গার্ডেনরিচে ব্যবসায়ীর বাড়িতে টাকার পাহাড় উদ্ধার নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক চর্চা। বিপুল পরিমাণ এই টাকা উদ্ধারের পিছনে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের যোগ টানছে বিরোধীরা। পাল্টা সরব শাসকদলও। 'বাংলার অর্থনীতিকে ভাঙার চক্রান্ত বিজেপির', সরব ফিরহাদ হাকিম। 'কালো টাকার সঙ্গে কী ওঁর যোগ রয়েছে', কলকাতার মেয়রকে তুলোধনা বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার। বিপুল পরিমাণ এই টাকার উৎস নিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে দুষে সরব সুজন, অধীররাও।
ফের এক দফায় টাকার পাহাড়ের খোঁজ খাস কলকাতায়। শনিবার সকালে গার্ডেনরিচে ব্যবসায়ী নিসার খানের বাড়িতে হানা দিয়ে এখনও পর্যন্ত ৮ কোটিরও বেশি টাকা উদ্ধার ইডি-র। সেই টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে কোটি-কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে। প্রতারণার সেই টাকাই ব্যবসায়ী নিসার খানের বাড়িতে মজুত ছিল বলে দাবি ইডির। কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরে ব্যবসায়ী নিসার খানের পুত্র আমির খানও। দু'জনকেই দফায়-দফায় জিজ্ঞাসাবাদ ইডির।
যদিও ইডির এই অভিযানের পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ এনেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বাংলরা অর্থনীতিকে ভেঙে দিতেই ইডির এই অভিযান বলে সরব তৃণমূল নেতা। তিনি বলেন, ''ইডি রেড-ইডি রেড করে বিজেপি একটা বার্তা দিতে চাইছে, যে বাংলায় ব্যবসা করো না। ব্যবসা করতে গেলে আমাদের রাজ্যে চলে এসো। এখানে থাকলে ব্যবসায়ীদের আক্রান্ত করবে। বাংলার অর্থনীতিকে ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা। এর আগেও কয়েকটি আয়কর দফতরের রেড হল। সেখানে কিছু পেল না। যে অন্যায় করেছে ঠিক আছে। কিন্তু এই যে রেড-রেড-রেড, এটা করে আতঙ্ক তৈরি করছে। বাংলার অর্থনীতিকে নষ্ট করার চক্রান্ত।''
গার্ডেনরিচে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধারের পিছনে তৃণমূলের নেতাদের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীর। এমনকী ব্যবাসায়ী নিসার খানের সঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমেরই যোগ থাকার আশঙ্কা সুজনের।
আরও পড়ুন- ‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ছক CID-র’, বিস্ফোরক অভিযোগ সামনে আনলেন শুভেন্দু
টাকা উদ্ধার প্রসঙ্গে রাজ্যের শাসকদলকে তুলোধনা করে এদিন সুজন বলেন, ''বাংলায় হাত দিলেই কয়েক কোটি। পশ্চিমবাংলায় লুঠেরার রাজত্ব। সৌজন্যে মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের সরকার। কোটির কমে গল্প নেই। মাদক ব্যবসায়ী কয়েক কোটি। অনুব্রত কোটি-কোটি। পার্থ বাবু ও তাঁর বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে আপাতত একজনের বাড়ি থেকেই ৫০ কোটি। এই নিসার খান নাকি প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। পশ্চিমবাংলাকটাকে পচিয়ে দিল। যত বড় নেতা তত বড় চোর। যত বড় নেতা তত বড় অপরাধী, তৃণমূলে এটাই বাস্তব।'' প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, ''পশ্চিমবঙ্গে টাকার অভাব নেই। তৃণমূল নেতাদের ঘরে ঢুকলেই টাকা।''
আরও পড়ুন- বামেদের সভায় বিরাট ভিড়, পুলিশও কড়া, কিন্তু লাভের গুড় কে খাবে?
গার্ডেনরিচে ব্যবসায়ীর বাড়িতে টাকা উদ্ধারের পিছনে বাংলার অর্থনীতিকে ভাঙার চক্রান্ত রয়েছে বলে মনে করেন ফিরহাদ হাকিম। সেপ্রসঙ্গে পাল্টা তাঁকেই একহাত নিয়েছেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। ফিরহাদকে দুষে তাঁর পাল্টা তোপ, ''বাংলার কোনও অর্থনীতি আছে নাকি। আপনারা ক্ষমতায় আসার পর বাংলার অর্থনীতি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন। বাংলাকে দেউলিয়া করে দিয়েছেন। এত ফিরহাদের গায়ে লাগছে কেন? অর্থনীতি ভাঙার এত প্রশ্ন আসছে কেন? কালো টাকার সঙ্গে কি ওঁর বা ওঁর দলের কোনও সংযোগ আছে? সেটা নিয়েই তো প্রশ্ন উঠছে। কালো টাকার পক্ষে ফিরহাদ? সেই প্রশ্নের জবাব আগে দিন।''