Advertisment

ডেঙ্গুর ঝোড়ো ইনিংসে ত্রস্ত বাংলা, চরিত্র বদলেই কী বাড়ছে মৃতের সংখ্যা? জানুন বিশেষজ্ঞের মতামত

করোনা কিছুটা টেস্ট ম্যাচের স্টাইলে ব্যাটিং করতেই টি-২০ ধাঁচে ঝোড়ো ইনিংস হাঁকাচ্ছে ডেঙ্গু।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Dengue, kolkata, Dengue fever,Dengue patients uptick,experts opinion,Dengue,Westbengal,ডেঙ্গু কাঁটায় ত্রস্ত বাংলা, bengali news

গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ থেকে ৪ গুন বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা।

উৎসব মিটতেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। উৎসব আবহে করোনা কিছুটা কমতেই ভয় ধরাচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। ফি বছর রাজ্যে বর্ষার শেষে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া-সহ বিভিন্ন পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এবারেও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি। বর্ষার শেষে শহর এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যা। কপালে চিন্তার ভাঁজ প্রশাসনের।

Advertisment

কলকাতা পুরসভার একাধিক বোরোতে মিলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু কলকাতা নয়, একাধিক জেলাতেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে ডেঙ্গু মাথা চাড়া দিয়েছে। মালদা, কোচবিহারের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত কলকাতাতেই তিন হাজার ছাড়িয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। গোটা রাজ্যে এই সংখ্যা ইতিমধ্যেই ছাড়িয়েছে ২৫ হাজার। ২০১৯ সালের ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে পিছনে ফেলে এই বছর ঝোড়ো ইনিংস ডেঙ্গুর। জেলায় জেলায় ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। ডেঙ্গু ক্রমশ ভয়ঙ্কর রূপ নিতে চলেছে বাংলায়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে চলতি বছরের যা পরিসংখ্যান তা বিগত বছরের সব হিসেব-নিকেশকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে পারে। শুক্রবারই ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর এক ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন করে। সেখান থেকে যেটা উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে কম বয়সিদের মধ্যেই ডেঙ্গুর প্রকোপ চলতি বছরে সর্বাধিক। কিন্তু কেন এই প্রবণতা?

চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে প্রধানত DEN 3 স্ট্রেনকেই দুষছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, “শেষ এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি জেলার নির্দিষ্ট কতগুলি পুর এলাকায় লাফিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা”। DEN 3 স্ট্রেনের দাপটেই ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত, পুজোর আগে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা! চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে প্রধানত DEN 3 স্ট্রেনকেই দুষছেন চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুন: < অধরা হিজাব নির্দেশ, বিচারপতিদের ভিন্নমত, সুপ্রিম কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে গেল মামলা >

তথ্য বলছে গত ৫ বছরে এটাই সর্বোচ্চ। কলকাতার পাশাপাশি জেলাগুলিতেও লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যুর খবরও মিলেছে। সব মিলিয়ে পুজোর আগে করোনার দাপট কিছুটা কমতেই ডেঙ্গুর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের দাপটে কপালে ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের।

শুধু কলকাতা নয় জেলায় জেলায় চওড়া হচ্ছে ডেঙ্গুর থাবা। উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির একাধিক পুর এলাকাতে মিলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সন্ধান। চিকিৎসক সমাজের মতে কেবল পুরসভা উদ্যোগ নিলেই চলবে না। ডেঙ্গু রোধে নিজেদেরও সচেতন থাকতে হবে। করোনা কিছুটা টেস্ট ম্যাচের স্টাইলে ব্যাটিং করতেই টি-২০ ধাঁচে ঝোড়ো ইনিংস হাঁকাচ্ছে ডেঙ্গু। তবে চলতি বছরের ডেঙ্গুর এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে আবহাওয়ার খাম-খেয়ালিকেই দায়ি করছেন চিকিৎসকরা। উত্তরপাড়ার বিখ্যাত চিকিৎসক ঐশ্বর্য্যদ্বীপ ঘোষ বলেন, গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ থেকে ৪ গুন বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা।

আরও পড়ুন: < মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার, উদ্বোধনের এক মাসের মধ্যেই বন্ধ খানায় ভরা মেরিন ড্রাইভ >

