AC Machine: দাবদাহ হোক কিংবা ভ্যাপসা গরম, রেহাই পেতে এসি-র জুড়ি নেই। বিশেষকরে তীব্র গরমের কালে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি শহর কলকাতাতেও এয়ার কন্ডিশনার বা AC মেশিন কেনার হিড়িক পড়ে যায়। এই মরশুমেও সেই ছবি ধরা পড়েছে। কিন্তু অনেকেই যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই AC মেশিন কিনছেন। একাংশের শহরবাসীর এই প্রবণতাতেই বাড়ছে বিপদ। কলকাতায় পাওয়ার গ্রিডের উপর সাংঘাতিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শহরের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা বাসিন্দাদের আবেদন জানাচ্ছেন, প্রথমে অনুমোদন নিন এবং তারপরে আপনার নতুন এয়ার কন্ডিশনার মেশিনটির ব্যবহার শুরু করুন।
কলকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন (CESC)-এর সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ১ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে কলকাতার প্রাথমিক বিদ্যুৎ সরবরাহকারী নতুন AC সংযোগের জন্য মাত্র ৩৪ হাজার ৮৫০টি আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু কলকাতায় এই সময়ের মধ্যে দেড় লক্ষ নতুন AC মেশিন বিক্রি হয়েছে বলে দাবি সূত্রের। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়াই কলকাতায় ৮০ শতাংশ নতুন AC-র ব্যবহার পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে।
অনুমোদনহীন AC-র ব্যবহার কলকাতার পাওয়ার গ্রিডকে ধ্বংস করে ফেলছে। যার জেরে ঘন ঘন লোডশেডিং-ভোল্টেজ ওঠানামার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সমস্যা সমাধানে একটি জরুরি বৈঠক ডাকতে পারেন বলে সূত্রের খবর।
যদিও CESC মার্চ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ৪০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুতের জন্য ৩৪ হাজার ৮৫০টি আবেদন পেয়েছে। কলকাতায় গত ১০ দিনে রাতে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হয়েছে ১৯২ মেগাওয়াট। যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
আরও পড়ুন- Tricks to Reduce AC Bill: এই বিশেষ মোডে AC রাখলেই কেল্লা-ফতে! হু হু করে কমবে বিদ্যুতের বিল
CESC-এর কর্তা বলেছেন, "এর মানে প্রায় ১৯২ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে। কিন্তু মানুষ যে অতিরিক্ত লোড ঘোষণা করেছে তা হল মাত্র ৪০ মেগাওয়াট। আপনি যদি এমন যন্ত্র কেনার পরিকল্পনা করেন যার জন্য বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন, যেমন এয়ার কন্ডিশনার, তাহলে আগে থেকেই আপনার অনুমোদিত লোড বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত হয়। আমরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করি।"
CESC-এর আরও এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) কলকাতায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ২,৭২৮ মেগাওয়াট। গত বছর সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ২ হাজার ৬০৬ মেগাওয়াট। এটি বিদ্যুতের বর্ধিত চাহিদা নয় যার জেরে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বরং এটি AC ব্যবহারের জন্যই হচ্ছে।"
CESC-এর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গ্রীষ্মকালে লোকজন AC কিনলে তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু অনেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন না নিয়েই AC কিনছেন। তখনই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনুমোদন নিয়ে AC না কিনলে স্থানীয় পাওয়ার গ্রিড ওভারলোডেড হয়ে যেতে পারে। সেটি বিকল হয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
CESC-এর এক্সিকিউটিভ অধিকর্তা অভিজিৎ ঘোষ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “সিইএসসি শহরবাসীকে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহারের আগে যথাযথ অনুমোদন নিতে আহ্বান জানাচ্ছে। অল্প সংখ্যক AC চললে অনুবিধা হয় না। কিন্তু যখন বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ অনুমোদন ছাড়াই সেগুলি ব্যবহার করে, তখন এটি সিস্টেমে একটি বিশাল চাপ তৈরি করে। ওভারলোড খুব বেশি হলে, ক্ষতি রোধ করতে স্মার্ট গ্রিড স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা তাই প্রত্যেকের কাছে AC কেনার আগে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিতে এবং তারপর AC ব্যবহার করার জন্য আবেদন করছি।"
এতো গেল শহর কলকাতার কথা। জেলাগুলিতেও এই একই সমস্যা বেড়েই চলেছে। প্রবল গরমের জেরে জেলায়-জেলায় AC কেনার ধুম পড়ে গিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে বিদ্যুৎ গতিতে বেড়েছে AC-র বিক্রি। এরই সঙ্গে গত কয়েকদিনে একাধিক জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটেরও অভিযোগ সামনে এসেছে। এক্ষেত্রেও সমস্যা একই। নতুন যাঁরা AC কিনছেন তাঁদের অনেকেই সেব্যাপারে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা থেকে অনুমোদন নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন- AC-তে ১ টন, ১.৫ টন, ২ টনের ব্যাপারটা ঠিক কী? না জানলে পস্তাতে হবে!
অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পক্ষে জানাই সম্ভব হচ্ছে না যে নির্দিষ্ট একটি এলাকায় AC মেশিনের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা ঠিক কত পরিমাণে বেড়েছে। তাই প্রায়শই নানা জায়গায় ট্রান্সফর্মার বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটছে। ঘটছে ভয়ঙ্কর বিদ্যুৎ বিভ্রাট। সমস্যা সমাধানে সাধারণ নাগরিকদের সচেতন করতে বিদ্যুৎ দফতরের তরফেও শুরু হয়েছে প্রচার।