বিফ থেকে বিপ, তবু বিপত্তি এড়ানো গেল না। 'হিন্দুত্ববাদী'দের হুমকির মুখে বাতিল হয়ে গেল কলকাতার 'বিফ ফেস্টিভাল'। ২৩ জুন মধ্য কলকাতার সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলে 'কলকাতা বিফ ফেস্টিভ্যালে'র আয়োজন করেছিল দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল নোট নামে একটি সংস্থা। সেই মর্মে সোস্যাল মিডিয়ায় ইভেন্টও তৈরি করা হয়েছিল। গোমাংসে রসনাতৃপ্তির এই আয়োজন নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছিল নেটিজেনদের মধ্যে। কয়েক হাজার মানুষ গোমাংসের বিবিধ পদ আস্বাদন করতে চেয়ে যোগাযোগ করেন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: গেরুয়া উত্থান! বাংলার ৫০০ কলেজে এবিভিপির ইউনিট
কিন্তু এরপরেই আসরে নামেন হিন্দুত্ববাদীদের একাংশ, এমনটাই অভিযোগ দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল নোটের। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, কলকাতার বুকে এই ধরনের আয়োজন হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করছে। তাই অবিলম্বে বিফ ফেস্টিভ্যাল বন্ধ না করা হলে তাঁরা পথে নামতে বাধ্য হবেন। অভিযোগ, উদ্যোক্তাদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। হুমকি ও চাপের মুখে এরপরই উদ্যোক্তারা ইভেন্টটির নাম বদলে 'বিপ ফেস্টিভ্যাল' করে দেন।
আরও পড়ুন: "ওদের বিজয় মিছিল হবে না, আমাদের শান্তি মিছিল হবে"
দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল নোট আরও জানায়, কেবলমাত্র গোমাংস বা বিফ নয়, পর্কের নানাবিধ পদের আয়োজনও থাকবে সেদিন। প্রাথমিক ভাবে এতে কাজ হয়। হুমকির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে। কিন্তু তাও শেষরক্ষা হলো না। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার থেকে ফের নতুন করে উদ্যোক্তাদের উপর চাপ তৈরি করতে থাকেন হিন্দুত্ববাদীদের একাংশ। তাঁরা দাবি করেন, নাম পরিবর্তন হলেও বিষয়টিতে কোনও বদল হচ্ছে না। গোমাংস নিয়ে প্রকাশ্যে এই ধরনের মাতামাতি হিন্দুধর্মের প্রতি অপমান। এর প্রেক্ষিতে কোনও ধরনের সমস্যা তৈরি হলে তার জন্য দায়ি থাকবেন উদ্যোক্তারাই। দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল নোটের অন্যতম কর্তা অর্জুন করের অভিযোগ, বিফ ফেস্টিভ্যাল বাতিল করা না হলে তাঁদের সপরিবারে খুন করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। এরপর শুক্রবার তাঁরা উৎসবটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন।
অর্জুন এদিন বলেন, "আমরা উৎসবটি করছি না। আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছি। কলকাতার বাসিন্দাদের নতুন ধরনের কিছু খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেজন্য এই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে, ভাবি নি।"
আরও পড়ুন: মোদীকে জেতানো প্রশান্ত কিশোর এবার তৃণমূলের?
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) পূর্ব ভারতের সাংগঠনিক সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিং বলেন, "গোমাংস কেউ ব্যক্তিগতভাবে খেতেই পারেন। কিন্তু তা নিয়ে উৎসবের উদ্যোগ অত্যন্ত নিন্দনীয়। বন্ধ হওয়াই উচিত। তবে উদ্যোক্তাদের প্রাণনাশের হুমকি না দেওয়াই উচিত ছিল। সহিষ্ণুতার সঙ্গে বোঝানো প্রয়োজন।" সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্য-সহ দেশ জুড়ে বিজেপির ব্যাপক সাফল্যের পর কলকাতার এই ঘটনা নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত তাৎপর্যবাহী বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।