একাধিক জেলায় এই জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যাটা হু হু করে বেড়েছে। কতটা নিরাপদ আপনার সন্তান? কী বলছেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাক্তার ইন্দ্রনীল চৌধুরী। তাঁর কথায়, “অনেকেই প্রচুর ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে আসছেন। গাঁটে ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা এবং গায়ে র‍্যাশ বেরোতে দেখা যাচ্ছে। হাতের পিছনে গুটি দাগও দেখা দিচ্ছে শিশুদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা এক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তবে দুর্বলতাটা বেশ কিছুদিন থেকে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বর্ষাকালের শেষ থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এই সময়, চিকিৎসকদের কাছে বিভিন্ন ধরনের জ্বর নিয়ে রোগীর আসছেন। তার মধ্যে অনেকেই মশা বাহিত রোগে আক্রান্ত। যার মধ্যে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছেন”।

অপরদিকে বিশিষ্ট চিকিৎসক ঐশ্বর্যদ্বীপ ঘোষ জানিয়েছেন, “ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে ভয় পাবেন না। এখন জ্বর হলে, প্রথমে এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে। পরবর্তী সময় অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে হবে। আর প্লেটলেটের পরীক্ষা ভাল ল্যাব থেকে করতে হবে। না হলে ফলাফলে বিভ্রান্তি হতে পারে। তাঁর মতে, ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে দ্রুত চিহ্নিত হলে ওষুধ আছে। কিন্তু, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ এখনও নেই। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করেই, ডেঙ্গু রোগীকে সুস্থ করা হয়”। তাঁর কথায়, জ্বর হলেই আগে রক্ত পরীক্ষা করান, এই রোগকে কোন ভাবেই ফেলে রাখবেন না, দেরিতে চিকিৎসা শুরু হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে শুরু করেছে সেক্ষেত্রে সবটাই হাতের বাইরে চলে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা যায়”।

আরও পড়ুন: < কুঁদঘাটে প্রযোজনা সংস্থার গুদামে বিধ্বংসী আগুন, অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা >

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু জ্বর ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপের কারণে হতে পারে, যেগুলিকে ডেন ১, ডেন ২, ডেন ৩ এবং ডেন ৪ নামে চিহ্নিত করা যায়। ডেন ৩ হল সবচেয়ে সাধারণ স্ট্রেন৷ ICMR-NICED এর  প্রধান শান্তা দত্ত বলেন, “আমরা এপ্রিল মাস থেকে ডেঙ্গুর নমূনা পরীক্ষার কাজ করছি, পরীক্ষা করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যে স্ট্রেনের সন্ধান পেয়েছি তা হল DEN 3, তারপর DEN 2 এবং DEN1″

চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুঁইয়ের কথায়, “ফি বছর ডেঙ্গু- ম্যালেরিয়ার মতো পতঙ্গবাহিত রোগের লক্ষণ এই সময় অর্থাৎ বর্ষার শেষের দিকে দেখা যায়, এবারের বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। লোকেরা জ্বর হলেই ভেবে নিচ্ছেন সাধারণ জ্বর অথবা করোনা হয়েছে। এই প্রবণতা থেকেও অনেক সময় ডেঙ্গুর প্রভাব বেড়ে চলেছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে কিছু বোঝার আগেই মানুষজন টেস্ট না করেই মুড়ি-মুড়কির মত প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট খেয়ে নিচ্ছেন। সাত দিন পরে জ্বর না কমলে তখন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছেন ফলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেমন যাচ্ছে তেমনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। ডেঙ্গু ও করোনার চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা সেই দিকটাই সাধারণ মানুষকে বুঝতে হবে। সবশেষে তিনি সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দিয়েছেন”।

স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন ডিরেক্টর, অমিতা হাটি বলেন,  “গবেষণায় দেখা গেছে যে ডেঙ্গুর অন্যান্য স্ট্রেইনের তুলনায় DEN 2 বেশি প্রাণঘাতী। কিন্তু DEN 3 সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাই, পর্যাপ্ত সেরোটাইপিংয়ের পাশাপাশি, এই স্ট্রেনের মধ্যে কোনটি বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে তাও আমাদের  বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে”।

kolkata news Dengue
Advertisment