজনকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে মাইনে দেওয়া হয় না। আমার মতো গ্রামের অনেকের বাড়িতেই ঠাকুরের সামগ্রী রয়েছে।" নির্বাচন এলেই তো নেতাদের আনাগোনা বেড়ে যায় গ্রামে। কী বলবেন, "সে  তো রয়েছেই। এবারেও অনেকে আমার বাড়ি থেকে মাটি নিয়ে গিয়েছে। আমাদের উন্নয়ন হোক বা না হোক রাজবংশী ভোট তো পেতে হবে।"

১২ জানুয়ারি, ২০১৮-তে খলিসামারির পঞ্চানন বর্মা সংগ্রশালা ও গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বড় ভবন নির্মান হয়েছে। দুটি তোরণ রয়েছে। সংগ্রহশালার সামনের রাস্তার বেহাল দশা। একটা স্ট্রিট লাইট নেই। সন্ধ্যের পর ভিতরও অন্ধকারে ডুবে যায়। এরইমধ্যে কাঠের দরজায় উই পোকাও ধরেছে। ভোট এলেই পঞ্চানন বর্মার স্মরণ নেয় সমস্ত দলের নেতৃত্ব। যদিও পঞ্চানন বর্মার নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে রাজ্য। এখানে রাজবংশীদের খেদ, কেন তাঁর নামের আগে কোচবিহার সংযোজন করা হয়েছে? এটা নামেই সংগ্রশালা, এমন মনে করেন অন্যতন উদ্যোক্তা বছর পয়ষট্টির মধুসূদন রায় সরকার। সংগ্রহশালা নির্মানের কমিটিতে ছিলেন মধুসূদনবাবু। তিনি বলেন, "জমি অধিগ্রহণের সময়ও আমি ছিলাম। দীর্ঘ দিন ধরে রাজংশীদের আন্দলনের সঙ্গেও যুক্ত।" অন্যদের মতো তাঁরও দাবি, "এখানে রাখা সামগ্রীর কোনটাই পঞ্চানন বর্মার নয়।"

north bengal
Advertisment