মৃত্যুর পর নানা বিতর্ক তো চলছিলই তবে বঙ্গ রাজনীতি থেকে রেহাই পেলেন না গায়ক কেকে-ও। গুরুদাস কলেজের ফেস্টে নজরুল মঞ্চে জীবনের শেষ গান গাওয়ার পরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন খ্যাতনামা সঙ্গীত শিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। মুম্বইয়ের এই স্টার গায়ক কেকে নামেই সর্বত্র পরিচিত। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যাই থাকুক না কেন তাঁর মৃত্যুর আগে নজরুল মঞ্চের পরিস্থিতি নিয়ে চিকিৎসক সমাজের একটা বড় অংশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগুলো আকচা-আকচিতে নেমে পড়েছে।
এই বাংলায় 'লাশ' নিয়ে রাজনীতি স্বাভাবিক ঘটনা। রাজ্যবাসী তার প্রত্যক্ষদর্শী। মৃত্যুর পর ভয়ঙ্কর ভাবে বাংলার রাজনীতিতে জড়িয়ে গেলেন কেকে। তাঁকে নিয়ে 'সঙ্গীত রাজনীতি'-তে জড়িয়েছেন বাংলার শিল্পীরাও। প্রেস ক্লাবে গিয়ে নিজের মন্তব্যের জন্য নতমস্তকে ক্ষমা চেয়েছেন সঙ্গীত শিল্পী রূপঙ্কর বাগচি। তা নিয়েও স্পষ্ট মূল স্রোত রাজনীতির ভাগাভাগি। সোশাল মিডিয়ায় চূড়ান্ত ট্রেন্ডিং কেকে। অনুষ্ঠানের দিনের চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন রাজ্যপাল থেকে শুরু করে বিরোধী দলগুলি।
গত মঙ্গলবার গুরুদাস কলেজের ফেস্ট ছিল নজরুল মঞ্চে। দাবি অনুযায়ী নানা পর্যায়ের বিশৃঙ্খলার মধ্যেও ২ ঘন্টা সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন কেকে। এই অনুষ্ঠানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের শীর্ষ নেতৃত্ব হাজির ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর বাঁকুড়া থেকে তড়িঘড়ি ছুটে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন এই মৃত্যু তা নিয়ে তির ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে যায় তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে।
বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেন, 'শিল্পতো আগেই ভাগিয়েছিলেন, KK-র মৃত্যুর পর শিল্পীও ভাগিয়ে দিয়েছেন।' রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, 'ফেসবুক লাইভ চলছিল, প্রোগ্রাম বন্ধ করার কোনও ফোন এসেছিল কী? আগে থেকে বুঝতে পারলে কেউ জানাল না কেন?' তবে এর আগে ভিড় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ফিরহাদও। কেকের মৃত্যু নিয়ে এমন নানা মন্তব্যে তোলপাড় বাংলার রাজনীতি। এখানকার রাজনীতির রঙ্গ মঞ্চে কেকের মৃত্যু যে বড় ইস্যু তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন- KK-র স্ত্রীকে চাকরি-নগদ ৫ লক্ষ দেবেন মমতা! বিস্ফোরক দাবি তসলিমার
মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানের অব্যবস্থা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। বিতর্কে জড়িয়েছেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারও। রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও সরব হয়েছেন। মিস ম্যানেজমেন্ট মৃত্যুর একটা কারণ হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। যথারীতি সাফাই গেয়েছে কলকাতা পুলিশও। কলেজের ফেস্ট নিয়ে কলকাতা পুলিশ একাধিক নির্দেশনামা জারি করেছে।
আরও পড়ুন- ‘শিল্পতো আগেই ভাগিয়েছিলেন, KK-র মৃত্যুর পর শিল্পীও ভাগালেন’, বেনজির আক্রমণ শুভেন্দুর
কেকের মৃত্যু নিয়ে উত্তাল হয়েছে বাংলা। যাঁদের অজানা ছিল তাঁরাও মৃত্যুর পর চিনেছে কেকে-কে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, কেকে ইস্যুতে রাজনীতির সংযোগ ঘটবে না তা আবার হয় নাকি। তবে কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ তথা কেকের মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতরের মাঝে সেদিনের অনুষ্ঠানের তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া আশু প্রয়োজন। সঙ্গীত পরিবেশনের পর kk-র অস্বাভাবিক মৃত্যু একাধিক প্রশ্ন তুলে ধরেছে। একইসঙ্গে বঙ্গ রাজনীতিতে রীতিমতো ইস্যু হয়ে উঠেছে কেকের মৃত্যু।